Advertisement
০৫ মে ২০২৪
রোশনের দুরন্ত বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি সেরা হুগলি 

মানকুণ্ডুর মাঠে আইপিএল-এর আমেজ

চিয়ারলিডারই যা ছিল না। সেটা বাদ দিয়ে সিএবি-র আন্তঃজেলা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন মিনি আইপিএল!

অপরাজেয়: জয়ের পর ট্রফি হাতে হুগলির খেলোয়াড়রা। ছবি: তাপস ঘোষ

অপরাজেয়: জয়ের পর ট্রফি হাতে হুগলির খেলোয়াড়রা। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল 
মানকুণ্ডু শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

চিয়ারলিডারই যা ছিল না। সেটা বাদ দিয়ে সিএবি-র আন্তঃজেলা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন মিনি আইপিএল! পিচ রিপোর্ট থেকে শুরু করে কমেন্ট্রি, বিরতিতে গাড়িতে ড্রিঙ্কস পাঠানো, ইলেকট্রনিক্স স্কোরবোর্ড, খেলার নানা মূহূর্তে মিউজিক, মাঠে আলোর কারিকুরি, দর্শকের চিৎকার, মাঠে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান— কিছুই বাদ ছিল না। সব মিলিয়ে মধ্য ডিসেম্বরে শীতের রাতে ‘মশলা ক্রিকেটের’ উষ্ণতা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলেন ঠাসা দর্শক। হাড্ডাহাড্ডি ফাইনালে নদিয়া সুপার ড্যাজলার্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল হুগলি রিভার। তারা জেতে ৭ রানে।

চন্দননগর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় প্রয়াত চঞ্চল ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল ১৮টি দল। খেলা হয় মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে। সেমিফাইনালে হুগলি হারায় মুর্শিদাবাদ নবাবকে। নদিয়ার কাছে হারে শিলিগুড়ি বিকাশ।

সোমবার ফ্লাডলাইটের ফাইনালে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার রণদেব বসু এবং শিবশঙ্কর পাল। টসে জিতে হুগলির দলনায়ক শমিক কর্মকার প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। নদিয়ার অধিনায়ক রাজকুমার পালের বাঁ হাতি স্পিনে অবশ্য হুগলি ভালরকম ঝামেলায় পড়ে য়ায়। দ্রুত চারটি উইকেট হারিয়ে তারা ধুঁকতে থাকে। রাজকুমার কৃপণ বোলিং (৪-০-১৮-২) করেন। সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেন শচীন যাদব এবং সায়ক বসু। পঞ্চম উইকেটে তাঁরা ১২৪ রান যোগ করেন। শচীন ৫৮ অপরাজিত ৬৫ রান করেন ছ’টি বাউন্ডারি এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে। সায়কের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৫৫ রান। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি ওভার বাউন্ডারি এবং চারটি চার। উইকেটের পিছনে স্কুপ শটে বেশ কিছু রান তোলেন সায়ক। ২০ ওভারে ৬ উইকেটের বিনিময়ে হুগলি ১৬০ রান তোলে।

ওভার পিছু ৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু করে দ্বিতীয় ওভারেই নদিয়া প্রথম উইকেটে হারায়। তার পর থেকে অবশ্য গত বারের চ্যাম্পিয়ন নদিয়ার ব্যাটসম্যানদের দাপটে মনে হচ্ছিল, হাসতে হাসতে তাঁরা জিতে যাবেন। ওপেনার অর্ণব শিকদার ১৭ বলে ৩৫ রান করেন। হুগলি কিছুটা ম্যাচে ফেরে ৯৭ রানে বিপক্ষের চতুর্থ এবং পঞ্চম উইকেট ফেলে দিয়ে। এর পরে ফের খেলা ধরে নেয় নদিয়া। ঘরের মাঠে হুগলির আশা যখন ক্ষীন হচ্ছে, তখনই ম্যাচের মোড় ঘোরান বাঁ হাতি পেসার রোশন সিংহ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য নদিয়ার ১০ রান দরকার ছিল। হাতে তিন উইকেট। কিন্তু রোশনের এই ওভারে তারা ২ রানের বেশি নিতে পারেনি। দু’টি উইকেটও হারায় তারা। রোশনের শেষ বল উইকেটরক্ষক দীপায়ন রায়ের দস্তানায় জমা পড়তেই ৯ উইকেটে ১৫৩ রানে নদিয়া থেমে যায়। দর্শক নাচতে শুরু করেন।

খেলা দেখতে মাঠের চারপাশ ভরে গিয়েছিল। মাঠে হাজির ছিলেন বহু মহিলাও। ক্রমাগত হাততালি দিয়ে তাঁরা উৎসাহ জুগিয়েছেন ক্রিকেটারদের। অশ্রু দে নামে এক প্রৌঢ়া বলছিলেন, ‘‘টিভিতে ক্রিকেট দেখি। ইডেনেও গিয়েছিলাম। স্থানীয় মাঠে এমন খেলা হলে তো ভালই। তার উপরে এত ভাল ফাইনাল! যে কোনও দল জিততে পারত।’’ অনবদ্য বোলিংয়ের (৪-০-১৩-৪) সুবাদে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হন রোশন। প্রতিযোগিতার সেরা বোলারও তিনি। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন শচীন। সেরা ব্যাটসম্যান রানার্স দলে অয়ন গুপ্ত। ফেয়ার প্লে ট্রফি পেয়েছে মুর্শিদাবাদ নবাব।

২০০৮ সালে শিলিগুড়িতে প্রথম আন্তঃজেলা ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চন্দননগর। এ দিন ওই দলের খেলোয়াড়দের সংবর্ধিত করা হয়। দু’দলের খেলোয়াড়রাই দর্শকের প্রশংসা করে গেলেন। সব দেখে উদ্যোক্তাদের হাসি চওড়া হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mankundu Mini IPL Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE