কুল-চা জুটি অর্থাৎ কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল এলেন। তাঁদের বোলিং-ব্যাটিং সবই করানো হল। ভারতীয় শিবির নক-আউটের জন্য কুল-চা জুটিকে প্রথম একাদশে ধরে রেখেই এগোচ্ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কুলদীপ মার খেয়ে যাওয়া সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে। এক দিকে জাডেজা ভাল বল করেছেন, অন্য দিকে কুলদীপ ব্যর্থ হয়েছেন। হিসাব মতো তাই একমাত্র রিস্ট স্পিনার (যিনি কব্জির ব্যবহার স্পিন বোলিং করেন) হিসেবে চহালের খেলার কথা। কুলদীপের জায়গায় আগের দিন বিশ্রাম নেওয়া লেগস্পিনারের আসা উচিত। আবার পরিসংখ্যান বলছে যে, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ সফল কুল-চা জুটি। বিশেষ করে নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিংয়ের প্রধান স্তম্ভ কেন উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে অসাধারণ রেকর্ড রয়েছে তাঁদের। দু’জনেই দু’বার করে তাঁকে আউট করেছেন। অতীতের এই সাফল্য দুই রিস্ট স্পিনারের জুটিকে ধরে রাখতে পারে কি না, সেটাই দেখার। কুলদীপ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দারুণ বল করে চার উইকেট নিয়েছিলেন। স্বপ্নের বলও করেন, যেটাকে এই বিশ্বকাপের সেরা ডেলিভারি আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তবে মঙ্গলবারের ম্যাচ নতুন পিচে হবে বলে অতি ব্যবহারের ফলে বেশি স্পিন ধরার ফর্মুলা খাটবে না।
ভারতের জন্য দু’নম্বর ধাঁধা হচ্ছে, ভুবনেশ্বর কুমারকে খেলাব না মহম্মদ শামিকে? পরিসংখ্যান শামির দিকে। তাঁর মাঝের দিকে রান দেওয়ার কথা বলা হলেও উইকেট নেওয়ার সাফল্য অনেক বেশি। ভুবনেশ্বরের থেকে একটি ম্যাচ কম খেলে তাঁর দ্বিগুণ উইকেট নিয়েছেন শামি (১৪)। দু’জনেরই ইকনমি রেট অর্থাৎ ওভার প্রতি রান গলানোর হার একই। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শামিকে না খেলিয়ে ভুবিকে নামানো হয়েছিল। তাঁকেই আক্রমণ করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজরা। তবে শেষের ওভারগুলোতে ভুবনেশ্বর অপেক্ষাকৃত কৃপণ বোলিং করতে পারেন এবং তাঁর পক্ষে যেতে পারে ব্যাটিংয়ের হাতও। কোহালিদের দুর্বল টেলএন্ডার ব্যাটিংয়ে ভুবনেশ্বর থাকা মানে কিছুটা ভরসা দিতে পারবেন। এ দিন অনুশীলনে শামির হাবভাব এবং শরীরী ভাষা দেখে মনে হল না, তাঁর কাছে সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে খুব আশাপ্রদ খবর পৌঁছেছে বলে। সোমবার সন্ধে পর্যন্ত যা ইঙ্গিত ছিল, আগের ম্যাচের একাদশ থেকে একটাই পরিবর্তন করার কথা ভাবা হচ্ছিল। কুলদীপের জায়গায় চহাল। সেক্ষেত্রে জাডেজা থাকলেন, তিন উইকেটকিপারও থাকলেন। ধোনি, ঋষভ পন্থ এবং দীনেশ কার্তিক।
কিন্তু সন্ধে থেকেই আবার ম্যাঞ্চেস্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘রেনচেস্টার’। আকাশ কালো হয়ে থাকল, বৃষ্টিও চলল টানা। যদিও মুষলধারে নয়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলছে, ম্যাচের দিনেও এ রকম মেঘলা থাকতে পারে, বৃষ্টিও হতে পারে। সেক্ষেত্রে উইকেটের মধ্যে থাকা এবং সদ্য নিউজিল্যান্ডে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সফল হয়ে আসা শামিকে বাইরে রাখা কি সহজ হবে? দলের মধ্যে যা মনোভাব, তাতে অবশ্য বৃষ্টি দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া বৃষ্টির জন্য সেমিফাইনালে রিজার্ভ ডে-ও রয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচেও বৃষ্টি-বৃষ্টি করে চর্চা চলছিল, তার পর পুরো ম্যাচ হয় সুন্দর আবহাওয়ায়। সেই ম্যাচে সকলে বলেছিল, কুলদীপের বদলে শামিকে খেলানো উচিত ছিল তৃতীয় পেসার হিসেবে। শাস্ত্রী-কোহালিরা খেলাননি। তাঁরা কুলদীপের উপরেই আস্থা রেখেছিলেন এবং তিন উইকেট নিয়ে বাজিমাত করেছিলেন চায়নাম্যান।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এজবাস্টনে তিন পেসার খেলিয়ে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। সেখানে কুলদীপকে বসিয়ে সেই ম্যাচে চহালকে খেলানো হয়েছিল। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আবার লেগ স্পিনারদের খুব একটা সফল হতে দেখা যাচ্ছে না এই বিশ্বকাপে। নিউজ়িল্যান্ড দলে বাঁ হাতির সংখ্যা বেশি বলে তারা লেগস্পিন ভাল ভাবে খেলেও দিচ্ছে। তাই প্রশ্ন থাকছে, এক জন রিস্ট স্পিনার যদি খেলানো হয়, তা হলে কাকে খেলানো উচিত, চহাল না কুলদীপ, সেই অঙ্ক কষাকষিও রয়েছে।
সেমিফাইনালের সেরা দ্বৈরথ? রোহিত শর্মা বনাম ট্রেন্ট বোল্ট। চলতি বিশ্বকাপে ৬৪৭ রান ও ৯৮.৭৭ ব্যাটিং গড়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছেন রোহিত। অন্য দিকে নিউজ়িল্যান্ড বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেবেন বোল্ট। তাঁর সঙ্গে থাকবেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সব চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলারদের এক জন লকি ফার্গুসন। এই দু’জনই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছেন।
শুরুর দিকে আলসেমি ভরা ফুটওয়ার্ক থাকে রোহিতের। সেটাই তাঁর ব্যাটিংয়ের ছিদ্র। বোল্ট কালনাগিনী হয়ে অনেক বার বাসরঘরে ঢুকেছেন ওই ছিদ্র দিয়েই। বাঁ হাতি বোল্ট ভিতরের দিকে বল এনে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন বিশ্বকাপে মধুচন্দ্রিমার মধ্যে থাকা ভারতীয় ওপেনারকে।