Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Stefanos Tsitsipas

ফরাসি ওপেনের ফাইনালে ওঠা গ্রিসের চিচিপাসের জীবন যেন হোমারের মহাকাব্য

গ্রিস থেকে টেনিস খেলোয়াড় উঠে আসার সংখ্যা নিতান্তই কম। সেখানে চিচিপাসের জন্ম আদ্যোপান্ত টেনিস পরিবারে।

স্টেফানোস চিচিপাস।

স্টেফানোস চিচিপাস। ছবি টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ১৮:১৩
Share: Save:

ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে আলেকজান্ডার জেরেভকে হারানোর পর চোখ ফেটে অনবরত জল বেরিয়ে আসছিল স্টেফানোস চিচিপাসের। কান্না জড়ানো গলায় কোনও মতে বললেন, “আজ ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। খুব।”

গ্রিসের অখ্যাত এলাকা থেকে উঠে আসা চিচিপাসের কথাগুলো শুনতে শুনতে হয়তো আর একজনও সবার অলক্ষ্যে চোখ দুটো মুছে নিয়েছিলেন। তিনি জুলিয়া আপোস্তোলি। চিচিপাসের মা। ছেলের এত দূর আসার পিছনে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ছোটবেলা থেকে ছেলেকে নিয়ে এদেশ-ওদেশ ঘোরা থেকে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা, সবই একার হাতে সামলেছেন।

গ্রিস থেকে টেনিস খেলোয়াড় উঠে আসার সংখ্যা নিতান্তই কম। সেখানে চিচিপাসের জন্ম আদ্যোপান্ত টেনিস পরিবারে। বাবা আপোস্তোলোস চিচিপাস প্রাক্তন খেলোয়াড় ছিলেন। পরে লাইন জাজ হন এবং স্থানীয় একটি রিসর্টের টেনিস কোচ ছিলেন। মা জুলিয়ার জন্ম রাশিয়ায়। পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে ফেড কাপে খেলেছেন। আপোস্তোলোস এবং জুলিয়ার সাক্ষাতের ঘটনাটিও বেশ মজার। এথেন্সের একটি প্রতিযোগিতায় দু’জনের প্রথম আলাপ। জুলিয়া খেলতে গিয়েছিলেন। আপোস্তোলোস ছিলেন প্রতিযোগিতার লাইন জাজ। চোখে চোখে সেখানেই ভালবাসার আদান-প্রদান এবং অতঃপর, পরিণয়।

টেনিসের সঙ্গে দু’জনেই প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকায় ছেলেমেয়েদের অন্য কোনও দিকে তাকাতে হয়নি। চিচিপাস সবার থেকে বড়। তার ভাই এবং বোনও টেনিসের সঙ্গে যুক্ত। তিন বছর বয়স থেকে বাবার উৎসাহে এবড়ো-খেবড়ো জমিতে বল মেরে টেনিসে হাতেখড়ি। চিচিপাসের বয়স যখন পাঁচ, তখন ফুটবলে ইউরো কাপ জিতে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল গ্রিস। সেই সময় কিছুদিনের জন্যে হলেও ফুটবলে জীবন গড়তে চেয়েছিলেন চিচিপাস। তবে সেই ইচ্ছে ছিল ক্ষণস্থায়ী।

ছ’বছর বয়স থেকে জুনিয়র সার্কিট দাপানো শুরু। টেনিসে পুরোপুরি ভালবাসা বোধহয় তখনও জন্মায়নি। হঠাৎই একটি প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে মাঝরাতে উঠে বসে ধাক্কা মেরে বাবাকে জাগিয়েছিলেন চিচিপাস। বলেছিলেন, “বাবা, আমি বড় হয়ে তোমার মতো টেনিস খেলোয়াড় হতে চাই।” মুচকি হেসে সেদিনের মতো ছেলেকে ঘুম পাড়িয়েছিলেন আপোস্তোলোস। তবে বুঝেছিলেন, এ ছেলের বুকে আগুন আছে।

ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠে সে কারণেই চিচিপাসের মুখে ছোটবেলার কথা। বললেন, “আমি খুব ছোট্ট একটা জায়গা থেকে উঠে এসেছি। ছোটবেলা থেকে রোলঁ গারোজের এই মঞ্চে খেলার স্বপ্ন ছিল। ভাবিনি কোনওদিন সেটা সম্ভব হবে। দেশকে গর্বিত করতে পেরে ভাল লাগছে। এখন ভাবলে খুশি হই, গ্রিসও টেনিসবিশ্বের অংশ। আমি এবং মারিয়া (সাক্কারি) মিলে গ্রিসের টেনিসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবরকম সাহায্য করছি। আশা করি গ্রিসের টেনিস-ঐতিহ্য এভাবেই বজায় রাখতে পারব।”

মাত্র ২২ বছর বয়সে চিচিপাস যা অর্জন করেছেন, তা অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয় হতে পারে। সব থেকে কম বয়সে বিশ্বের প্রথম পাঁচে এসেছেন। শুধু তাই নয়, মাস্টার্স এবং গ্র্যান্ড স্ল্যাম মিলিয়ে টেনিসের ‘বিগ থ্রি’— অর্থাৎ রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচ এবং রজার ফেডেরারকে অন্তত দু’বার করে হারানোর কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ২০১৯-এর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে হারিয়েছিলেন ফেডেরারকে। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেরই কোয়ার্টার ফাইনালে হারান নাদালকে। তা-ও আবার দু’সেট পিছিয়ে থেকে। গ্রিসের প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেন।

গ্রিকরা গোটা বিশ্বকে জ্যামিতি উপহার দিয়েছে। কোর্টে এদিক-ওদিক দৌড়ে চিচিপাসও অনবরত জ্যামিতি আঁকেন, কখনও ত্রিভুজ, কখনও চতুর্ভুজ। বেসলাইন হোক বা নেট, ড্রপ শট হোক বা ডাউন দ্য লাইন, ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির এই খেলোয়াড়কে বাগে আনা শক্ত। প্রিয় শট একহাতের ব্যাকহ্যান্ড, যা তাঁর বাবা এবং খেলোয়াড়জীবনের আদর্শ ফেডেরারের অস্ত্র। ফোরহ্যান্ডও সমান শক্তিশালী।

টেনিসে না এলে তিনি কী করতেন? এক সাক্ষাৎকারে চিচিপাস একবার জবাব দিয়েছিলেন, “কে জানে! হয়তো ফুটবলার হতাম।” ভাগ্যিস গ্রিস আর ইউরো কাপ জেতেনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

french open Roland-Garros Stefanos Tsitsipas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE