Advertisement
০৭ মে ২০২৪
আনন্দবাজারকে আজহার

নিরানব্বই টেস্ট খেলার ভাগ্যও বা ক’জনের হয়

বৃহস্পতিবারের কানপুরে আমন্ত্রিত হাই প্রোফাইল অতীত ভারত অধিনায়কদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। গ্রিন পার্কের ভিআইপি প্যাভিলিয়নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রথমে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের অভূতপূর্ব কড়াকড়িতে তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভিআইপি প্যাভিলিয়নে বসেই আনন্দবাজারকে সাক্ষাত্কার দিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। আজহারের ব্যক্তিগত সচিব নিজের ফোনে ধরিয়ে দিলেন…

পাঁচশো টেস্টের উৎসবে মহম্মদ আজহারউদ্দিন। বৃহস্পতিবার। -পিটিআই

পাঁচশো টেস্টের উৎসবে মহম্মদ আজহারউদ্দিন। বৃহস্পতিবার। -পিটিআই

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কানপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৩
Share: Save:

বৃহস্পতিবারের কানপুরে আমন্ত্রিত হাই প্রোফাইল অতীত ভারত অধিনায়কদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। গ্রিন পার্কের ভিআইপি প্যাভিলিয়নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রথমে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের অভূতপূর্ব কড়াকড়িতে তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভিআইপি প্যাভিলিয়নে বসেই আনন্দবাজারকে সাক্ষাত্কার দিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। আজহারের ব্যক্তিগত সচিব নিজের ফোনে ধরিয়ে দিলেন…

প্রশ্ন: বোর্ডের সঙ্গে আপনার এত দিনের শীতল সম্পর্ক তা হলে শেষ হল?

আজহার: মানে?

প্র: বলতে চাইছি যে, লোকে বলত যে এত দিন কেটে যাওয়ার পরেও বোর্ডের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভাল নয়। তাই আপনাকে বিসিসিআইয়ের কোনও অনুষ্ঠানে বিশেষ দেখা যায় না।

আজহার: জানি। কিন্তু পুরোটাই বাজে কথা। বোর্ডের সঙ্গে গত দশ-পনেরো বছর ধরে আমার সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর বোর্ড কিন্তু এর আগেও আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ডেকেছে। কানপুর কিন্তু প্রথম নয়। তবু দেখতাম, মিডিয়া লিখছে আজহারের সঙ্গে বোর্ডের সম্পর্ক এখনও ঠিক হয়নি। আশ্চর্য!

প্র: পুরোটাই রটনা বলছেন?

আজহার: পুরোটা। এত অপমান হতো শুনলে। তবে সত্যি বলতে কী, এ সব শোনা আমার কাছে নতুন নয়। এখন আর গায়ে লাগে না। এ সবের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছি। বরং আমি অনুরাগ ঠাকুর, রাজীব শুক্লকে ধন্যবাদ দেব। এত বড় একটা ফাংশনে আমাকে ডাকার জন্য।

প্র: কানপুরে কত দিন পর এলেন?

আজহার: সেই ১৯৯৬-এর পর। প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল। অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে কানপুরের।

প্র: যেমন?

আজহার: মাঠ। স্ট্যান্ড। অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

প্র: আর রিইউনিয়ন? সেটা কেমন লাগল? সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনিল কুম্বলে— আপনার টিমের অনেকে তো ছিলেন আজ পাঁচশোর অনুষ্ঠানে?

আজহার: ওটাও দারুণ। অনেক দিন পর দেখা হল সবার সঙ্গে। তবে সবাই কিন্তু যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে (হাসি)। প্রত্যেকেই কিছু না কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। আসলে কানপুর আমাকে বরাবরই স্পেশ্যাল কিছু দিয়ে এসেছে। আজকেরটাও মনে থেকে যাবে।

প্র: আপনার অভিষেক সিরিজে টানা প্রথম তিন টেস্ট সেঞ্চুরির শেষটা তো এখানে। আজ বিরাট কোহালির ভারতকে দেখতে দেখতে সেই রেকর্ডের দিনটার কথা মনে পড়েনি?

আজহার: ওটা ভোলা যায় নাকি? ছবির মতো এখনও দিনটা দেখতে পাই। মনে আছে, লাঞ্চ ব্রেকের সময় রাজীব গাঁধী (তত্কালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী) আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। দেখা হতে উনি আমাকে সেঞ্চুরির জন্য কনগ্র্যাচুলেট করলেন। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আসলে উনি আমার হিরো ছিলেন। বরাবরই খুব ভাল লাগত। বললাম না, কানপুর আমাকে ভাল স্মৃতিই দিয়েছে।

প্র: পাঁচশো টেস্টের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আর কোনও অনুভূতি?

আজহার: এটাই বলব যে, আমি অনার্ড। অসম্ভব গর্বিত লাগছে। ভারত আজ থেকে তো টেস্ট খেলছে না। সেই ১৯৩২ থেকে খেলছে। কত বড় বড় সব ক্রিকেটার এসেছে, কত বড় সব টিম এসেছে। এত বড় একটা জার্নির অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

প্র: কোহালির টিমের খেলা মাঠে দেখলেন আপনি (তখন লাঞ্চ, ভারত বেশ ভাল জায়গায়)। কী মনে হল, কোহালির ভারত পারবে এক নম্বর টেস্ট টিমের জায়গাটা নিয়ে নিতে?

আজহার: অবশ্যই পারবে। আমি তো বলব, আর কিছু দিনের মধ্যেই সেটা সবাই দেখতে পাবে। টিমটা দারুণ। ওয়ার্ক এথিক্স, মানসিকতাটা বেশ ভাল লাগে। টিমটায় প্রতিভাও প্রচুর।

প্র: একটু আগে ভারতের পাঁচশো টেস্টের সফর নিয়ে বলছিলেন। আপনার নিজের টেস্ট সফরও তো কম কিছু নয়। অবসর জীবনে কোন টেস্টের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?

আজহার: ও ভাবে বলা যায় নাকি? কত টেস্ট, ওয়ান ডে খেলেছি। স্মরণীয় জয়ও পেয়েছি অনেক। যে কোনও একটা টেস্টকে বেছে বলাটা কঠিন।

প্র: একটা বলুন।

আজহার: (একটু ভেবে) ’৯৩ কলকাতা। ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট। আমরা জিতেছিলাম ম্যাচটা। ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার সেঞ্চুরিও ছিল। কলকাতায় অবশ্য যে ক’টা ম্যাচ খেলেছি, প্রত্যেকটাই আমার কাছে আলাদা। কলকাতায় জিতেছি না হেরেছি, সেটা আমার কাছে বড় নয়। ইডেনে যে নামতে পেরেছি, আমার কাছে সেটাই আসল। ইডেন আলাদা ব্যাপার। এখনও কলকাতা নিয়ে অনুভূতিটা একই থেকে গিয়েছে। ভাবলে একই রকম নস্ট্যালজিক লাগে।

প্র: নস্ট্যালজিয়া বলছেন। পাঁচশো টেস্টের এমন নস্ট্যালজিক মঞ্চে বসে আপনার একটা আক্ষেপ হয়নি?

আজহার: কীসের আক্ষেপ?

প্র: মাত্র একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য একশো টেস্ট না খেলার আক্ষেপ। মনে হয়নি আজ যে, একটা টেস্ট যদি পেতাম তা হলে এই পাঁচশোটা টেস্টের মধ্যে একশোটায় প্রতিনিধি হিসেবে আমার নাম থাকত?

আজহার: না। সত্যি বলছি, একশো টেস্ট না খেলা নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। কোনও দিন ভাবিনি, আজও ভাবি না। বরং আমি মনে করি, নিরানব্বইটা টেস্ট খেলাও কম বড় ব্যাপার নয়। ভারতের হয়ে নিরানব্বইটা টেস্ট ম্যাচ খেলার ভাগ্যও বা ক’জনের থাকে? আমি অন্তত সেটুকু ভাগ্য নিয়ে তো এসেছিলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mohammad Azharuddin Interview India Captain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE