Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
হাসি-কান্নার ইডেন পার্ক

দেশ পাল্টে, স্টেইন পিটিয়ে ‘হেয়ারি জ্যাভলিন’ এখন নতুন বিভীষণ

এমসিজিতে কুড়ি-পনেরো কাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে না কে বলল? এবি ডে’ভিলিয়ার্সের দল বিশ্বকাপ ফাইনালে না উঠতে পারুক, রবিবার এক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার সেই মহাম্যাচ খেলবেন! তিনিও আবার যে সে কেউ নন। তাঁর ছক্কার উইনিং স্ট্রোকই এ দিন সেমিফাইনালে ছিটকে দিয়েছে নিজের জন্মভূমিকে!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:১০
Share: Save:

এমসিজিতে কুড়ি-পনেরো কাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে না কে বলল? এবি ডে’ভিলিয়ার্সের দল বিশ্বকাপ ফাইনালে না উঠতে পারুক, রবিবার এক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার সেই মহাম্যাচ খেলবেন! তিনিও আবার যে সে কেউ নন। তাঁর ছক্কার উইনিং স্ট্রোকই এ দিন সেমিফাইনালে ছিটকে দিয়েছে নিজের জন্মভূমিকে!

এর পরে হেঁয়ালি অপ্রয়োজনীয়। তিনি জোহানেসবার্গজাত গ্রান্ট এলিয়ট এক বল বাকি থাকতে ডেল স্টেইনকে লং অনের উপর দিয়ে গ্যালারিতে উড়িয়ে নিউজিল্যান্ডকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার চোখে আরও বেশি করে ‘বিভীষণ’ হয়ে উঠলে হয়তো অবাক হওয়ার নেই। ইডেন পার্কের ম্যান অব দ্য ম্যাচ সাংবাদিকদের কাছে নিজেও টেনে এনেছেন তাঁর জন্মভূমি প্রসঙ্গ। “বিরানব্বই বিশ্বকাপ আমি জো’বার্গে বসে টিভিতে দেখতাম। বেশ মনে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দেখার জন্য মাকে বলে-টলে বাড়ি থেকে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার খেসারত দিতেও হয়েছিল। কিছু দিনের জন্য স্কুল আর ক্রিকেট শেখা থেকে সাসপেন্ড হতে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু সেই তখন থেকেই আমার বরাবরের ইচ্ছে ছিল আমিও বিশ্বকাপ খেলব। বিরানব্বই বিশ্বকাপ আমার উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে সেই প্রথম রঙিন পোশাকে ক্রিকেট খেলার ব্যাপারটা। তখন কে জানত, এক দিন আমিও সেই রকম পোশাকে বিশ্বকাপে উইনিং স্ট্রোক মারব! টিমকে ফাইনালে তুলব!” বলেছেন মাত্র তিন দিন আগেই ৩৬তম জন্মদিন পালন করা এলিয়ট। বার্থডে গিফট্-টা সামান্য দেরিতে পেলেও অসাধারণ!

