Advertisement
E-Paper

আধুনিক গ্ল্যাডিয়েটর আর কান্না শয়তানের

এ কোন জায়গা? টাইম মেশিন কি তবে নিয়ে এসে ফেলল কোনও রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারে? সামনে ও কাদের দেখছি? ওই যোদ্ধারা কি ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা সত্যিই কোনও গ্ল্যাডিয়েটর?

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০৫:৩৬
ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

দ্রিম দ্রিম দ্রিম। তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বাজনাটা আছড়ে পড়ছে শরীরের স্নায়ুতরঙ্গে। সামনে একটা খাঁচার মধ্যে মরণপণ যুদ্ধে নেমে পড়েছেন দুই যোদ্ধা। মুখ দিয়ে, শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে, কিন্তু কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। বৃত্তাকারে বসে থাকা দর্শকদের ভিতর থেকে হুঙ্কারের পর হুঙ্কার উঠছে— ‘‘শেষ করে দাও ওকে! ফিনিশ হিম, ফিনিশ হিম।’’

এ কোন জায়গা? টাইম মেশিন কি তবে নিয়ে এসে ফেলল কোনও রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারে? সামনে ও কাদের দেখছি? ওই যোদ্ধারা কি ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা সত্যিই কোনও গ্ল্যাডিয়েটর? টাইম মেশিন কাউকে রোমান সাম্রাজ্যে নিয়ে যায়নি ঠিকই, কিন্তু খাঁচার সামনে বসে ওই রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখতে দেখতে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে উঠলে ভুল কিছু হবে না। সেই সময় ছিল অ্যাম্ফিথিয়েটার, আজ অক্টাগন। সে সময় গ্ল্যাডিয়েটরদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লড়তে হত নিজেদের অনিচ্ছায়। আধুনিক গ্ল্যাডিয়েটররা নিজেরাই বেছে নিয়েছেন এই যোদ্ধার জীবন। রিং বা সামনের ওই খাঁচাটার মধ্যে তাঁরা যেমন নামেন প্রতিপক্ষকে রক্তাক্ত করতে, তেমন নিজেরাও রক্তাক্ত হতে। নিজের হোক বা প্রতিপক্ষের, রক্তই যেন তাতিয়ে তোলে তাঁদের। না-হলে কেন সিঙ্গাপুর ফাইট নাইটের সেরা আকর্ষণ ডোনাল্ড সেরন কাউবয় বলবেন, ‘‘আমার কপাল থেকে যখন রক্ত ঝরছিল, শরীরটা গরম হয়ে উঠছিল। মনে হচ্ছিল, এই তো জেগে উঠেছি এত ক্ষণে। এ বার সামনের লোকটাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আমি কে।’’ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাইটার ‘কাউবয়’ লড়াই শুরু হওয়া মাত্র রক্তাক্ত হন প্রতিপক্ষ লিয়ন এডোয়ার্ডসের একটা লাথিতে। লড়াইটা জিততেও পারেননি তিনি। কিন্তু তাতে কী? একটা কথায় তো বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন শনিবার রাতের মেজাজটা।

শনিবারের রাত দেখিয়ে দিয়ে গেল, এ শুধুই পুরুষকারের জয়জয়কার নয়। অক্টাগন তুলে ধরেছে নারীশক্তির লড়াইয়েরও একই দৃশ্য। সেখানেও সমান রক্তপাত। দুই জেসিকার লড়াইয়ে বারবার ধরা পড়ছিল সেই ছবিটা। এক জন জেসিকা আই, অন্য জন জেসিকা রোজ। ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমি লড়াই করেছি, পালিয়ে যাইনি কোনও দিন’’— আগের দিনই বলেছিলেন জেসিকা আই। যিনি নিজেই নিজের নাম দিয়েছেন ‘শয়তান’। দেখা গেল, সত্যিই তিনি পালিয়ে যেতে শেখেননি। ওই অক্টাগনে নেমে শরীরী থেকে যেন অশরীরীতে বদলে গিয়েছিলেন জেসিকা। একের পর এক জ্যাব, আপার কাট, কিডনি পাঞ্চ তাঁর শরীরে আছড়ে পড়লেও কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। বিপক্ষের ‘সাইড কিক’ কখনও ব্লক করেছেন হাত দিয়ে, কখনও মাথায় নিয়েছেন। কিন্তু পালাননি। পাঁচ মিনিট করে তিন রাউন্ডের লড়াইয়ের শেষ বেলায় আর এক জেসিকাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে অজগরের নিষ্পেষণে ম্যাচের ফল ঘুরিয়ে দিয়েছেন নিজের দিকে।

রেফারি যখন তাঁর হাতটা মাথার উপরে তুলে ধরছেন, কেঁদে ফেললেন হাউ হাউ করে। ‘‘আমি আবার ফিরে এসেছি। আবার বুঝিয়ে দিলাম, আমি কী করতে পারি,’’ বলতে থাকেন তিনি।

আপনাদের স্বাগত ইউএফসি-র দুনিয়ায়। আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের জগতে। মিক্সড মার্শাল আর্টসের মক্কায়।

শুধু একটা বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। কোমল হৃদয়ের জন্য নয়।

UFC Fights Mixed Martial Arts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy