সত্তরের দশকে বড় হয়ে ওঠার সময় আমাদের মধ্যে বেশির ভাগই ট্যাটু শব্দটা শোনেনি। মোহক-ছাঁটও নয়। গুটিকয়েক যারা ওই সব করত তাদের দেখা হত ঘোরতর ব্যতিক্রমী হিসেবে। সেখানে এই মুহূর্তে বিরাট কোহালির দলের ছেলেদের বেশির ভাগ যেন এক-একটা ফ্যাশনের মুখ। তা সত্ত্বেও ওরা এক-একজন ক্রিকেটীয় ঐতিহ্যের ধারক, আর ততটাই খাঁটি ক্রিকেটমনস্ক। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখগুলোও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
যেমন নিউজিল্যান্ডকে শেষ তিন সপ্তাহে দেশের তিনটে ভেনুর প্রতিটায় চার দিনের ভেতর উড়িয়ে দেওয়ার পথে এই ভারতীয় দলের খেলার ধরনটা। দলটা সিরিজে একইসঙ্গে তীক্ষ্ণতা, স্কিল আর সবার উপরে জেতার খিদেটা দেখিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই টি-টোয়েন্টি প্রজন্মটা টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি দুর্দান্ত সম্মান দেখিয়েছে। ইনদওরে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে কোহালি একটাও উঁচু শট মারেনি। রোহিত শর্মা তো সিরিজ জুড়েই ওর যাবতীয় ‘ফ্ল্যামবয়েন্সি’ যেন লকারে পুরে রেখেছিল। অজিঙ্ক রাহানেকে আমরা যে ঘনঘন পুল আর হুক মারতে দেখতে অভ্যস্ত, আদৌ ততটা দেখা যায়নি। শরীরে কয়েকবার বলের আঘাত খেয়েও ধৈর্য হারায়নি!
নায়ক অবশ্যই রবি অশ্বিন। ও না থাকলে ইনদওরে বিপক্ষের ২০ উইকেট নিতে ভারত সমস্যায় পড়তে পারত। আমাদের মনে রাখতে হবে, ওখানে উইকেটটা স্লো ছিল। প্রথম কয়েক দিন সে ভাবে ভাল টার্নও পাওয়া যায়নি। বোলারদের ফুটমার্কও খুব বেশি ছিল না। তা সত্ত্বেও অশ্বিনের অফস্পিন-শিল্পের সৌন্দর্য এতটাই ছিল, যার চাপে একজন ব্যাটসম্যানের দম বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। অশ্বিনের ছোবল থেকে যদি কেন উইলিয়ামসন-ই নিজেকে বাঁচাতে না পারে, তা হলে আর কে পারবে? সব ধরনের স্পিন, গতির হেরফের, লুপ, বাড়তি রোটেশনের পাশাপাশি সার্জিক্যাল ফিল্ড প্লেসিং বিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে সেই মানসিকতায় বেঁধে ফেলেছিল। যেমনটা কারও ভিডিও-পার্লার-কার-রেসের সিটে বসে মানসিক অবস্থা হয়। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটাটা অবশ্যম্ভাবী। যন্ত্রের ক্ষেত্রেই যেখানে এমন পরিস্থিতি, তখন মানুষের অবস্থার কথা ছেড়েই দিলাম!
গৌতম গম্ভীরকে টেস্টে ক্রিকেটে ফিরতে দেখাটা খুব ভাল। দ্বিতীয় ইনিংসে ওর হাফসেঞ্চুরিটা ভালই শুধু নয়, বেশ সময়োচিতও। লম্বা টেস্ট মরসুমের জন্য টিমে অভিজ্ঞতার খুব প্রয়োজন। তা ছাড়া গম্ভীরের হাতে সব ধরনের শট আছে। ক্রিজে স্ট্রাইক রোটেটিংয়ের ব্যাপারটাও বেশ ভাল দেখিয়েছে ইনদওরে। যে কাজটায় ও খুব ভাল। বিপক্ষ অধিনায়কের ফিল্ড প্লেসিংয়ের চিন্তাভাবনাকে গম্ভীর এ ভাবে চমৎকার ঘেঁটে দিতে পারে। ওর রানের খিদেটাও কমেনি দেখা গেল। শিখর ধবন আর লোকেশ রাহুল যখন ফিরে আসবে, ভারতের টপ অর্ডার আরও সমৃদ্ধশালী যেমন হবে, তেমনই আশা করি সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লাভবানও হবে। পাশাপাশি মিডল অর্ডারের ক্ষমতা এবং লোয়ার অর্ডারের ধারাবাহিকতাকে মেশালে মনে হচ্ছে, ভারতকে ঘরের মাঠে এই লম্বা টেস্ট মরসুমে পেড়ে ফেলা প্রচণ্ড কঠিন হবে।(টিসিএম)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy