আই লিগের ইতিহাসে প্রথম বার বরফে মাঠ ঢেকে যাওয়ায় ভেস্তে গেল গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। খেতাবের লড়াইয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল বনাম রিয়াল কাশ্মীরের খেলা ছিল রবিবার। তা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না। তুষারপাতে বিপর্যস্ত শ্রীনগরে এই ম্যাচ কবে হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ফেডারেশন। যা খবর, তাতে ১৭ ফেব্রুয়ারি দু’দলের নির্ধারিত ম্যাচ হওয়ার পরে এই ম্যাচ দেওয়া হতে পারে। আবার এ-ও শোনা যাচ্ছে, লিগের শেষ ম্যাচও হতে পারে এটি।
ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় সুবিধা হল ইস্টবেঙ্গলের। কারণ নেরোকা ম্যাচের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে কাশ্মীরের মতো দলের সঙ্গে খেলতে হত আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলকে। বিমানযাত্রায় ক্লান্ত থাকতেন জবি জাস্টিনেরা। তা ছাড়া এই ম্যাচ যখন হবে তখন লিগ টেবলের অনেক অদলবদল হয়ে যাবে। ঠান্ডাও কমে যাবে কাশ্মীরে।
শুক্রবার সকালে দলকে অনুশীলন করিয়ে কাশ্মীরের কোচ ডেভিড রবার্টসন ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেল তিনটে নাগাদ ম্যাচ বাতিলের খবর পেয়ে সে জন্যই হতাশ গলায় বললেন, ‘‘বরফ পড়লে কী ভাবে তা সরাতে হয় সেই অভিজ্ঞতা ফেডারেশনের ছিল না। কারণ কাশ্মীরের কোনও দল এর আগে তো আই লিগ খেলেনি। ওরা জানবেই বা কী করে? কিছু করার নেই। বিদেশে এ রকম অবস্থায় অনেক জায়গাতেই ম্যাচ হয়েছে। আমিও খেলেছি।’’
তিন দিন বন্ধ থাকার পরে দিল্লি থেকে শ্রীনগরের প্রথম বিমানটি নামল নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে। নেমেও দাঁড়িয়ে থাকল রানওয়েতে। যাত্রী নামানোর সিঁড়ি আনা যাচ্ছিল না বরফের উপর দিয়ে। দিল্লিতে বসেই বারবার বিমানচালক ঘোষণা করেন, রানওয়ের বরফ সরানো হলেই আকাশে উড়বেন। বিমানের জানালা থেকে তুষারশুভ্র পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল এক একটা বিশাল তাঁবু। বিমান থেকে নেমে গাড়িতে উঠে রিয়াল কাশ্মীরের মাঠ টিআরসি স্টেডিয়াম যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে শুধুই বরফ। গাছের পাতায়, বাড়ি বা দোকানের ছাদে, ফুটপাতে— সব বরফে ঢাকা। ডাল লেকের জলেও বরফ ভাসছে। নদীও বরফে স্থবির। পনেরো বছর পরে এ রকম তুষারপাত। তাতে অবশ্য হেলদোল ছিল না ফুটবলপ্রেমীদের। সবাই ধরে নিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সঙ্গে তাঁদের দল রিয়াল কাশ্মীরের হাইভোল্টেজ ম্যাচ হবেই। টিকিটের লাইনও পড়ে গিয়েছিল লম্বা। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তা ছিলও। কারণ বরফ সরিয়ে এখানে বহু ম্যাচ দেখার সাক্ষী যে তাঁরা।
কিন্তু কেন বাতিল হল গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ? ফেডারেশনের তরফে জানানো হচ্ছে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসই কারণ। যেটা জানানো হচ্ছে না তা হল এখানে আজ, শনিবার বন্ধ ডেকেছে একটি সংগঠন। আই লিগের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে শুক্রবার রাতে তাপমাত্রা মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। ফলে বরফ গলা অসম্ভব। আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। কবে এই ম্যাচ হবে তা দু’একদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেব। তবে ১৭ ফেব্রুয়ারির পর এই ম্যাচ দেওয়া হবে।’’ ফেডারেশনের তরফে এ দিন মাঠ পরিদর্শনে এসেছিলেন আই লিগের দায়িত্বে থাকা কর্মী অক্ষয় রোহাতি ও ম্যাচ কমিশনার কর্নাটকের বালসুহ্মমণ্যম। কাশ্মীর-গোকুলম ম্যাচ থেকেই দু’জনে ছিলেন শ্রীনগরে। মাঠের হাল দেখে দু’জনেই জানিয়ে দেন ম্যাচ করা সম্ভব নয়। এরপরেই দুপুর দু’টো নাগাদ তাঁরা রিপোর্ট পাঠান ফেডারেশন দফতরে। ম্যাচ বাতিলের চিঠি চলে যায় দু’ই ক্লাবের কাছেই।
সন্ধ্যা নাগাদ ম্যাচ বাতিলের খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু ফুটবলপ্রেমী খোঁজ নিতে শুরু করেন কেন এমন হল? রিয়াল কাশ্মীরের হোটেলের সামনেও চলে আসেন তাঁরা। তাদের একজন সাব্বির আমেদ বললেন, ‘‘কাশ্মীর চ্যাম্পিয়ন হবে চায় না ফেডারেশন। ইস্টবেঙ্গল এখানে এখন খেললে হারতই।’’ কিন্তু সেটা কতটা ঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ সরেজমিনে স্টেডিয়াম ঘুরতে গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। প্রায় তিন ইঞ্চি বরফে ঢেকে গিয়েছে কৃত্রিম মাঠ। বারপোস্ট এবং জালের একটা অংশও বরফের তলায়। দুটো ড্রেসিংরুমের মাথায় পুরু বরফ। কাশ্মীরের প্রথম ভারতীয় দলে খেলা ফুটবলার আব্দুল মজিদ ইউসুফ ককরু নামাঙ্কিত গ্যালারির লোহা দেখাই যাচ্ছে না। অন্য গ্যালারিতেও পুরু বরফ। এমন কী প্রবেশের প্রধান রাস্তা, টিকিট কাউন্টারেও বরফে ভর্তি। আবহাওয়ার উন্নতি হলেও এখানে খেলা করা যেত না রবিবার। ফেডারেশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।