Advertisement
০২ মে ২০২৪
National News

কঠোর অনুশাসন আর চ্যালেঞ্জের আর এক নাম গোপীচন্দ

সাফল্যের নাম পুলেল্লা গোপীচন্দ। সাফল্যের পথে কী ভাবে হাঁটতে হয়, সাফল্যকে কী ভাবে নিজের করে নিতে হয় এই মানুষটিকে দেখলে বোঝা যায়। সাইনা থেকে সিন্ধু তাঁর সাফল্যের ফসল। আর রিও-তে সিন্ধুর রুপোর পদক জয় তাঁর সাফল্যের চূড়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ১৯:৫৩
Share: Save:

সাফল্যের নাম পুলেল্লা গোপীচন্দ। সাফল্যের পথে কী ভাবে হাঁটতে হয়, সাফল্যকে কী ভাবে নিজের করে নিতে হয় এই মানুষটিকে দেখলে বোঝা যায়। সাইনা থেকে সিন্ধু তাঁর সাফল্যের ফসল। আর রিও-তে সিন্ধুর রুপোর পদক জয় তাঁর সাফল্যের চূড়া। তবে নিজের সাফল্যকে প্রাধান্য দিতে নারাজ তিনি। রিও-তে সিন্ধুর পদক জয়ের পর অকপটে তিনি বলেছেন, “সিন্ধু হোক বা সাইনা, যে-ই জিতুক, আমার কাছে সবার আগে ভারত।”

এক জন সাধারণ মানুষ হিসেবে, এক জন খেলোয়াড় হিসেবে, এমনকী এক জন কোচ হিসেবেও তিনি খুব ডিসিপ্লিনড। আর তাঁর এই কঠোর অনুশাসন যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন সিন্ধু-সাইনা-পারুপল্লি কাশ্যপদের মধ্যে।

অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম জেলায় জন্ম নেওয়া গোপীচন্দ কিন্তু ব্যাডমিন্টনে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না। ভালবাসতেন ক্রিকেট খেলতে। দাদার অনুপ্রেরণায় হাতে তুলে নিয়েছিলেন র‌্যাকেট। প্রকাশ পাড়ুকোনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ১৯৯৬-এ প্রথম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। ২০০০ পর্যন্ত পর পর পাঁচ বার ওই চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। ন্যাশনাল গেমস, কমনওলেথ গেমস-এ পর পর সাফল্য। ২০০১-এ অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। প্রকাশ পাড়ুকোনের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই খেতাব জেতেন তিনি।

চ্যালেঞ্জের কাছে কখনও মাথা নত করেননি গোপী। বাধাকে জয় করে কী ভাবে সাফল্য পেতে হয়, শিখেছেন নিজের জীবন থেকে। ১৯৯৪-এ একটি ম্যাচে চোট পান তিনি। এই চোট তাঁর কেরিয়ারের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চিকিত্সকরাও নিশ্চিত ছিলেন না গোপী কোর্টে ফিরতে পারবেন কি না। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল আর্থিক বিষয়টাও। কিন্তু গোপী দমে যাওয়ার পাত্র নন। তাঁর ক্ষমতাকে প্রমাণ করতে ফের কোর্টে নামলেন। আর সেই জেদই তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। এনে দিল অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ।

অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন জয়ের পর।

২০০০-এ অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু অ্যাকাডেমি খুলব বললেই তো আর হয় না! তার জন্য চাই জমি, অর্থ। কোথা থেকে এত কিছু জোগাড় হবে, কী ভাবে হবে— এ সব ভেবে যখন তাঁর আত্মীয়-পরিজনেরা ব্যাকুল, এখানেও যেন কঠোর এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন গোপীচন্দ। ফেডারেশনের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাননি। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার একটা জমি দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বিশ্বমানের অ্যাকাডেমি তৈরি করতে গিয়ে যথেষ্ট অর্থ ছিল না। অবশেষে নিজের বাড়ি বন্ধক দিয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের অর্থসাহায্যে তিলে তিলে তৈরি করে ফেলেন গোপীচন্দ ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি। সালটা ২০০৮। এখান থেকেই একে একে উঠে আসেন সাইনা নেহওয়াল, পি ভি সিন্ধু, কিদাম্বি শ্রীকান্ত, পি কাশ্যপ, গুরুসাই দত্ত এবং এইচ এস প্রণয়ের মতো তারকা খেলোয়াড়েরা। ২০০৬-এ জাতীয় কোচের দায়িত্ব নেন গোপী। এখানেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। তাঁর কোচিং নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এমনকী তাঁকে আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সে সবকে তোয়াক্কা না করেই নিজের মতো করে কোচিং চালিয়ে যান। আর সেটা করতে পেরেছেন বলেই সিন্ধু, কাশ্যপ, সাইনার মতো তারকারা উঠে এসেছেন।

মানুষ হিসাবে গোপীচন্দ অনেকের থেকেই আলাদা। শুধু নিজের জন্য নয়, সকলের জন্য ভাবেন। একটা ঘটনা তার প্রমাণ। তিনি যখন টপ ফর্মে ছিলেন, নরম পানীয়ের একটি সংস্থা থেকে বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি হননি। কারণটা পরে জানা যায়। গোপীচন্দের যুক্তি ছিল, যে জিনিস তিনি নিজে খান না, অন্যদের কী ভাবে বলবেন সেটা খেতে! তা ছাড়া তাঁকে এই বিজ্ঞাপনে দেখে গরিব ছেলেমেয়েরাও ঠান্ডা পানীয় কিনবে, এটা তিনি চান না।

গোপীচন্দের ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি।

গোপীচন্দকে তাঁর ছাত্র এবং পরিচিতরা গোপী আন্না বলেই ডাকেন। তাঁদের স্যার কতটা ডিসিপ্লিনড তার প্রমাণ দিলেন পারুপল্লি কাশ্যপ। কাশ্যপ জানান, খুব ভোরে অ্যাকাডেমিতে হাজির হন তাঁদের স্যার। সন্ধেয় শেষ ছাত্র বাড়ি না যাওয়া পর্যন্ত তিনি অ্যাকাডেমিতেই থাকেন। সমান ভাবে নজর দেন সব ছাত্রের উপর।

গোপীচন্দের হাত ধরেই ভারতে ব্যাডমিন্টনের উত্থান এ কথা বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, তিনি ব্যাডমিন্টনকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছেন। ৫০-৬০-এর দশকে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ভারত যথেষ্ট ভাল জায়গায় ছিল। প্রকাশ পাড়ুকোন, সৈয়দ মোদী, ত্রিলোকনাথ শেঠ, দীনেশ খন্না-র মতো তাবড় সব খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁদেরই ব্যাটন এখন বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গোপী। তবে সময় অনেক বদলেছে, পরিবর্তন এসেছে খেলার ধরনে।

রিও-তে রুপোর পদক যদি পি ভি সিন্ধু জেতেন, তা হলে সোনা জিতেছেন গোপীচাঁদ। যে অনুশাসন আর চ্যালেঞ্জ দিয়ে সিন্ধুকে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে তুলেছেন, সেই সিন্ধুর স্রোতেই ভেসে গিয়েছে গোটা দেশ। আর সেই স্রোতের উত্স হলেন গোপীচন্দ।

অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচ। দেখুন ভিডিও

আরও খবর...

মেরি, সচিন, ধোনি, আজহারের পর এ বার গোপীচন্দের বায়োপিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gopichand Badminton
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE