এমনিতে আইএসএল যতই ভারতের প্রোডাক্ট হোক না কেন সেখানে ভারতীয়দের থেকে বিদেশিদের দৌড়াত্মই বেশি। সে আইকন প্লেয়ার হোক বা হেড কোচ এমন কী সাপোর্ট স্টাফদের বেশিরভাগই বিদেশি। তার মধ্যেই বেশ কয়েকজন ভারতীয় কোচ বিদেশিদের ছত্রছায়াতেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও খুব ভাল করে তাঁরা জানেন সাফল্য এলে প্রশংসা তাঁদের ভাগ্যে খুব একটা জুটবে না। তবুও কোচিংয়ের টানেই জুড়ে যাওয়া আইএসএল-এর সঙ্গে। যদিও এদের অনেকেই আই লিগে বেশ সফল কোচ। তবুও বিশ্বায়নের জোয়ারে গা ভাসাবেন না এমনটা হয় নাকি?
আরও পড়ুন
আইএসএল-এর শুরুতে লড়াই আসলে রাজায় রাজায়
এই দলে ভারতীয় কোচদের বেশিরভাগেরই ডেসিগনেশন সহকারি কোচের। যদিও তার সঙ্গে সঙ্গে দলের আরও একগুচ্ছ কাজ সামলাতে হয় এঁদের। ভারতীয় আর বিদেশিদের মধ্যে ভাষার সমস্যায়ও এই কোচেরাই সিড়ি। যদিও এই কোচেরা মনে করছেন তাঁদের কাছে বিদেশি কোচদের নেতৃত্বে থেকে অনেককিছু শেখার আছে। সঙ্গে পুরো বছর ধরে দেশের মাটিতে বসে দল গড়ার কাজটাও করেন এই ভারতীয় কোচেরাই। সঙ্গে ম্যান ম্যানেজমেন্টটাও তাঁদের একটা বড় দায়িত্ব।
আরও পড়ুন
পেপের জন্যই কিংবদন্তি কপেলের হৃদয়ে সিটি
২০১৭-১৮ আইএসএল-এ ভারতীয় কোচের তালিকায় রয়েছেন শক্তি চৌহান (দিল্লি ডায়নামোস), প্রদ্যুম রেড্ডি (এফসি পুণে সিটি), বাস্তব রায় (এটিকে), ডেরিক পেরেরা (এফসি গোয়া), থাংবই সিংতো (কেরল ব্লাস্টার্স), অ্যালেক্স অ্যামব্রোস (মুম্বই সিটি), ইসফাক আহমেদ (জামশেদপুর এফসি) ও নৌশাদ মুসা (বেঙ্গালুরু এফসি)।এঁরা সকলেই সহকারি কোচ বা ম্যানেজার। সৈয়দ সাবির পাশা চেন্নাইয়ান এফসির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। এই তালিকায় এমন দু’জন রয়েছেন যাঁরা দীর্ঘদিন ভারতীয় ফুটবলে বিভিন্ন আই লিগ দলে সাফল্যের সঙ্গে হেড কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা হলেন ডেরেক পেরেরা ও থাংবোই সিংতো। দু’জনের দখলেই রয়েছে কোচিং অভিজ্ঞতা। এই তালিকায় সব থেকে কম বয়সী কোচ অবশ্যই ইসফাক আহমেদ। গত বছরও খেলেছে কেরলের হয়ে। এ বছর হঠাৎ করেই তিনি কোচের ভূমিকায়। বলেন, ‘‘আমি তো দলের সঙ্গেই প্র্যাকটিস করি। তাতে আমারও ফিটনেস বজায় থাকে আর প্লেয়ারদের সঙ্গেও মিশে যাওয়া যায়। প্লেয়ারদের মানসিকতাটাও বোঝা যায়। গত বছর পর্যন্তও খেলেছি। এখন কোচ হয়ে ওদের বিশ্বাস জেতাটাই আমার লক্ষ্য।’’জামশেদপুর এফসি দলে মেহতাব হোসেন, অসীম বিশ্বাসদের সঙ্গেও অতীতে দীর্ঘদিন খেলেছেন তিনি।
ট্রফির সামনে আইএসএল-এর ফুটবলাররা।
যদিও সব কোচেরাই একবাক্যে বলছেন এটা আসলে তাঁদের কোচিং ক্যাম্প। তাদের শেখার মঞ্চ। দিল্লির সহকারি কোচ শক্তি চৌহান বলেন, ‘‘ফুটবল কোচিংয়ে এই ক’বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। প্রথম বেলজিয়ান কোচ ভ্যান ভেলধোভেন তার পর ব্রাজিলিয়ান রবার্তো কার্লোস আর শেষে গত বছর ইতালিয়ান জিয়ানলুকা জামব্রোতা। এই বছর আমাদের স্প্যানিশ কোচ মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল রয়েছে। সবারই আলাদা আলাদা খেলার ধরণ, আলাদা কোচিং স্টাইল।’’ ইসফাক বলছিলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্বটা কিন্তু অনেক বেশি। হেড কোচের বিশ্বাস অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভীষন জরুরি। আমাদের হেড কোচ স্টিভ কপেলের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। আমার খুব ভাল লাগে যখন আমার উপর পুরো অনুশীলনের দায়িত্ব দিয়ে দেন। আমাকে তার সব কাজে জুড়ে নিয়েছে।’’ এ দিকে কেরল ব্লাস্টার্সের ডাচম্যান কোচ রেনে মিউলেনস্টিন কাজ করে এসেছেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে। আর তিনি নিজেই তাঁর সহকারি হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রাক্তন লাজং এফসি কোচ ও নর্থ-ইস্ট এফসির সহকারি কোচ সিংতোকে। একই কথা সেই সিংতোরও। শুধু নিজের কোচিংকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
চার বছরের ইতিহাসে এখনও কোনও ভারতীয় হেড কোচের দায়িত্ব পাননি। কিন্তু কে বলতে পারে ভবিষ্যত আইএসএল দলের দায়িত্বে থাকবেন ভারতীয়রা। সহকারির ভূমিকায় তখন বিদেশি।