Advertisement
E-Paper

দিল্লির অন্যায় উপেক্ষাটাই তাতিয়ে দিল, বলছেন ‘মাসলম্যান’ আন্দ্রে রাসেল

আনন্দবাজারকে এই একান্ত সাক্ষাৎকার দেন কাঁধে চোট পাওয়ার আগে। তখনও অনিশ্চিত নন তিনি।   

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৩
নায়ক: নাইটদের হোটেলে তাদের সেরা অস্ত্র রাসেল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নায়ক: নাইটদের হোটেলে তাদের সেরা অস্ত্র রাসেল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কুড়ি ওভারের খেলায় শাহরুখ খানের নাইটদের পরাক্রমশালী ব্যাটসম্যান তিনি। ছক্কার বৃষ্টি দেখে বিস্মিত বিশ্ব। একাই ম্যাচ জিতিয়ে চলেছেন কেকেআরকে। অথচ তিনিই কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত একই সঙ্গে চালাচ্ছিলেন ফুটবল ও ক্রিকেট। রীতিমতো বাড়ি থেকে পালিয়ে ফুটবল কর্তাদের হাত থেকে আত্মগোপন করে হয়েছিলেন ক্রিকেটার। রোমহর্ষক সেই কাহিনি শোনালেন ‘মাসলম্যান’ আন্দ্রে রাসেল নিজেই। আনন্দবাজারকে এই একান্ত সাক্ষাৎকার দেন কাঁধে চোট পাওয়ার আগে। তখনও অনিশ্চিত নন তিনি।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের সেরা বিনোদনকারী। এই তকমা শুনতে কেমন লাগে?

আন্দ্রে রাসেল: পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমার তো এটাই লক্ষ্য। খেলা দেখিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ভক্তদের বিনোদন উপহার দেওয়া। যাতে স্টেডিয়ামে ঢুকে তারা খেলাটা উপভোগ করতে পারে। দল হারলেও যাতে ওরা খুশি মনে ঘরে ফিরে বলতে পারে যে, খেলাটা উপভোগ করে এসেছি। ভাল লাগে দেখে যখন লোকে বলে আমি তাদের আনন্দ দিতে পেরেছি। যেন এ ভাবেই সকলকে আরও আনন্দ দিয়ে যেতে পারি।

প্র: কিশোর বয়সে দারুণ ফুটবল খেলতেন। কী ভাবে পুরোপুরি ক্রিকেটে ঢুকে পড়লেন?

রাসেল: সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল সন্দেহ নেই। আমি গোলকিপার ছিলাম। অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলের নির্বাচনী ট্রায়ালেও আমি ডাক পেয়েছিলাম। খুব উত্তেজিত ছিলাম যে, ৩০ জনের মধ্যে আমার নামও ছিল। ভাবতে শুরু করেছিলাম, এক দিন তা হলে আমার পক্ষে পেশাদার ফুটবলার হওয়া সম্ভব। একই সময়ে আবার জামাইকার ক্রিকেট দলেও সুযোগ পেলাম।

আরও পড়ুন: আরসিবির মাস্ট উইন ম্যাচে কেমন হতে পারে নাইটদের প্রথম একাদশ?

স্কুলের প্রিন্সিপালের ফোন পেলাম এক দিন। তিনি বললেন, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে। আমি বললাম, ক্রিকেটকে বেছে নিতে চাই। উনি বলতে থাকলেন, এটা ঠিক করছ না। তোমার জীবন নির্ভর করছে এই সিদ্ধান্তটার উপর। কিন্তু আমি জোরের সঙ্গেই বললাম, মন ঠিক করে ফেলেছি। ক্রিকেটই খেলব। সে দিনের সেই সিদ্ধান্তের জন্যই আমি আজ ক্রিকেটার আর বিশ্বের সব চেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলছি।

প্র: শোনা যায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ আপনার বাড়িতে ফোন করতেই থাকে। আপনার ঠাকুরমা সামলালেন...

রাসেল: (হাসি) সত্যি, একটা সময় গিয়েছে বটে সেটা। আমি ওদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। এখন মজা পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু তখন পরিস্থিতি মোটেও সহজ ছিল না। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। মনে হচ্ছিল যে, কিছু ভুল করছি না তো। আমার এক ফুটবলার বন্ধুও এসে ঠাকুরমার সঙ্গে কথা বলে। বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, ফুটবল কোচ খুব চাইছেন আমাকে। বলতেই হবে যে, ঠাকুরমা দারুণ সামলেছিলেন। বার বারই বলে গিয়েছেন, আন্দ্রে বাড়ি নেই। আর আমি পালিয়ে বেড়িয়েছি।

প্র: কোনও অনুতাপ নেই ফুটবল থেকে পালিয়ে ক্রিকেটে আসার জন্য?

রাসেল: কোনও সুযোগ দরজায় এসে কড়া নাড়ছে আর আপনি সেটাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। কাজটা সহজ নয়। তবে ঈশ্বর যা করেন ভালর জন্যই করেন। ক্রিকেট খেলে আমি এখন সুখী মানুষ। বলছি না যে, ফুটবল খেললে নাম, যশ, অর্থ পেতাম না। গোলকিপার হিসেবে ভালই ছিলাম, কে বলতে পারে, ফুটবল চালিয়ে গেলে আজ হয়তো আমি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে গোলকিপার খেলতাম। হয়তো ইউরোপ বা ইংল্যান্ডের উচ্চতম লিগে অংশ নিতাম। তবু একটা পথ বেছে নিয়েছিলাম। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসারই জয় হয়েছিল। ফিরে তাকিয়ে একটুও আক্ষেপ হয় না।

প্র: গোলকিপারের কোনও সুফল ক্রিকেটেও পাওয়া যাচ্ছে কি?

রাসেল: আমি মাঠে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিংয়ের সময় যা যা করি, ভাল করে দেখবেন, সব গোলকিপারের মতোই। নমনীয়তাটা আমি পেয়েছিই ফুটবল থেকে। মাঝেমধ্যে লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, কী ভাবে উড়ে গিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিচ্ছ? তখন ওদের বলি, আমি গোলকিপার ছিলাম। ডাইভ দেওয়া, গড়িয়ে গিয়ে বল তুলে নেওয়া, উঁচুতে লাফিয়ে বল ধরা— এগুলো আমার মধ্যে সহজাত ভাবে এসে যায়। অন্যরা ফিল্ডিংয়ে ক্রিকেটারের মতো আচরণ করে, আমি করি গোলকিপারের মতো।

প্র: কী ভাবে গড়ে উঠল পাওয়ারহিটার আন্দ্রে রাসেল?

রাসেল: এক দিনে তো হয়নি। এর পিছনে অনেক পরিশ্রমের রাস্তাও রয়েছে। একটা সময়ে কিন্তু আমি নিলামে আনসোল্ডও থেকেছি। ২০১৪ হবে সেটা। আমি তখন দিল্লি দলে ছিলাম। ওখানে আমার সঙ্গে খুব অন্যায় হয়েছে। কত বার এমন হয়েছে যে, দিল্লি ম্যানেজমেন্ট আমার হোটেলের ঘরে ফোন করে বলেছে, রাস, তৈরি থাকো। তুমি কালকের ম্যাচে খেলছ। আমি নিজেকে তৈরি রেখেছি। তার পরে মাঠে গিয়ে ম্যাচের দিন কোচ এসে জানিয়েছে, তুমি খেলছ না। প্রথম দু’এক বার আমি খেলোয়াড়ি মনোভাব দেখিয়ে নিজেকে সামলেছি। কিন্তু আমিও তো মানুষ। আমি তো খেলতে এসেছি, জল বা তোয়ালে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তো আসিনি। জানতাম, আমি ভাল ক্রিকেটার। তখনও ছিলাম, এখনও আছি। আমাকে আজ সাফল্য দিয়েছে কোন ব্যাপারটা জানেন? আত্মবিশ্বাস। দিল্লিতে থাকার সময় যেটা চুরমার হয়ে গিয়েছিল। কেকেআরে এসে দারুণ ভাবে ফিরে পেয়েছি। সব সময় যদি আমার মাথার মধ্যে ঘোরে যে, পরের ম্যাচে সুযোগ পাব তো? তা হলে কোন ক্রিকেটারের পক্ষে ভাল খেলা সম্ভব?

প্র: বলছিলেন, দিল্লিতে অন্যায় হয়েছিল। কোনও বিশেষ ঘটনা হয়েছিল কি? যা থেকে এটা বলছেন?

রাসেল: যে বছর আমি দিল্লি ছাড়লাম, একটা টিম মিটিংয়ে কয়েকটা কথা বলে ফেলেছিলাম। খোলা মনে বলে দিয়েছিলাম যে, আমাকে বোকা বলে ধরে নিয়ো না। সেটা ওদের ভাল লাগেনি। তার প্রভাবই হয়তো দল নির্বাচনে পড়ছিল। সে বারই কেকেআর আমাকে ৬০ লক্ষ টাকায় কিনল। তা-ও প্রথম দিকে আনসোল্ড থাকার পরে। খুব কম টাকায় হয়তো আমি বিক্রি হয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম, আমি ভাল ক্রিকেটার। আসলে দিল্লির সেই উপেক্ষা আমাকে তাতিয়ে দিয়েছিল। কিছুতেই মানতে পারিনি। আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আইপিএলে প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

প্র: যেমন?

রাসেল: আমি এখন বেশি কথা বলি না। চুপচাপ থেকে নিজের কাজ করার চেষ্টা করি। যখন আমার দিন খারাপ যায়, রুমে গিয়ে বসে নিজে ভাবার চেষ্টা করি, কেন ব্যর্থ হলাম। তার পর সেই ম্যাচটা পিছনে ফেলে এগিয়ে যাই। আমি বুঝতে শিখেছি যে, যত কম কথা বলবে, তত তোমার জন্য জীবন সহজ হবে। যদি বেশি সোজাসাপ্টা হতে যাও, যদি বেশি সৎ হও, তা হলে সমস্যা তৈরি হবে জীবনে। তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখো।

প্র: ‘রাসেল মাসল’-এর এত ছক্কা মারতে পারার রহস্য কী?

রাসেল: পরিশ্রম। জিমে প্রচুর সময় কাটাই। শক্তি বাড়ানোর ট্রেনিং করি অনেক। পুশ-আপ্‌স দিই। আমি কিন্তু দারুণ যে জিমের ভক্ত, তা নয়। কিন্তু জানি, পাওয়ারহিটিং চালিয়ে যেতে হলে আমার শরীরকে ঠিক রাখতে হবে। আমাদের সকলের শক্তি দরকার। আর আমি বিশ্বাস করি, যদি তুমি শক্তিশালী হও, তা হলে যে কোনও কিছু করে ফেলতে পারবে।

প্র: বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ম্যাচটা নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?

রাসেল: এই মুহূর্তে আরসিবি হয়তো দারুণ করছে না। কিন্তু তার জন্য আমাদের জন্য ওয়াকওভার তো অপেক্ষা করছে না। আইপিএলে কোনও সহজ দল নেই। দিনের শেষে তাই আমাদের সেরাটা দিতেই হবে। ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। আইপিএলে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণে এই ম্যাচের দুই পয়েন্ট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Andre Russell IPL 2019 KKR Jamaican cricketer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy