Advertisement
E-Paper

বত্রিশ বছরের তাজে হাত রাখার দিনে ‘দর্শক’ ধোনি নিয়েও ধন্দ

ছড়ানো-ছেটানো সোয়েটার-মাফলারে নভেম্বরের রাঁচির তাপমাত্রা বেশ নীচের দিকেই। কিন্তু ব্যারোমিটার আর জনমত এখানে আপাতত সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী। যে জনমত বলছে ছিমছাম, ছোটখাটো শহরটার উত্তেজনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী। উষ্ণতার বিচারে সাজাতে হলে ঘটনাগুলো একে একে এ রকম উপলক্ষ এক: ঝাড়খণ্ডের চতুর্দশ জন্মদিন। উপলক্ষ দুই: ‘ভগবান’ বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকী। উপলক্ষ তিন: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ছোট-বড় মন্ত্রী-আমলার বাগ্যুদ্ধ। এবং এই তিনের সঙ্গে শুক্রবার যোগ হওয়া উপলক্ষ চার: টিম ইন্ডিয়ার আবির্ভাব।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২২
রোহিতে মজে রাঁচিও। শনিবার। ছবি: পিটিআই

রোহিতে মজে রাঁচিও। শনিবার। ছবি: পিটিআই

ছড়ানো-ছেটানো সোয়েটার-মাফলারে নভেম্বরের রাঁচির তাপমাত্রা বেশ নীচের দিকেই। কিন্তু ব্যারোমিটার আর জনমত এখানে আপাতত সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী। যে জনমত বলছে ছিমছাম, ছোটখাটো শহরটার উত্তেজনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী।

উষ্ণতার বিচারে সাজাতে হলে ঘটনাগুলো একে একে এ রকম উপলক্ষ এক: ঝাড়খণ্ডের চতুর্দশ জন্মদিন। উপলক্ষ দুই: ‘ভগবান’ বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকী। উপলক্ষ তিন: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ছোট-বড় মন্ত্রী-আমলার বাগ্যুদ্ধ। এবং এই তিনের সঙ্গে শুক্রবার যোগ হওয়া উপলক্ষ চার: টিম ইন্ডিয়ার আবির্ভাব।

কয়েক ঘণ্টার নোটিশে আয়োজিত চারশো চৌষট্টিতম ভারত-শ্রীলঙ্কা সিরিজের টিআরপি বোধহয় পাড়া ক্রিকেটের চেয়ে সামান্য বেশি! তার উপর এই শ্রীলঙ্কা টিমে চেনার চেয়ে অচেনা মুখের আধিক্য। লাহিরু থিরিমান্নে নামক ছিপছিপে তরুণ যে সিংহলিজদের সহ-অধিনায়ক, টিমের মিডিয়া ম্যানেজার সেটা না বলা পর্যন্ত মিডিয়া বাদে মাঠে উপস্থিত ক’জন জানতেন, খুব সন্দেহ। ইডেন ম্যাচটা জনৈক রোহিত শর্মা ইতিহাসের পাতায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রোজ রোজ তো অলৌকিকের আশা করা যায় না। রবিবার ৫-০ হলে বিরাশির পর এই প্রথম দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে ব্রাউনওয়াশ করবে ভারত। কিন্তু পরম নিষ্ঠাবান পরিসংখ্যানবিদের বাইরে কার তাতে কী?

উপরোক্ত কারণগুলোকেও গৌণ করে দিচ্ছে আরও বড় একটা বাস্তব এই প্রথম মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে একটা ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে যেখানে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিই নেই!

বাইশ গজে যে থাকবেন না সেটা তাঁর শহর জেনে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু দর্শক হিসেবেও যে তাঁকে না পাওয়ার একটা বড় সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে, বোধহয় আঁচ করা যায়নি। ধোনি আসবেন? না, আসবেন না? এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর নেই ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের কাছেও।

বাইশ গজে যে থাকবেন না সেটা তাঁর শহর জেনে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু দর্শক হিসেবেও যে তাঁকে না পাওয়ার একটা বড় সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে, বোধহয় আঁচ করা যায়নি। ধোনি আসবেন? না, আসবেন না? এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর নেই ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের কাছেও। আর এই জন্যই রবিবারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ উত্তেজনার ভোটে আপাতত পিছিয়ে স্থানীয় ঘটনাবলির চেয়ে। জেএসসিএ-র এক প্রধান কর্তা বললেন, ধোনিকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। তিনি আসতেও পারেন। কিন্তু ‘আসতেও পারেন’ বলার মধ্যে নিশ্চয়তা কম, আশা বেশি। আর এক মাঝারি কর্তা তো বলেই দিলেন, “না, না। ও আসবে না। ও তো চেন্নাইয়ে।” রাজ্য দলে ভারত অধিনায়কের এক সতীর্থকে ফোনে ধরা হলে তিনিও বলতে পারলেন না, এমএসডি এখন কোথায়। রবিবার মাঠে আসবেন কি না, তার উত্তর দেওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার।

জেএসসিএ তবু লড়ে যাচ্ছে। গত কয়েকটা ম্যাচে টিকিট নিয়ে হাহাকার রীতিমতো জরুরি অবস্থা জারি করে দিয়েছিল। এ বার তাই আগেভাগেই সতর্ক স্থানীয় ক্রিকেট সংস্থা। আগের মতো কমপ্লিমেন্টারি টিকিট অত বেশি বিলোনো হয়নি। সাধারণ টিকিটের দামও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাঠে বেশি দর্শক টানা যায়। কর্তাদের দাবি, রবিবারের ম্যাচে মাঠে ভালই লোক হবে। ধোনি না থাকুন, বিরাট কোহলি তো আছেন।

কোহলি অবশ্য এ দিন প্র্যাকটিসে আসেননি। ইডেন ম্যাচের পর দু’দিন ‘অফ্’ নিয়েছেন ধোনির ডেপুটি। রবি শাস্ত্রী তিনিও মাঠে এলেন না। শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে সুরেশ রায়নাকে। বদলি কে, শুনলে মনোজ তিওয়ারির হয়তো খারাপ লাগবে! রায়নার পরিবর্তে রবিবার কেদার যাদব প্রায় নিশ্চিত। মহারাষ্ট্রের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানকে এ দিন দেখা গেল ডানকান ফ্লেচারের ক্লাসে বাধ্য ছাত্র। স্টুয়ার্ট বিনি নেটে পড়ে থাকলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু তার বাইরে ভারতীয় টিম যেন ‘গো অ্যাজ ইউ লাইক’। উমেশ যাদব নেটের ধারেকাছে নেই। বরং আছেন মেডিসিন বল নিয়ে পিঠের এক্সারসাইজে। রোহিত তিনি প্যাড পরে নামলেন সবার পরে। নেট বোলার নয়, থ্রোয়িং মেশিনের সামনেই শুরু ও শেষ। আর বিকেলে টিমমেটদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন শহরের অদূরে দেউড়ির কালীমন্দির দর্শনে।

এই সিরিজ থেকে যা পাওয়ার, পেয়ে গিয়েছেন রোহিত। পেয়ে গিয়েছে তাঁর টিমও। বিশ্বকাপের আগে রিজার্ভ বেঞ্চ পরীক্ষিত। টিম কম্বিনেশন স্বস্তির জায়গায়। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে পেস আক্রমণ যতটা সম্ভব ধারালো। গোটা টিমেই যেন অদৃশ্য থিম: ক্লাস টেস্ট তো অনেক হল, এ বার আসল পরীক্ষায় নামলে হয় না?

কারণ প্রতিপক্ষের অবস্থা শোচনীয় বললেও কিছুই বলা হয় না। টিমটা যে কী জঘন্য খেলছে, বলতে বলতে বর্ণনার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কোনটা কী ভাবে একেবারেই করা উচিত নয়, ম্যাচের পর ম্যাচ তার টিউটোরিয়াল দিয়ে চলেছে তাঁর টিম। কেউ কেউ তো বলেই ফেলছেন, এই সিরিজে মাঠে নামার জন্য নিজেদের মোটিভেট করাটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা! তাদের বিরুদ্ধে আর কীসের ম্যাচ? কীসের আর ব্রাউনওয়াশের উত্‌সব?

তা-ও পারতেন শুধু একজন, পারতেন এমন শীতল ম্যাচের আবহে উষ্ণতার আমদানি করতে, পারতেন শুধু দর্শক আসনের উপস্থিতি থেকেই।

এমএসডি, শুনছেন?

rohit sharma priodarshini rakshit MS Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy