Advertisement
E-Paper

ফ্রান্সের বাধা আজ ‘রেভেন্যান্ট’ রোনাল্ডো

উইলিয়াম এডওয়ার্ড হিকসন একটা কথা খুব বলতেন। বিয়াল্লিশে পৌঁছেও যদি তুমি সাফল্য অর্জন করতে না পারো, তা হলে চেষ্টা করো, বারবার চেষ্টা করে যাও।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:২২
প্র্যাকটিসে রোনাল্ডো আর গ্রিজম্যান।

প্র্যাকটিসে রোনাল্ডো আর গ্রিজম্যান।

উইলিয়াম এডওয়ার্ড হিকসন একটা কথা খুব বলতেন। বিয়াল্লিশে পৌঁছেও যদি তুমি সাফল্য অর্জন করতে না পারো, তা হলে চেষ্টা করো, বারবার চেষ্টা করে যাও।

ব্রিটিশ লেখকের কথাটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জানেন কি না, জানা নেই। কিন্তু হিকসনের কথাকে যে তিনি নিজের ফুটবল-জীবনের পাসওয়ার্ড করে ফেলেছেন, লিখে দেওয়া যায়। একত্রিশের শরীর পঁচিশের মতো ছটফট করে না, বল নিয়ে ডিফেন্ডারের পাশ দিয়ে সুপারসনিক গতিতে বেরিয়ে যাওয়া যায় না আর, প্রহরী ধরে ফেলে। কেউ বোঝে না, বুঝতে চায়ও না। অপেক্ষা করে গিরিখাতে পড়ে তাঁর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার, ওঁত পেতে থাকে সমালোচনার দাঁত-নখ নিয়ে। নিজ-মানসিকতা তখন শুধু বন্ধু হয়। বারবার শরীরকে উপদেশ দেয়, চেষ্টা করো, চেষ্টা করো, চেষ্টা করো...।

ফ্রান্স ইউরো ফাইনালের আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ফর্ম নয়, ওয়েলসকে একক আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া নয়, অকল্পনীয় স্পটজাম্পে প্রেমিকা হারানোর শোক ভুলিয়ে দেওয়া হেড নয়। ফ্রান্স ইউরো ফাইনালের আগে সিআর সেভেনের সবচেয়ে যে গুণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা তাঁর মানসিকতা।

গ্রিজম্যানের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইউরোর শেষ যুদ্ধে নামার আগে সিআর এক সাক্ষাত্কারে বলে দিয়েছেন, “ফ্রান্স ফেভারিট। কিন্তু জিতবে পর্তুগাল।” বলেছেন, “ক্লাবের হয়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু দেশের হয়ে পাইনি। পেতে চাই এ বার।” এবং তার পর থেকেই সিআর মানসিকতা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ামহলে। লোকটা বলে কী? কোন বিশ্বাসের বশীভূত হয়ে আগাম বলে দিতে পারে, জিতবে পর্তুগাল? বিশেষ করে যেখানে যুদ্ধটা পুনর্জন্মের ফ্রান্সের সঙ্গে? বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পর্যন্ত যাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয়েছে।

ভাবলে অবাক লাগারই কথা। কোনও সন্দেহ নেই রবিবাসরীয় ফাইনালটা জিতলে পর্তুগাল কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোসের দেশে সন্ত স্যান্টোসে রূপান্তর ঘটে যাবে। কিন্তু তাঁর ‘গ্রিস ২০০৪’ ফুটবল-স্ট্র্যাটেজি বিশ্বের বন্দনা পাবে কি? মনে হয় না। ইউরো ইতিহাসে নিকৃষ্ট ফুটবল খেলে আজ পর্যন্ত একটাই টিম জিতেছে। বারো বছর আগের গ্রিস। রোনাল্ডোর বিরুদ্ধেই ফাইনালে জিতেছে। পর্তুগিজ কোচ স্যান্টোস নিজে গ্রিসের দায়িত্বে ছিলেন এক সময়। ও দেশে ক্লাব কোচিংও করিয়েছেন। তাতেই ব্যাপারটা মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে কি না কে জানে, ফ্রান্স ইউরোয় তাঁর পর্তুগালকে অনেকের বারো বছর আগের গ্রিসই মনে হচ্ছে!

স্যান্টোস বিশ্বাস করেন, ফুটবলে সৌন্দর্যের চেয়েও প্রয়োজনীয় ম্যাচ জেতা। জঘন্য ভাবে হলেও কোনও অসুবিধে নেই। তাই তিনি নব্বই মিনিটে হারা-জেতা নিয়ে ভাবেন না। রোনাল্ডো বাদে টিমের সেরা দুই প্রতিভা জোয়াও মুটিনহো এবং কোয়ারেসমাকে ম্যাচের পর ম্যাচ পাঁচ-ছ’মিনিটের জন্য নামান। সবচেয়ে বড়, সিআর সেভেনের অসুবিধে করে দেন। রোনাল্ডো যে আগের মতো মাঠ জুড়ে খেলেন না, বর্তমানে পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করেন, এত দিনে সর্বজনবিদিত। কিন্তু তাঁকে বল পেতে হবে তো!

কিন্তু ওই যে, ‘চেষ্টা করো, চেষ্টা করো’। বলা হচ্ছে, রোনাল্ডোর আত্মবিশ্বাস এমনই উত্তুঙ্গ যে, তা শুধু দেশকে প্রথম কোনও বড় ট্রফি জয়ের আস্বাদ দেওয়া নয়, স্যান্টোসের কুৎসিত স্ট্র্যাটেজিকেও চিরতরে ভুলিয়ে দিতে পারে। বারো বছর আগের ইউরো ফাইনালে নেমে কান্নায় সমাপ্তি হয়েছিল রোনাল্ডোর। খুব স্বাভাবিক যে, তিনি রবিবার আনন্দাশ্রু ছাড়া কোনও জলের ফোঁটা নিজের চোখে দেখতে চাইবেন না।

তিনি জানেন যে, রবিবার জিতলে জিদান-পরবর্তী অধ্যায়ে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে সবাই মেনে নেবে। জানেন, ফ্রান্সকে হারালে সমালোচকরা মেনে নিতে বাধ্য হবে এ ছেলেকে হারানো যায়, কিন্তু ধ্বংস করে ফেলা অসম্ভব। যত বার মনে হবে মৃত, তত বার উঠে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে দেখাবে নিজের সদম্ভ আস্ফালন। বলা হচ্ছে, রবিবাসরীয় ফ্রান্সের এটাই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। রোনাল্ডো নন, রোনাল্ডোর আত্মবিশ্বাস। যা থেকে একত্রিশেও সৃষ্টি হতে পারে এক মারণ স্পটজাম্প, বা অনন্য ব্যাকফ্লিক। তাঁর নতুন নামটাও বড় সুন্দর। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও মনে পড়িয়ে, হৃদয় ছুঁয়ে চলে যাওয়া।

সিআর আর ক্রিশ্চিয়ানো নন। ফ্রান্সের রবিবারে তিনি ‘রেভেন্যান্ট রোনাল্ডো’!

Cristiano Ronaldo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy