ব্রিসবেনে টাইসনের অভিষেক টেস্টে ১-১৬০-এর পারফরম্যান্সের পর নিজের রান-আপ ছোট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইসন। তার আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাইটস্ক্রিনের সামনে থেকে ৩৮ গজের রান-আপ নিতেন টাইসন। রান-আপ ছোট করে সিডনিতে বল করতে নেমে দশটি ও মেলবোর্নে ন’টি উইকেট পান। সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রান দিয়ে সাত উইকেট পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে পাঁচ টেস্টে ২৮ উইকেট। মূলত তাঁর এই বিধ্বংসী বোলিংয়েই ইংল্যান্ড ৩-১ সিরিজ জেতে।
প্রয়াত অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি রিচি বেনো মেলবোর্নের সেই টেস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, টাইসনের চেয়ে জোরে আর কাউকে কখনও বল করতে দেখেননি তিনি। বেনো এবং টাইসন অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনে একসঙ্গে কমেন্ট্রিও করতেন। টেস্টে বোলিং গড় যাঁর ১৮.৫৬, সেই টাইসনের ঝোড়ো বোলিংয়ের আগ্রাসী অ্যাকশন তাঁর শরীর থেকে এতটাই নিংড়ে নিত যে, চোট-আঘাত তাঁর পাঁচ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে সঙ্গী হয়ে ওঠে। সেই সময় খেলার জগতে ‘ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট’ এখনকার মতো উন্নতও ছিল না। তাই মাত্র তিরিশেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাইসনের অভিষেক নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে। ১৯৫২-য় ইংল্যান্ড সফরকারী ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে প্রথম খেলেন তিনি। তাঁর ভয়ঙ্কর গতির প্রথম বলটার পর উইকেটকিপার ও স্লিপ ফিল্ডাররা পাঁচ পা করে পিছিয়ে দাঁড়ান। সেই ম্যাচে টাইসনের প্রথম শিকার ছিলেন বাংলার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান পঙ্কজ রায়। প্রথম টেস্টের প্রথম ওভারে যে বাউন্সারটা দিয়েছিলেন, তা ব্যাটসম্যান ও কিপারের মাথার উপর দিয়ে সোজা সাইটস্ক্রিনে গিয়ে আছড়ে পড়ে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন টাইসন।
১৯৬০-এ ক্রিকেট ছাড়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে প্রথমে শিক্ষকতা, পরে ভিক্টোরিয়াতে ক্রিকেট কোচিং এবং তার পর কমেন্ট্রির কাজও করেন। বইও লিখেছেন একাধিক। নয়ের দশকে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার আমন্ত্রণে সেখানে পেসারদের প্রশিক্ষণ দিতেও এসেছিলেন। আবে কুরুভিল্লা, পরশ মামরে ছিলেন তাঁর সেই শিবিরের ছাত্র।
অর্থাৎ, ক্রিকেটের কোনও দিকই অধরা ছিল না তাঁর। ক্রিকেট থেকে যা যা পেয়েছিলেন, তা সুদে-আসলে ফেরৎ দিয়ে থেমে গেল ‘টাইফুন’।