রায়না।
ললিত মোদীর ই-মেল ফাঁস হয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও একটা বড় ধাক্কা খেল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। রবিবার আইসিসি স্বীকার করে নিল, মোদীর ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেল তারা পেয়েছিল। এবং নিয়মমতো সেটা ভারতীয় বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
এর পরেই অভিযুক্ত দুই ভারতীয় ক্রিকেটার— সুরেশ রায়না এবং রবীন্দ্র জাডেজার (তৃতীয় জন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়েন ব্র্যাভো) ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রিকেট মহলে জল্পনা আরও বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, বিসিসিআই তা হলে এই অভিযোগ নিয়ে কী তদন্ত করেছে এত দিনে? তা ছাড়া আইসিসি যেখানে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, সেখানে তারা চুপ করে বসে আছে কেন? ভারতীয় বোর্ডের দুই প্রধান মাথা— প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিব অনুরাগ ঠাকুরকে অনেক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
বাড়িতে ফিরে বিতর্কের মধ্যে রায়নার টুইট, ‘হোম টাইম’। রায়নার দ্বিতীয় টুইট, ‘আমরা যে জুতো পরি,
সেটা এয়ারকন্ডিশনড শো-রুমে পাওয়া যায়। আর যে সব্জি কিনে খাই, তা পাওয়া যায় ফুটপাথে’।
একই সঙ্গে টুইটারে দু’চোখে হাত রাখা বাঁদরের আইকনও দিয়েছেন। যার অর্থ, খারাপ কিছু দেখব না।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ললিত মোদীর যে ই-মেল ফাঁস হয়, তা সত্যিই ২০১৩-র জুনে তিনি আইসিসি সিইও ডেভিড রিচার্ডসনকে পাঠিয়েছিলেন কি না, এই প্রশ্নে এ দিন আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেয়, ‘‘ললিত মোদীর কাছ থেকে পাওয়া এই ই-মেল তখনই দুর্নীতিদমন বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী তা বিসিসিআই-এর দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ তার আগে রিচার্ডসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ফাঁস হওয়া ই-মেলে চেন্নাই সুপার কিংসের রায়না, জাডেজা ও ব্র্যাভোর নামে অভিযোগ করে রিচার্ডসনকে মোদী জানিয়েছিলেন, ‘‘এই তিনজনকে বাবা দিওয়ান (যাঁকে মোদী এক জন বড় মাপের জুয়াড়িও বলেছেন) নামের এক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও মোটা অঙ্কের নগদ উপহার হিসেবে দিয়েছে।’’ এই ব্যাক্তিকে কড়া নজরে রাখা দরকার বলেও ওই ই-মেলে মন্তব্য করেছিলেন মোদী।
রবিবার আইসিসি-র পাল্টা বিবৃতির পরই ক্রিকেট মহলে প্রশ্ন উঠে যায়, রায়না-জাডেজাকে নিয়ে এ বার কী করবে বোর্ড? মুকুল মুদগল কমিটির কাছে দেওয়া মুখবন্ধ খামে আর কোন ভারতীয় ক্রিকেটারের নাম রয়েছে? প্রশ্ন উঠছে, জুয়াড়ি বলে চিহ্নিত এক জন ব্যক্তি কেন ক্রিকেটারদের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করবেন?
শেষ পর্যন্ত এই তিন ক্রিকেটার যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তা হলে আইপিএলে সিএসকে-র ভাগ্য যেমন সঙ্কটে পড়ে যাবে, তেমনই আইসিসি চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের অস্বস্তিও বহুগুন বাড়বে। কারণ, সেই সময় তিনিই ছিলেন সিএসকে-র মালিক।
রবিবার সন্ধ্যায় আইসিসি-র বিবৃতি পাওয়ার পর ভারতীয় বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা কেউই জবাব দেননি। প্রেসিডেন্ট ডালমিয়া ফোন ধরেননি। আইসিসি-র বৈঠক সেরে সদ্য বার্বেডোজ থেকে ফেরা যুগ্মসচিব অনুরাগ ঠাকুরের ফোনও বেজে যায়। দু’বছর আগে আইসিসি মারফত মোদীর ই-মেল তাঁরাও পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাওয়ায় বোর্ডের তৎকালীন দুর্নীতিদমন বিভাগের প্রধান কর্তা রবি সাওয়ানি শুধু বলেন, ‘‘এটা দুর্নীতিদমন বিভাগের অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার। এই নিয়ে কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই।’’
এই বিতর্কিত আবহেই সোমবার আসন্ন জিম্বাবোয়ে সফরের জন্য ভারতীয় দল বাছতে বসছেন নির্বাচকরা। জিম্বাবোয়েতে তিনটি ওয়ান ডে ও দু’টি টি-টোয়েন্টি-র জন্য প্রথম সারির দল পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দ্বিতীয় সারির দল না পাঠিয়ে নির্বাচকেরা হয়তো সিনিয়র-জুনিয়র মিশিয়ে জিম্বাবোয়ে সফরের দল বাছবেন। শোনা যাচ্ছে বিরাট কোহলি বিশ্রাম চেয়েছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জিম্বাবোবোয়ে যাবেন কি না, তাও নিশ্চিত নন। বোর্ড মহলে তেমনই খবর। যদি দু’জনের কেউই না যান, তা হলে অধিনায়ক কে হবেন? সে ক্ষেত্রে দু’টো নাম ঘোরাফেরা করছে। এক, রোহিত শর্মা। দুই, বিতর্কে জড়িয়ে পড়া রায়না। কিন্তু এই চরম বিতর্কিত পরিস্থিতিতে রায়নাকে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব দেওয়া হবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy