চাপে: রামকুমারের সঙ্গে আলোচনায় মহেশ। —নিজস্ব চিত্র।
পাশাপাশি দুই প্র্যাক্টিস কোর্টে এক দল তুরীয় মেজাজে অনুশীলন করে চলেছে। থমথমে মুখে ‘হিটিং’ করছে আর এক দল। শুক্রবার সাউথ ক্লাবে ডেভিস কাপের প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরের এই দৃশ্য দেখে বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, কোন দলটা ইটালি আর কোনটা ভারত।
তার কিছুক্ষণ আগেই যে ডেভিস কাপ কোয়ালিফায়ারে পাঁচ ম্যাচের দ্বৈরথে ০-২ পিছিয়ে পড়েছে ভারত! তাও ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে। মহেশ ভূপতিদের পছন্দের ঘাসের কোর্টের রণনীতি প্রথম দিনই মুখ থুবড়ে পড়ায়। দুটি সিঙ্গলসেই স্ট্রেট সেটে হার রামকুমার রমানাথন এবং প্রজ্ঞেশ গুণেশ্বরনের। প্রথম ম্যাচে ইটালির আন্দ্রেয়া সেপ্পি ৬-৪, ৬-২ গেমে রামকুমারকে হারানোর পরে দ্বিতীয় সিঙ্গলসে মাতেয়ো বেরেত্তিনি ৬-৪, ৬-৩ হারান প্রজ্ঞেশকে।
কোয়ালিফায়ারের দ্বৈরথে টিকে থাকতে ভারতকে শনিবার ডাবলস ম্যাচে জিততেই হবে। রোহন বোপান্না এবং দ্বিবীজ শরণের ডাবলস জুটির উপরই নির্ভর করছে এখন ভারতের ভাগ্য। ভারতের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন ভূপতিও বলেছেন, ‘‘আমাদের নজর শনিবারের ডাবলসে। কাজটা কঠিন। তবে হাল ছেড়ে দিচ্ছি না।’’ ঠিক একই রকম পরিস্থিতি থেকে গত বছর চিনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারত। ৩-২ জিতেছিলেন প্রজ্ঞেশরা। মহেশের আশা একই ভাবে ইটালির বিরুদ্ধেও উঠে দাঁড়াবে তাঁর দল। ‘‘ইটালি অভিজ্ঞতার দিক থেকে এগিয়ে। তবে যদি সুযোগ কাজে লাগানো যায়, সব কিছুই সম্ভব। জানি দেশের জার্সিতে খেলার চাপ রয়েছে। তবে অনেক কিছুই তো ঘটতে পারে। চিনের বিরুদ্ধেও ঘটেছিল। ইটালি দল অবশ্যই চিনের চেয়ে শক্তিশালী, তাই আমরা এক একটা ম্যাচ ধরে এগোব,’’ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন মহেশ।
আকর্ষণ: মেয়েকে নিয়ে লারাও শুক্রবার উৎসাহ দিতে হাজির ছিলেন স্বামী মহেশের দলকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ফলে ভারতীয় শিবির এখন তাকিয়ে শনিবারের ডাবলসের দিকে। দলকে উৎসাহ দিতে কলকাতায় ছুটে এসেছেন প্রাক্তন ভারতীয় খেলোয়াড় সোমদেব দেববর্মণ। ২০১০-এ এই পরিস্থিতি (০-২) থেকেই ব্রাজিলকে হারিয়েছিলেন (৩-২) সোমদেব, বোপান্না, লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশরা। তিনি বলছেন, ‘‘হয়তো ইটালির তুলনায় একটু এগিয়ে থাকবে আমাদের ডাবলস জুটি। মরসুমের প্রথম থেকে ওরা একসঙ্গে খেলছে। ঘাসের কোর্টে খেলতে দু’জনেই পছন্দ করে। প্রথম দিনের ফলাফল ভুলে গিয়ে ওদের দু’জনকে উৎসাহ দিতে হবে আমাদের।’’ তবে প্রথম দিনই যে এই পরিস্থিতি হবে, কেউ ভাবেনি। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে রামকুমার যে রকম দাপট দেখাচ্ছিলেন। দু’বার রামকুমার বিশ্বের ৩৭ নম্বর সেপ্পির সার্ভিস ভাঙার খুব কাছাকাছিও চলে এসেছিলেন। প্রথম সেটে ৪-৩ এগিয়ে থাকার সময় ব্রেকপয়েন্ট পান তিনি। কিন্তু বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৩৩ নম্বরের ব্যাকহ্যান্ড শট বাইরে চলে যায়। এর পরেই নবম গেমে রামকুমারের সার্ভিস ভেঙে ৫-৪ এগিয়ে যান সেপ্পি। পরের গেমেই সেট জিতে নেন। আর তাঁকে রুখতে পারেননি রামকুমার। দ্বিতীয় সেটে দু’বার রামকুমারের সার্ভিস ভেঙে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন তিনি। ‘‘এ রকম শক্তিশালী খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে এক বার সুযোগ ফস্কালে ম্যাচে ফিরে আসাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। সেটাই হয়েছে আজ,’’ ম্যাচের পরে স্বীকার করে নেন রামকুমার।
০-১ পিছিয়ে যাওয়ার পরে আশা ছিল, প্রজ্ঞেশ ভারতকে ম্যাচে ফেরাবেন। কিন্তু সেপ্পির মতো দ্বিতীয় ম্যাচে দাপট দেখান বেরেত্তিনিও। দুই সেটেই প্রথম গেমে প্রজ্ঞেশের সার্ভিস ভেঙে দেন তিনি। গত বছর চেংডু এটিপি প্রতিযোগিতায় প্রজ্ঞেশকে হারিয়েছিলেন বেরেত্তিনি। এ দিন দুই সেটেই গোড়ার দিকে ভুল করে বসায় তার শোধ নিতে পারলেন না ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড়।
শনিবার রোহন-দ্বিবীজরা এই জোড়া হারের বদলা নিতে পারবেন? দেশের টেনিস মহলে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy