কীর্তিমান: রঞ্জি ট্রফিতে ট্রিপল সেঞ্চুরি প্রশান্তের। ছবি: বিসিসিআই
পঁচিশতম জন্মদিনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ত্রিশতক! এর চেয়ে সেরা বার্থডে গিফ্ট আর কী হতে পারে!
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঠাসা হিমাচল প্রদেশের উপত্যকা সোলান থেকে উঠে আসা প্রশান্ত চোপড়ার মতো আর ক’জন ক্রিকেটার নিজেকে এমন স্মরণীয় উপহার দিতে পেরেছেন?
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে ২১২টি ত্রিশতক হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র দু’টো জন্মদিনে পূর্ণ করা। একটা কলিন কাউড্রের ১৯৬২-তে, তাঁর ৩০তম জন্মদিনে। আর অন্যটা ভারতের রামন লাম্বার। ১৯৯৫-এ তাঁর ৩৫তম জন্মদিনে।
শনিবার ধর্মশালার এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে পঞ্জাবের সন্দীপ শর্মা, মনপ্রীত গোনি, বারিন্দর স্রান, গুরকিরাত মান-দের মতো বোলারদের সামলে মাত্র ৩১৮ বলে ৩০০ রানে পৌঁছন প্রশান্ত। যখন ৩৩৮ রান করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান, তখনও জানতেন না এই খবর। আগের দিনই টপকে গিয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারাকে। রঞ্জিতে একই দিনে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত রানের (২৭১) নজিরের দিক থেকে। এই তালিকায় তিনি দ্বিতীয়। স্বাধীনতার পরের বছর মহারাষ্ট্রের বি বি নিম্বলকরের ২৭৭-এর পরেই।
শনিবার দিনের শেষে আম্পায়ারদের কাছ থেকে শুনে প্রশান্ত বুঝতে পারেন, কী বিরল এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। বিকেলে এইচপিসিএ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠে দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইল থেকে বলছিলেন, ‘‘আমি তো এসব কিছুই জানতাম না। আম্পায়াররা আমাকে এ সব তথ্য জানিয়ে অভিনন্দন জানাতেই আমি অবাক হয়ে যাই।’’ পঁচিশের তরুণ তখনই উপলব্ধি করতে পারেন জন্মদিনে নিজেকে কত বড় উপহার দিয়েছেন। তাঁর এই ইনিংসে ভর করে হিমাচল আট উইকেটে ৭২৯-এর স্কোরে পৌঁছে ডিক্লেয়ার করে দেয়।
আরও পড়ুন:
জন্মদিনে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে নজির গড়লেন প্রশান্ত
রক্তে যাঁর ক্রিকেট, সেই চণ্ডীগড় সাইয়ের ক্রিকেট কোচ শিব চোপড়ার যোগ্য সন্তান বলেন, ‘‘জন্মদিনে তো কত বড় বড় উপহার লোকে পায়। কিন্তু এমন উপহার আর ক’জন পায়? এটা ভেবেই বেশি ভাল লাগছে। গত বারও জন্মদিনের আগের দিন একটা সেঞ্চুরি করেছিলাম। তবে ক্রিকেট কিংবদন্তিদের সঙ্গে যে এখন আমার নাম জুড়ে গিয়েছে, এটা ভেবে আরও একটু চাপও অনুভব করছি। ভাবছি, এখন থেকে তো সব ম্যাচেই আমার কাছ থেকে এ রকমই বড় ইনিংস চাইবে সবাই।’’
বড় রান অবশ্য ওপেনার প্রশান্তের ব্যাটে লেগেই থাকে। গত বার রঞ্জিতে হরিয়ানার বিরুদ্ধে ২৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। গত মরসুমে ৯ ম্যাচে ৯৭৮ রান করেছিলেন ৭৩.১১-এর গড়ে। গত মরসুম ও চলতি মরসুম মিলিয়ে তাঁর সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা যেখানে তিনটে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, সেখানে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি ও দু’টো সেঞ্চুরি করে ফেললেন একা প্রশান্তই।
পাঁচ বছর আগে যুব বিশ্বকাপেও মাতিয়ে দিয়েছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। উন্মুক্ত চন্দের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে তিনটে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে সে বার প্রশান্ত দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন উন্মুক্ত, স্মিত পটেলের পরেই। সেই প্রশান্ত এখন আরও পরিণত। তবে এই ট্রিপল সেঞ্চুরিকেই স্বপ্নের ইনিংস বলতে রাজি নন তিনি। তাঁর স্বপ্ন আরও বড়। বললেন, ‘‘দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে নেমে এমন একটা ইনিংস খেলতে পারলে সেটাই হবে আমার স্বপ্নের ইনিংস। অবশ্য সেই জায়গায় পৌঁছতে গেলে আমাকে এ রকম আরও ইনিংস খেলতে হবে।’’
একটা স্বপ্ন অবশ্য পূরণ হতে চলেছে সচিনভক্ত প্রশান্তের। ভারত ‘এ’ দলে ডাক পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য। আশা করে রয়েছেন সেখানে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে ব্যাটিংয়ের অনেক কিছু শিখতে পারবেন। বললেন, ‘‘যুব বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সচিন স্যরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু বেশি কথা বলতে পারিনি। এ বার রাহুল স্যরের সঙ্গে দেখা হবে। ওঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই। এটাও আমার একটা স্বপ্ন পূরণ বলতে পারেন।’’ সেই স্বপ্ন পূরণের আগে একটা স্বপ্নের ইনিংস হাঁকালেন হিমাচলের ‘হিরো’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy