পর পর দু’বছর আইএসএলের লিগ-শিল্ড জিতেছে মোহনবাগান। পরের বার ট্রফি ধরে রেখে তারা কি হ্যাটট্রিক করতে পারবে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কারণ পরের বছর আইএসএল আয়োজিত হবে কি না তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। আয়োজক ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল) এবং সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার (এআইএফএফ) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে আইএসএল আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
কেন চুক্তি সই হয়নি?
২০১০ সালে এফএসডিএল এবং ফেডারেশনের মধ্যে ১৫ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল ‘মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট’ (এমআরএ)। সেই চুক্তি অনুযায়ী আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল, যা রিলায়্যান্স এবং স্টারের যৌথ সংস্থা। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। তার আগে এপ্রিলের মধ্যে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা হয়নি। ফেডারেশনের নতুন সংবিধান নিয়ে নিজেদের রায় এখনও জানায়নি শীর্ষ আদালত। যত দিন না রায় হবে, তত দিন এমআরএ সই করা যাবে না, এমন নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফে। তাতেই ঝুলে রয়েছে আইএসএলের ভবিষ্যৎ।
গত সপ্তাহে এফএসডিএলের কর্তারা আইএসএলের বিভিন্ন ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই তাঁরা বুঝিয়ে দেন, চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে আইএসএল আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে কিছু কিছু ক্লাব নিজেদের কাজকর্মের গতি কমিয়ে দিয়েছে। নতুন যে সব ফুটবলার সই করানোর কথা ছিল তা-ও আপাতত স্থগিত। পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে প্রাক্-মরসুম প্রস্তুতিও। সে ক্ষেত্রে ডুরান্ড কাপের সূচিও ঘেঁটে যাবে। শোনা যাচ্ছে, দু’টি ক্লাব নাকি ইতিমধ্যেই ডুরান্ডের আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিযোগিতায় তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছে।
এফএসডিএল কী চাইছে?
ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনও ইচ্ছা নেই এফএসডিএলের। তারা ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি চায়। তবে ফেডারেশনের সঙ্গে আগে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে কিছু বদল চাওয়া হয়েছে। আগের চুক্তি অনুযায়ী এফএসডিএলের থেকে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা বা আয়ের ২০ শতাংশ (যেটা বেশি) পেয়েছে ফেডারেশন। এ বার এফএসডিএল চাইছে নতুন একটি হোল্ডিং কোম্পানি তৈরি করতে। সেই কোম্পানিই আইএসএল চালাবে। ওই কোম্পানিতে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলির ৬০ শতাংশ, এফএসডিএলের ২৬ শতাংশ এবং ফেডারেশনের ১৪ শতাংশ শেয়ার থাকবে। চুক্তি সইয়ের জন্য গত এপ্রিলে ফেডারেশন আট সদস্যের একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিল। তবে অনেক সদস্যই তাতে খুশি হতে পারেননি। বাইচুং ভুটিয়ার মতো কেউ কেউ প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দেয়, ১৪ জুলাই শীর্ষ আদালত খোলার পর সংবিধান নিয়ে চূড়ান্ত রায় হবে। তার পরেই চুক্তি নিয়ে এগোতে পারবে ফেডারেশন।
ফেডারেশন কী চাইছে?
সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দেওয়া খসড়া সংবিধানে ফেডারেশন জানিয়েছে, দেশের এক নম্বর লিগ পরিচালনা করবে তারাই। আরও বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে পুরনো লিগের মালিকানা, পরিচালনা এবং দায়িত্বভার থাকবে ফেডারেশনের হাতেই। অন্য কোনও সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে না। প্রসঙ্গত, আইএসএলের মালিক এবং পরিচালক এফএসডিএল হলেও আই লিগ-সহ দেশের বিভিন্ন লিগ চালায় ফেডারেশনই। যদি ফেডারেশন আইএসএলও পরিচালনা করতে চায়, তা হলে বেঁকে বসতে পারে এফএসডিএল। তারা অর্থ না-ও দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফেডারেশনকেই স্পনসর জোগাড় করা থেকে বাকি সব কাজ করতে হবে। এক ক্লাবের কর্তা বলেছেন, “সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে। সংবিধান চূড়ান্ত হলে দেখতে হবে কোন লিগ সবার উপরে। তা ছাড়া, কয়েক মাস পর ফেডারেশনে নির্বাচন হতে পারে। অনেক কিছু বদলাতে পারে। ক্লাব হিসাবে সব বদলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত এক বছর সময় দিতে হবে।”
আরও পড়ুন:
নেপথ্যে কি চাপের খেলা?
শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশনকে চাপে রাখার জন্যই ‘আইএসএল অনিশ্চিত’ বলে একটা ধুয়ো তুলতে চাইছে এফএসডিএল। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আইএসএল যদি না-ই হবে, তা হলে ফেডারেশন তাদের ক্যালেন্ডারে ওই সময়টা ফাঁকা রাখল কেন? কেনই বা আইএসএলের দলগুলির চাহিদা মেনে সুপার কাপ সকলের শেষে রাখা হয়েছে? কেনই বা আইএসএলের বিভিন্ন দল আগামী মরসুমের জন্য ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে? আইএসএল না হওয়া নিয়ে এফএসডিএলের তরফে যদি বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত থাকত তা হলে ক্লাবগুলো লাখ-লাখ টাকা খরচ করে নতুন ফুটবলার নিত না। জানা গেল, আইএসএলে অতীতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া একটি ক্লাব এই অনিশ্চয়তা নিয়ে একেবারেই চাপে নেই। তাদের ধারণা, আইএসএল হবেই। সেই কারণে তারা ফুটবলার সই করানো থেকেও বিরত নেই। তাদের বক্তব্য, আইএসএল আয়োজনের দিন হয়তো পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রতিযোগিতা হবেই।
আপাতত এটুকুই আশা ফুটবলপ্রেমীদের।