Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
টনটনে আবার বাঁ-হাতি বাঙালির দাপট, তিনশো তুলেও হার ওয়েস্ট ইন্ডিজের

শাকিবের দুরন্ত সেঞ্চুরিতে জয় বাংলা

অনেক সংগ্রামের পরে সতীর্থদের রাজি করিয়েছিলেন ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে তিনিই নামবেন। সেই জায়গায় খেলতে শুরু করার পর থেকে যেন অন্য রূপে পরিণত হলেন শাকিব।

 নায়ক: দুরন্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে জেতানোর পরে শাকিব। রয়টার্স

নায়ক: দুরন্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে জেতানোর পরে শাকিব। রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

টনটনের মাঠে আবারও ঝলসে উঠল এক বাঙালির ব্যাট। আশ্চর্যজনক ভাবে তিনিও বাঁ-হাতি।

১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন এক বাঙালি। ১৫৮ বলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৮৩ রানের ইনিংসের ভিডিয়ো আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের সেলফোনে ঘোরাফেরা করে। সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শাকিব আল হাসানের ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংসও বাঙালিদের মনে গেঁথে যেতে বাধ্য।

অনেক সংগ্রামের পরে সতীর্থদের রাজি করিয়েছিলেন ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে তিনিই নামবেন। সেই জায়গায় খেলতে শুরু করার পর থেকে যেন অন্য রূপে পরিণত হলেন শাকিব। চলতি বিশ্বকাপে এ দিন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এল শাকিবের ব্যাটে। প্রাক্তন অধিনায়কের এই ইনিংস ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে জেতায় সাত উইকেটে।

আরও পড়ুন: কোন কোন অস্ত্রে গেলদের বধ করলেন শাকিবরা?

আরও পড়ুন: শাকিবই কি সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার? দেখে নিন রেকর্ড

৩২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুরন্ত শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ২৩ বলে ২৯ রান করে ফেরেন সৌম্য সরকার। ৫৩ বলে ৪৮ রান করেন তামিম ইকবাল। সৌম্য ফিরে যাওয়ার পরে ক্রিজে আসেন শাকিব। তখন দলের স্কোর ৫২-১।

আরও পডু়ন: দেড় মাস পরিশ্রমের ফল মিলছে, বলছেন শাকিব

শাকিবের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ার পরে ফিরে যান তামিম। মুশফিকুর রহিমও ফিরে যান মাত্র এক রান করে। ১৩৩-৩ স্কোর থেকে ম্যাচের হাল ধরেন শাকিব ও লিটন দাস। ১৮৯ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি গড়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় জয় এনে দেন বাংলাদেশকে। মাশরফি মর্তুজাদের জয়ের পিছনে শাকিবের যতটা অবদান রয়েছে, ঠিক ততটাই কার্যকর থাকল লিটনের ব্যাটও। ৬৯ বলে তাঁর অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব। সব চেয়ে বেশি নজর কাড়ে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে মারা তাঁর তিনটি ছয়। ৩৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনটি ছয় মারেন লিটন। প্রথমটি হুক করেন স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে। দ্বিতীয়টি ল‌ং-অফের মাথার উপর দিয়ে পড়ে গ্যালারিতে। লিটনের তৃতীয় ছয় ফের হুক শটে। এ বার তিনি বল উড়িয়ে দেন ফাইন-লেগ অঞ্চলের উপর দিয়ে। বিস্মিত জেসন হোল্ডারের চোখে তখন শুধুই হতাশা। পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি জিতেছে তাঁর দল। শেষ চারের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে শেষ চার ম্যাচে জিততেই হবে। এ ছাড়া পথ নেই। কিন্তু আন্দ্রে রাসেল, ক্রিস গেলদের সেই স্বপ্ন সত্যি হয় কি না দেখার।

রাসেল যে ফিট নন, তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন আচরণে। বল করতে এসে খোঁড়াচ্ছেন। ব্যাটে রান নেই। এ দিনও ফিরে যান শূন্য রানে। ক্রিস গেলও ফিরে যান ১৩ বলে শূন্য করে। শেই হোপ হাল না ধরলে ৩০০ রানের গণ্ডি পেরোনো তো দূরের কথা, ২৫০ রানও তুলতে পারত কি না সন্দেহ।

৯৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তরুণ ক্যারিবিয়ান উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ৬ রানে এক উইকেট পড়ার পর থেকে হাল ধরেন হোপ ও এভিন লিউইস। ১১৮ রান যোগ করে লিউইস-হোপ জুটি। সেটাই ইনিংসের ভীত গড়তে সাহায্য করে। ৭০ রান করে ওপেনার লিউইস ফিরে গেলেও হোপ হাল ছাড়েননি। উইকেট কামড়ে পড়েছিলেন। ২৫ রান করে নিকোলাস পুরান ফিরে যাওয়ার পরে ঝোড়ো ইনিংস উপহার দেন শিমরন হেটমায়ার। ২৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ছুঁলেন অ্যালেক্স স্টুয়ার্টের গড়া বিশ্বকাপে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড।

স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১-৮ (৫০)
বাংলাদেশ ৩২২-৩ (৪১.৩)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ
গেল ক মুশফিকুর বো সইফুদ্দিন ০•১৩
লিউইস ক পরিবর্ত বো শাকিব ৭০•৬৭
হোপ ক লিটন বো মুস্তাফিজ়ুর ৯৬•১২১
পুরান ক সৌম্য বো শাকিব ২৫•৩০
হেটমায়ার ক তামিম বো মুস্তাফিজ়ুর ৫০•২৬
রাসেল ক মুশফিকুর বো মুস্তাফিজ়ুর ০•২
হোল্ডার ক মাহমুদুল্লা বো সইফউদ্দিন ৩৩•১৫
ব্র্যাভো বো সইফুদ্দিন ১৯•১৫
থমাস ন. আ. ৬•১১
অতিরিক্ত ২২
মোট ৩২১-৮ (৫০)
পতন: ১-৬ (গেল, ৩.২), ২-১২২ (লিউইস, ২৪.৩), ৩-১৫৯ (পুরান, ৩২.২), ৪-২৪২ (হেটমায়ার, ৩৯.৩), ৫-২৪৩ (রাসেল, ৩৯.৬), ৬-২৮২ (হোল্ডার, ৪৩.৪), ৭-২৯৭ (হোপ, ৪৬.৬), ৮-৩২১ (ব্র্যাভো, ৪৯.৬)।
বোলিং: মাশরাফি মর্তুজা ৮-১-৩৭-০, মহম্মদ সইফুদ্দিন ১০-১-৭২-৩, মুস্তাফিজ়ুর রহমান ৯-০-৫৯-৩, মেহদি হাসান মিরাজ় ৯-০-৫৭-০, মোসাদ্দেক হোসেন ৬-০-৩৬-০, শাকিব আল হাসান ৮-০-৫৪-২।

বাংলাদেশ
তামিম রান আউট ৪৮•৫৩
সৌম্য ক গেল বো রাসেল ২৯•২৩
শাকিব ন.আ. ১২৪•৯৯
মুশফিকুর ক হোপ বো থমাস ১•৫
লিটন ন.আ ৯৪•৬৯
অতিরিক্ত ২৬ মোট ৩২২-৩ (৪১.৩)
পতন: ১-৫২ (সৌম্য, ৮.২), ২-১২১ (তামিম, ১৭.৩), ৩-১৩৩ (মুশফিকুর, ১৮.৬)।
বোলিং: শেল্ডন কটরেল ১০-০-৬৫-০, জেসন হোল্ডার ৯-০-৬২-০, আন্দ্রে রাসেল ৬-০-৪২-১, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ৮.৩-০-৭৮-০, ওশেন থমাস ৬-০-৫২-১, ক্রিস গেল ২-০-২২-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE