ভারতীয় ফুটবলের হার-না-মানা এক বেপরোয়া যোদ্ধার পথচলা শেষ হল! শনিবার সকালে ভোম্বলদার(সুভাষ ভৌমিক) মৃত্যুর খবর শোনার পরে এই উপলব্ধিটাই হয়েছিল।
ভোম্বলদার উপস্থিতি দলের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দিত সব সময়। শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আমরা হয়তো সকলে কিছুটা গুটিয়ে রয়েছি আতঙ্কে। ব্যতিক্রম ভোম্বলদা। প্রতিপক্ষকে ভয় বা সমীহ করার ব্যাপারটাই ছিল না ওর মধ্যে। আমাদের থমথমে মুখে বসে থাকতে দেখলেই বলত, ‘‘মাঠে চল। বিপক্ষকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তোরা শুধু রক্ষণ সামলা। বাকিটা আমার উপরে ছেড়ে দে।’’ এমনকি, কোনও ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরেও ভোম্বলদার মধ্যে পরিবর্তন দেখিনি। বলত, ‘‘একটা ম্যাচে হেরেছি তো কী হয়েছে? পরের খেলায় আমাদের জিততেই হবে। মন খারাপ করে তোরা বসে থাকিস না।’’ কলকাতার বাইরে খেলতে গেলে টিম হোটেলে আমাদের ঘরে চলে আসত উজ্জীবিত করার জন্য। মুখে একটাই কথা লেগে থাকত, ‘‘কাউকে ভয় পাবি না।’’
ভোম্বলদার এই দুঃসাহসিকতা, ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিক দৃঢ়তা, উচ্ছ্বাসে ভেসে না গিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল অবিশ্বাস্য। ও দলে থাকলে আমরা অনেক নিশ্চিন্ত মনে খেলতে পারতাম। আমরা যখনই এক দলে খেলেছি, ভোম্বলদা ম্যাচ শুরু হওয়ার সময় বলত, ‘‘বাবলু তুই ওদের দুই স্টপারের মাঝখানে বলটা শুধু ঠিকঠাক রাখ। বাকিটা আমি দেখে নেব। তোকে কিছু চিন্তা করতে হবে না।’’ সত্যিই ম্যাচে সেটাই হত। আমি ভোম্বলদার নির্দেশ অনুযায়ী বল দিতাম, ও তা ধরে সেন্টার করত। ওর পাস থেকে মহম্মদ হাবিব এবং আকবর যে কত গোল করেছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। এই কারণেই ভোম্বলদা বিপক্ষ দলে থাকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। শারীরিক ভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী ছিল। কাঁধে করে বিপক্ষের দু’-তিন জনকে টেনে নিয়ে চলে যাওযার ক্ষমতা ছিল। বলের উপরেও দুর্ধর্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। এ ছাড়া প্রচণ্ড জোরালো শট তো ছিলই। আমরা তো মাঠে নেমে আগে দেখতাম, বিপক্ষের প্রথম একাদশে ভোম্বলদা আছে কি না। জানতাম, ওর পায়ে বল পড়লে আটকানো কঠিন। বুলডোজ়ারের মতো যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে যাবে। ভোম্বলদার একটাই দুর্বলতা ছিল হেড। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকত বিপক্ষকে উঁচু পাসে খেলতে বাধ্য করা। যাতে ভোম্বলদা বল ধরার আগেই হেড করে বল বিপন্মুক্ত করা যায়। শুরুর দিকে ধরতেই পারতাম না ওর খেলা। তাই বারবার আটকাতে ব্যর্থ হয়েছি।