দক্ষিণ আফ্রিকান প্লাস্টিক সার্জেনের ছেলে গ্রান্ট এলিয়ট সাতানব্বই পর্যন্ত গতেং-এর হয়ে খেলেছেন। কিন্তু সেই টিমের ক্যাপ্টেন, প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড টেস্ট অধিনায়ক কেন রাদারফোর্ড-ই তাঁকে পরামর্শ দেন, তোমার এখানে খেলে আরও বড় মঞ্চে নামার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেতে পারে। এখানে তোমার জায়গা নিশ্চিত নয়। এর পর রাদারফোর্ডের উদ্যোগেই ২০০১-এ দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে ঢুকে পড়া এলিয়টের। তত দিনে অবশ্য তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ বনাম ভারত ‘এ’ ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। যেটা জন্মভূমির হয়ে এলিয়টের খেলা একমাত্র ম্যাচ। শেষমেশ নিউজিল্যান্ডে ছয় বছর বসবাসের পর ২০০৭-এ এলিয়ট কিউয়িদের হয়ে আন্তর্জাতিক খেলার আইনত ছাড়পত্র পান। বর্শার মতো ছিপছিপে তীক্ষ্ম চেহারায় একগাল দাড়ির জন্য ‘হেয়ারি জ্যাভলিন’ ডাকনামে জনপ্রিয় এলিয়টের অন্য ডাকনামটারই কিন্তু আসল টের পেয়েছেন আজ মর্কেলরা। ‘ম্যাজিক’! রাদারফোর্ড যে ম্যাজিক ব্যাটিংয়ের শক্তি প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন অফসাইডে। এলিয়টের সিগনেচার শটটাই তো একস্ট্রা কভারের উপর দিয়ে উঁচু ড্রাইভ। কিন্তু অকল্যান্ডে এলিয়টের উইনিং স্ট্রোককে ভাবলে আবার গ্লেন টার্নারের তাঁর সম্পর্কে বিশ্লেষণকে মনে পড়বে বেশি। “এলিয়ট খুব চিন্তাশীল ব্যাটসম্যান,” বলেছিলেন প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড তারকা ওপেনার তথা প্রাক্তন নির্বাচক প্রধান।

টার্নারের বিশ্লেষণই মযার্দা পাচ্ছে এলিয়টের কথায়। তাঁর অধিনায়ক (ম্যাকালাম) যে ম্যাচ জেতানো ছক্কাকে বলছেন, “আমাদের জীবনের সেরা মুহূর্ত,” বিপক্ষ অধিনায়ক যে শটকে বলছেন, “গ্রান্টের জীবনের গ্রেটেস্ট শট,” সেটা নিয়ে স্বয়ং ব্যাটসম্যানের কী মন্তব্য? এলিয়ট বলেছেন, “ম্যাচের দু’বল বাকি থাকতে ড্যান (ড্যানিয়েল ভেত্তোরি) নন স্ট্রাইকার এন্ড থেকে এসে বলল, তোমার মিস হিট হলেও উইকেটকিপারের থ্রোয়ে সিঙ্গলস নেব না কিন্তু আমরা। তখনই পরিষ্কার হয়ে যাই দু’টো বলই আমি পাব আর একটা বাউন্ডারি মারলেই আমরা ফাইনালে। কারণ টাই হলেও নিয়ম মতো নিউজিল্যান্ড জিতবে। সে জন্য স্টেইনের পরের বলটায় উঁচু শট মেরে আর দেখিনি। জানতাম গ্যালারিতে না যাক, ওটা বাউন্ডারি পেরোচ্ছেই! তবে তার আগে পর্যন্ত অস্বীকার করব না, বিরাট চাপে ছিলাম।”

শেষ চোদ্দো মাস নিউজিল্যান্ড দলে থাকা না সত্ত্বেও বিগ হিটার-অলরাউন্ডার এলিয়টকে বিশ্বকাপ টিমে রাখার জন্য মার্টিন ক্রো এ দিন সাধুবাদ দিয়েছেন চিফ সিলেকটর ব্রুস এডগার এবং কোচ মাইক হেসনকে। যে এলিয়ট আবার সহানুভূতি জানাচ্ছেন এ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের। “জয়-হার সবেতেই নম্র থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। সে জন্যই ব্যাট আকাশে তোলার পরের সেকেন্ডেই সেই হাতই এগিয়ে দিয়েছিলাম স্টেইনের দিকে করমর্দনের জন্য। ওই রকম অসাধারণ লড়ল যারা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেই হবে।” না কি এটা জন্মভূমির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এলিয়টের!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩ ওভারে ২৮১-৫ (দু’প্লেসি ৮২, ডে’ভিলিয়ার্স ৬৫ নট আউট, অ্যান্ডারসন ৩-৭২)

নিউজিল্যান্ড ৪২.৫ ওভারে ২৯৯-৬ (এলিয়ট ৮৪ নট আউট, ম্যাকালাম ৫৯, মর্কেল ৩-৫৯)

নিউজিল্যান্ড ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে জয়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE