স্কুলে পড়ার সময় থেকেই দৌড়ের প্রতি আলাদা আকর্ষণ বোধ করতেন। জাতীয় স্তরের স্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় খালি পায়ে দৌড়তে গিয়ে পা কেটে রক্তাক্ত হয়েছিল। প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে জেদ চেপে গিয়েছিল তাঁর। গোলাম কিবরিয়ার ধারণা, সেদিনের পরাজয়ের গ্লানিই তাঁকে দৌড়বিদ হওয়ার পথে অক্সিজেন জুগিয়েছে।
তবে ভাল অ্যাথলিট হওয়ার উপাদান যে তাঁর মধ্যে মজুত, বেলডাঙার হরেকনগর হাইস্কুলে গোলাম পড়ার সময় থেকেই সেখানকার শিক্ষকরা তা বুঝেছিলেন। সেই জন্য অ্যাথলেটিক্সে যোগদানের ব্যাপারে তাঁরা গোলামকে সব সময় উৎসাহিত করতেন। ১৯৭৮ সালে কাঁচরাপাড়ায় রাজ্য মিটে দৌড়ে তৃতীয় হন তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
খেলাধুলোয় কৃতিত্বের জন্য ১৯৭৯ সালে রেলে চাকরি পান গোলাম। এই সময় থেকেই অ্যাথলেটিক্সের নামী প্রশিক্ষণ সত্যরঞ্জন রায়ের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্রথমবার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেলেন গোলাম। হরিয়ানায় আয়োজিত সেই প্রতিযোগিতায় একটুর জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয় তাঁর। ১৯৮১ সালে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় গোলাম ৪০০ মিটারে দ্বিতীয় হন তিনি। ২০০ মিটারে একটুর জন্য পদক পাননি। ৪০০ মিটার দৌড়ে পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন গোলাম জানালেন চোট-আঘাত তাঁকে সারা জীবন ভুগিয়েছে। রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তর মিলিয়ে গোলাম অন্তত ২৫ বার প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে পেশির যন্ত্রণায় ন’বার অংশ নিতে পারেননি তিনি। আন্তর্জাতিক স্তরের দৌড় প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলে আট বার মনোনীত হয়েও পেশির যন্ত্রণায় তিনবার ছিটকে যান তিনি। টোকিওয় এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নামার আগে প্রস্তুতি শিবিরে অনুশীলনে পায়ের পেশিতে চোট পান তিনি। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হন। ১৯৮২ সালের এশিয়াডের জন্য জাতীয় দলে মনোনীত হন গোলাম। তবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় অংশ নিতে পারেননি। সেই দুঃখ কিছুটা ভুলেছিলেন এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিটে রিলে রেসে রুপো পেয়ে। ১৯৮৫ সালে জাকার্তায় এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নেমে পঞ্চম হয়েছিলেন গোলাম। ১৯৮৬ সালে সোলে এশিয়ান গেমসে পুরুষদের ৪০০ মিটারে রিলে রেসে চতুর্থ হন তিনি। ১৯৮৬ সালে স্কটল্যান্ডে কমনওয়েলথ গেমসে বাংলার প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন গোলাম। শেষ পর্যন্ত ওই প্রতিযোগিতা বয়কট করে ভারত। ফলে গেমসে যাওয়া হয়নি গোলামের।
কর্মসূত্রে বর্তমানে শ্রীরামপুরে থাকেন গোলাম। মাসছয়েক আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। দিনকয়েক আগে দক্ষিণ ভারতে ছেলের কাছে গিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। অবসরের পর কি উঠতি অ্যাথলিটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবছেন? ফোনে গোলাম বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আপাতত তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই।’’