দরিদ্র এবং উঠতি ক্রিকেটারদের জন্যে নিজের টাকার হস্টেল তৈরি করছেন রিঙ্কু। — ফাইল চিত্র
কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ভাল খেলে শিরোনামে চলে এসেছেন রিঙ্কু সিংহ। কিন্তু মাঠের বাইরেও যে তাঁর কাজকর্ম শিরোনামে আসার মতোই, তার প্রমাণ পাওয়া গেল এ বার। দরিদ্র এবং উঠতি ক্রিকেটারদের জন্যে নিজের টাকার হস্টেল তৈরি করছেন রিঙ্কু। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেই হস্টেল তৈরি হয়ে যাবে। খুব কম খরচে সেখানে থাকতে পারবেন অভাবী ঘরের ক্রিকেটাররা।
রিঙ্কুর বাবা খানচন্দ্র সিংহ এখনও এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন বাড়ি বাড়ি। দুই ভাইয়ের একজন অটো চালান, আর একজন কোচিং সেন্টারে ঝাড়পোঁছ করেন। রিঙ্কুকেও একসময় ঘর মোছার কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা না করে ক্রিকেট খেলার দিকেই মন দেন। তাঁর মতো কষ্ট আর যাতে কোনও ক্রিকেটারকে না করতে হয়, তারই ব্যবস্থা করছেন রিঙ্কু।
আলিগড়ে থাকা রিঙ্কুর ছোটবেলার কোচ মাসুদুজ জাফর আমিনি বলেছেন, “তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যে বরাবরই একটা হস্টেল তৈরি করা স্বপ্ন ছিল রিঙ্কুর। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করার জন্যে আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। যে হেতু এখন আর্থিক ভাবে ওর কোনও সমস্যা নেই, তাই হস্টেলের কাজ শেষ করতে চাইছে।”
আলিগড়ে একটি ক্রিকেট স্কুল এবং অ্যাকাডেমি চালান রিঙ্কুর কোচ আমিনি। সেটি সরকারের ১৫ একর জমির উপর অবস্থিত। সেই জমিতেই হস্টেল তৈরি করছেন রিঙ্কু। প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। পুরো টাকাই রিঙ্কু দেবেন। আমিনি বলেছেন, “তিন মাস আগে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। কেকেআরে যোগ দেওয়ার আগে রিঙ্কু খুব কাছ থেকে সব কাজ খতিয়ে দেখেছে।”
হস্টেলে ১৪টি ঘর থাকবে। প্রতিটি ঘরে চার জন করে ক্রিকেটার থাকবেন। একটি শেড এবং প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হচ্ছে। আলাদা শৌচাগার থাকবে। হস্টেলে একটি ক্যান্টিন থাকবে, যেখান থেকে কম দামে খাবার কিনে খেতে পারবেন ক্রিকেটাররা। হস্টেলে থাকতেও খুব সামান্য খরচ করতে হবে।
হস্টেল তৈরি হয়ে গেলে রিঙ্কু বড় দাদা সোনু তার দেখাশোনা করবেন। তিনি নিজেও খুব উত্তেজিত এমন উদ্যোগের সাক্ষী থাকতে পেরে। বলেছেন, “আমরা দুই ভাই এক সময় একসঙ্গে গ্যাস ডেলিভারি করেছি। তবে আমরা সবসময় চাইতাম ও ক্রিকেট খেলুক। যে ত্যাগ ও করেছে তাই আজ সাফল্য এনে দিয়েছে। আমাদের শুধু দারিদ্র থেকে বের করেই আনেনি, বাকিদের কথা ভেবে হোস্টেলও তৈরি করে ফেলেছে।”
আমিনির অ্যাকাডেমিতে যাঁরা ক্রিকেট শেখেন তাঁরা আশেপাশেই ঘর ভাড়া করে থাকেন। বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের। অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে থাকতে হয় তাঁদের। হস্টেল তৈরি হয়ে গেলে কম দামে থাকতে পারবেন। রিঙ্কুর পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি জিমন্যাসিয়ামও তৈরি করা হবে। হস্টেলের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। পরের মাসেই হয়তো চালু হয়ে যেতে পারে। আইপিএল থেকে ফিরলে রিঙ্কু নিজেই হয়তো সেটা উদ্বোধন করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy