উৎসব: ঘরে ফিরলেন ঈশান পোড়েল। কলকাতা বিমানবন্দরে বাবা-মায়ের সঙ্গে। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড উড়ে যাওয়ার দিন তাঁর কাছে শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছতে একজনও উপস্থিত ছিলেন না বিমানবন্দরে। অথচ ভারতীয় জার্সি গায়ে বিশ্বজয় করে ফেরার দিন ছবিটা পুরোটাই বদলে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে লোকের ভিড় দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না, কে আসতে চলেছে। একজন তো প্রশ্ন করেই বসলেন, ‘‘শাহরুখ খান আসছেন নাকি?’’ অবশেষে সাড়ে এগারোটায় বিমানবন্দর থেকে যিনি বেরোলেন তিনি শাহরুখ খান নন। তিনি বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী পেসার ঈশান পোড়েল।
সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন, পাড়ার বন্ধু, ক্লাবের কর্তারা প্রত্যেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তাঁদের প্রিয় বিট্টুর জন্য। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার মুহূর্তের সঙ্গে এই মুহূর্তটা কোনও মতেই মেলাতে পারছিলেন না ঈশান। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তিনি বলেন, ‘‘অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আনন্দটা ঠিক কথায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে এ বার পরিবারের সবার সঙ্গে জমিয়ে গল্প করতে চাই।’’ ঠিক তখনই একের পর এক ফুলের তোড়া এগিয়ে এল ঈশানের দিকে। সিএবির তরফ থেকে তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানালেন দেবব্রত দাস ও সমর পাল। উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক অর্ণব নন্দী। তিনিও ক্লাবের উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানালেন ঈশানকে।
বিশ্বকাপ জয়ের পরে জীবনটা কোনও ভাবে কি বদলে গেল এই বঙ্গ পেসারের? ঈশানের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘আমি বদলাইনি। তবে পরিচিতি কিছুটা হলেও বেড়েছে। আমি তো ভাবতে পারিনি, এত জন আমাকে অভিনন্দন জানাতে আসবে। এই ঘোর কাটতে একটু সময় লাগবে।’’
মঙ্গলবার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সল্টলেকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন ঈশান। রাতটা সেখানে কাটিয়ে বুধবার সকালেই চন্দননগরের দিকে রওনা দেবেন তিনি। তাঁর জন্য ভোরবেলা থেকে উৎসবের আয়োজন করছেন পাড়ার বন্ধুরা। শোনা গিয়েছে, তাঁকে নিয়ে একটি বিজয়মিছিলে হাঁটবেন চন্দননগরবাসী। স্থানীয় ক্লাবের থেকে সংবর্ধনাও দেওয়া হবে প্রিয় বিট্টুকে। তার পরে কি ঈশানের প্রিয় পনির বাটার মশলা তাঁকে রান্না করে খাওয়াবেন রীতা দেবী? ঈশানের মায়ের কথায়, ‘‘আপাতত সে রকম কিছু পরিকল্পনা নেই। তবে ও যা খেতে চাইবে সেটাই রান্না করে খাওয়াব।’’ পাশাপাশি তিনি জানালেন যে, এখানেই থামলে চলবে না। লক্ষ্যটা যে আরও বড়। রীতা দেবী আরও বলেন, ‘‘এখন ওর দায়িত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। ভারতীয় সিনিয়র দলের হয়েও যেন বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে পারে ও।’’
ঈশানের বাবা, চন্দ্রনাথ পোড়েলের কাছে এই দিনটি একটি অদ্ভুত পরিচিতি এনে দিয়েছে। বিশ্বকাপ জয়ী ছেলে ফেরার আনন্দে চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এখন থেকেই আমাকে সবাই ঈশানের বাবা বলে পরিচয় দিচ্ছে। একজন বাবার কাছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! তবে এখনও অনেক পথ এগোনো বাকি। এটা সবে প্রথম ধাপ পেরিয়েছে ও।’’ শোনা গিয়েছে দুপুরে একটি ছোট্ট পিকনিকের মতো আয়োজন করা হচ্ছে পাড়ার বন্ধুদের তরফ থেকে। এত দিন পরে বিট্টুকে পেয়ে কোনও মতেই তাঁর বন্ধুরা ছাড়তে নারাজ। চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ছেলেদের আবদার আমি কখনও ফেলতে পারি না। ভালই হবে একসঙ্গে আনন্দ করা যাবে।’’
তবে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা ঈশানকে মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে বলে তাঁর দাবি। চোট থেকে বেরিয়ে এসে কী ভাবে পারফর্ম করতে হয় ইতিমধ্যেই এই শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। তবে তাঁর চোটটি পুরোপুরি সারাতে আগামী সপ্তাহে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যেতে হবে ঈশানকে। তিনি বলেন, ‘‘ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা তো বেড়েইছে, পাশাপাশি মানসিক ভাবে অনেক শক্তিশালী হয়েছি। তবে আমাকে এখনও ধাপে, ধাপে এগোতে হবে। প্রত্যেক স্তরে ভাল পারফর্ম করতে হবে। তবেই আমার স্বপ্নপূরণ হবে।’’ স্বপ্নটা কী? ‘‘ভারতীয় টেস্ট ক্যাপটা নিয়মিত মাথায় রাখতে চাই। তার জন্যই তো এত লড়াই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy