E-Paper

অটোচালক বাবার লড়াই সেরা প্রেরণা লাল-হলুদের নায়কের

নন্দর জীবন বদলে যায় ২০১৭ সালে হিন্দুস্তান ইগলস থেকে চেন্নাই সিটি এফসিতে যোগ দেওয়ার পরে। সেই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি লাজ়ং এফসি-র বিরুদ্ধে অভিষেক হলেও ফুটবলপ্রেমীরা তাঁকে চিনলেন আরও মাসখানেক পরে।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫১
An image of the East Bengal footballers

হুঙ্কার: লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে নন্দকুমারদের উৎসব। ছবি: ইস্টবেঙ্গল টুইটার।

ভোর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচণ্ড গরমে চেন্নাইয়ের রাস্তায় অটো চালাতে চালাতে সেকার স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছোট্ট ছেলেটা এক দিন লেখাপড়া শিখে বড় হবে, সংসারের অভাব দূর করবে। তাঁকে আর উদয়াস্ত অটো নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে হবে না। অতি কষ্টে ছেলেকে ভর্তিও করে দিয়েছিলেন একটি স্কুলে। কিন্তু ছেলের যে লেখাপড়ায় আগ্রহ নেই। তার মন জুড়ে শুধুই ফুটবল।

একরত্তি ছেলের জেদের কাছে ভাগ্যিস সে দিন হার মেনেছিলেন সেকার, তা না হলে ভারতীয় ফুটবলে তো উদয়-ই হত না নন্দ কুমার নামের এক নক্ষত্রের। ঐতিহ্যের ডার্বিও পেত না নতুন নায়ককে। চেন্নাইয়ে নন্দরা যেখানে থাকেন, সেখানেই ছোটদের ফুটবল শেখাতেন উমাপতি। নিজেই চলে যান তাঁর কাছে। অল্প দিনের মধ্যেই চোখে পড়ে যান হিন্দুস্তান ইগলস ক্লাবের। বিস্ময় গোলে চার বছর সাত মাস পরে ইস্টবেঙ্গলকে ডার্বি জেতানো নায়ক আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘উমাপতি স্যর প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘যদি আনন্দ না পাও, তা হলে ফুটবল খেলো না।’ মন্ত্রের মতো সেই কথা এখনও মেনে চলি।’’

শৈশবে কতটা কঠিন ছিল ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা? নন্দ বললেন, ‘‘বাবা অটো চালাতেন। চাইতেন লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হব। কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়া। বাবা আমার ইচ্ছেই মেনে নিয়েছিলেন। সংসারের অভাব সত্ত্বেও কখনও বাধা দেননি। সময় পেলেই খেলা দেখতে চলে আসতেন, উৎসাহ দিতেন। বাবার এই লড়াইটাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করে।’’ এর পরেই বললেন, ‘‘এখন বাবাকে অটো চালাতে দিই না। সারাজীবন পরিশ্রম করেছেন। বিশ্রাম নিতে বলেছি।’’

নন্দর জীবন বদলে যায় ২০১৭ সালে হিন্দুস্তান ইগলস থেকে চেন্নাই সিটি এফসিতে যোগ দেওয়ার পরে। সেই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি লাজ়ং এফসি-র বিরুদ্ধে অভিষেক হলেও ফুটবলপ্রেমীরা তাঁকে চিনলেন আরও মাসখানেক পরে। ১৭ মার্চ আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই পেশাদার ফুটবলার হিসেবে প্রথম গোল করেছিলেন। কাকতালীয় ভাবে তিনি-ই শনিবার গোল করে ডার্বিতে শাপমুক্ত করলেন লাল-হলুদকে। ২৭ বছরের উইঙ্গার বললেন, ‘‘সমর্থকদের নিশ্চয়ই এখন আর আমার উপরে কোনও ক্ষোভ নেই।’’

শনিবার ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই গ্যালারির ফেন্সিং টপকে মাঠে নেমে সমর্থকদের অনেকে তাঁর পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কেউ তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। অভিভূত নন্দ বললেন, ‘‘ওঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারাই সেরা প্রাপ্তি। টানা আট ডার্বিতে প্রিয় দল হারায় যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত ছিলেন সমর্থকরা। এত দিন পরে প্রাণ খুলে আনন্দ করছেন।’’

মরসুমের প্রথম ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলকে উপেক্ষা করাই কি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল? নন্দ বললেন, ‘‘কোচ বলেছিলেন, বাইরের মন্তব্য নিয়ে ভাববে না। প্রতিক্রিয়া জানাবে না। মাঠে নেমে নিজেদের প্রমাণ করেই সব কিছুর জবাব দাও। কোচের আস্থার মর্যাদা রেখে তৃপ্ত। জয়টা জরুরি ছিল।’’

তবে নন্দ এ-ও মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘উচ্ছ্বাসে ভাসলে চলবে না। ১৬ অগস্ট পঞ্জাব এফসিকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের শেষ আটে যোগ্যতা অর্জন করাই পাখির চোখ আমাদের।’’ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে কী বলেছিলেন কুয়াদ্রাত? জবাব, ‘‘উনি বলেছিলেন, ‘‘ভুল করা চলবে না। ওদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দিয়ো না। সামান্যতম সুযোগেরও সদ্ব্যবহার করতে হবে।’’

বিশ্বমানের গোলের রহস্য কী? নন্দ বলে চললেন, ‘‘আমি মূলত ডান পায়ের ফুটবলার। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে কোচ বাঁ পায়ে শট মারার অনুশীলন করিয়েছেন। যখন বল নিয়ে ওদের বক্সে ঢুকলাম, সামনে চলে আসে অনিরুদ্ধ থাপা। ওই জায়গা থেকে ডান পায়ে শট নিলে গোল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। চকিতে দেখে নিই দ্বিতীয় পোস্ট ফাঁকা রয়েছে। মাথা ঠান্ডা রেখে বাঁ পায়ে বলটা গোলে রেখেছিলাম।’’ গোল কি বাবা দেখেছেন? নন্দ বললেন, ‘‘ম্যাচের পরেই ফোন করেছিলাম। খুব খুশি।’’

উইঙ্গার হলেও গোল খুব ভাল চেনেন বলেই ২০১৭ সালে চেন্নাই সিটি এফসি থেকে তাঁকে লোনে নিয়েছিল দিল্লি ডায়নামোজ় এফসি (বর্তমানে ওড়িশা এফসি)। গত মরসুমে ২০ ম্যাচে ছয় গোল করেন। ডাক পান জাতীয় দলেও। আন্তঃমহাদেশীয় কাপ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী ভারতীয় দলেও ছিলেন। ওড়িশা থেকে তাঁকে নিয়ে যে ভুল করেননি কুয়াদ্রাত, তা প্রমাণ করলেন নন্দ।

উৎসবের আবহে রবিবার এলেন নতুন স্পেনীয় ডিফেন্ডার হোসে আন্তোনিয়ো লুকাস। আজ, সোমবার কলকাতা লিগে পুলিশ এসির বিরুদ্ধে ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের।

আজ কলকাতা লিগে: ইস্টবেঙ্গল বনাম পুলিশ এসি (বিকেল ৩.০০)।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

East Bengal Derby

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy