রবিবার গ্রিন পার্কে। ছবি: পিটিআই
গ্রিন পার্কে সত্যি সত্যি টেস্ট ক্রিকেট চলছে তো?
রবিবারের ঝিমোনো সকাল। এগারোটা হবে। ভারত ব্যাট করছে। লিডের অঙ্ক আড়াইশো থেকে তিনশো, তিনশো ছাড়িয়ে ছুটছে সাড়ে তিনশোর দিকে। আচমকা তিন তলার প্রেসবক্স থেকে নীচে তাকিয়ে দেখা গেল, কিছু একটা চলছে। স্টেডিয়ামের সাত নম্বর গেটের টিকিট ভ্যালিডেটরদের হটিয়ে প্রবল ভাবে ঢুকে পড়তে চাইছে কিছু লোক, আর তাদের প্রাণপণে থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কতিপয়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে চড়-থাপ্পড়, ধাক্কাধাক্কি শুরু!
শোনা গেল, যাঁরা উগ্র মেজাজে টিকিট চেকিংয়ের কাঁটাতার পেরিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছিলেন, তাঁরা নাকি স্থানীয় ক্রাইম রিপোর্টার। কানপুর ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা বললেন যে, এঁদের দাপট নাকি সব জায়গায় বাড়াবাড়ি রকমের। রবিবার বলে একা নয়, সপরিবারে এঁরা এসেছেন খেলা দেখতে। টিকিট ভ্যালিডেটররা প্রেস বক্স অঞ্চলে এঁদের ঢুকতে দিতে চাননি, আর তাই এঁরাও প্রবল তর্জন-গর্জন, ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছেন। ঈশ্বরের কৃপায় ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়নি। মোবাইল ভাঙা, ধাক্কাধাক্কিতে আটকে থেকেছে। কাউকে নিয়ে হাসপাতাল দৌড়তে হয়নি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট দর্শনের এমন উদগ্র ইচ্ছে বিস্ময়কর নয় কি?
আন্দাজ করা যায়নি, আসল বিস্ময় এটা নয়। বরং এ সব ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের ঘণ্টাদুয়েকের ভেতরে যে দৃশ্যটা গ্রিন পার্ক জুড়ে ভেসে উঠবে, সেটা বিস্ময়। আসল বিস্ময়।
ভাবা যায়, টেস্ট ক্রিকেট চলছে আর গ্যালারি কি না পরিপূর্ণ! হিন্দি চ্যানেলের ভাষায়, ‘খচাখচ ভরা হুয়া’!
টেস্ট ক্রিকেটকে মৃতপ্রায় দশা থেকে পুনর্জীবন দিতে চলতি সিরিজে কম কিছু করছে না ভারতীয় বোর্ড। প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্থাকে বলে দেওয়া হয়েছে, দর্শক টানতে হবে যে কোনও উপায়ে। টাকা খরচ হয় হোক। মোট ষাট লক্ষ টাকা কেন্দ্র পিছু বাজেট রাখতে বলেছে বোর্ড। যা খরচ হবে স্রেফ নানাবিধ দর্শক টানার প্রোগ্রামে। তিরিশ লক্ষ বোর্ড দেবে। তিরিশ লক্ষ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সংস্থাকে। পুজোর আগে ইডেন টেস্টের মেনুতে যে ফ্যান জোন, কিডস জোন, কর্পোরেট ক্রিকেটের মতো বিনোদন-মহাযজ্ঞের বন্দোবস্ত থাকছে, তা তো আর এমনি এমনি হচ্ছে না।
এক দিক থেকে ভাবলে, বিরাট কোহালিদের প্রকৃত জয় বোধহয় এটা। টেস্ট ক্রিকেটের টানে কানপুরকে মাঠে এনে ফেলা। না, বাইশ গজের জয় সম্পন্ন হয়নি এখনও। তবে হবে, মহাজাগতিক কিছু না ঘটলে হবে। পঞ্চম দিনের তিনটে সেশনে চাই তো মোটে আর ছ’টা উইকেট।
খুব সহজে ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছে কানপুর। প্রহর গুনছে, কোহালিদের ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের। ব্ল্যাক ক্যাপসের সম্মান বাঁচানোর মতো কেউ পড়েও নেই আর। পিচে চতুর্থ দিন টার্নের যা নমুনা দেখা গেল, তাতে পঞ্চম দিন কী দাঁড়াবে ভাবলে এ রাতের মতো ঘুম উড়ে যেতে পারে টিম উইলিয়ামসনের। ফুটমার্কসে সৃষ্ট রাফে স্টাম্পের আশপাশ প্রায় কালো হয়ে গিয়েছে। যেখানে নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গলে শুধু রেখে যাচ্ছেন অশ্বিনরা। বাকি কাজ পিচ করে দিচ্ছে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন পরে এসে দুঃখ করছিলেন যে, তাঁরা যা আশা করেছিলেন, অতটা হয়নি। অশ্বিনরা নাকি ভেবেছিলেন রবিবারই পাঁচ-ছ’টা তুলে খেলা মোটামুটি শেষ করে দেবেন। যুদ্ধের পঞ্চম দিন তখন শুধুই পড়ে থাকবে নিয়মরক্ষার দাবিতে। কিন্তু অশ্বিনদের এত দুঃখের কোনও কারণ নেই। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে কেন উইলিয়ামসন নেই। রস টেলর জঘন্য রান আউট। মার্টিন গাপ্টিল তো অশ্বিনের প্রথম বলেই গেলেন। প্রথম ইনিংসে ভাল খেলে যাওয়া টম লাথাম— তিনিও ‘বাপি বাড়ি যা’।
স্পিনটা তা হলে খেলবেন কে? তা-ও ঘাড়ে ৪৩৪ রানের অতিকায় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে? এখনও ৩৪১ রান বাকি। নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং-রাজকোষে পড়ে মোটে ছ’উইকেট। পঞ্চম দিন অশ্বিন-জাডেজার ‘অত্যাচার’ সামলে নিউজিল্যান্ডের জেতা আর লিওনেল মেসির বাটা স্পোর্টস ক্লাবে সই করা একই ব্যাপার, একই দুরাশা। সফরকারীরা বরং টেস্ট বাঁচিয়ে ফেললেই অলৌকিক হবে।
পাঁচশো টেস্টের উৎসবের শেষটা কত ভাল ভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার প্রস্তুতি বরং রবিবার দিনভর চলতে দেখা গেল। প্রেসবক্সে এসে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন কি না স্বয়ং কপিল দেব! উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার ডিরেক্টর রাজীব শুক্লকে জিজ্ঞেস করছেন, ম্যান অব দ্য ম্যাচের জন্য উপহার হিসেবে গাড়ি আছে দেখছি। তা এত লোক যে এসেছে, আজ এঁদের কী উপহার দেওয়ার কথা ভাবছেন?
পুরোটাই যেন ক্রিকেটের বিজয়া-দশমীর প্রস্তুতি। পাঁচশোতম টেস্টের স্মৃতিকে আরও মধুর রেখে দেওয়া। মাঠে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে যেন কারও কোনও আগ্রহ নেই। সবাই যেন জানে, কী হবে। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে শেষ উৎসবের। সোমবারই তো শেষ পাঁচশোতম টেস্ট। সবাই হিসেব করছে যে যার মতো, উত্তর খুঁজছে মাত্র একটা প্রশ্নের।
কিউয়ি তুমি আজ বাঁচবে কতক্ষণ?
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৩১৮
দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১৫৯-১)
বিজয় এলবিডব্লিউ স্যান্টনার ৭৬
পূজারা ক টেলর বো সোধি ৭৮
বিরাট ক সোধি বো ক্রেগ ১৮
রাহানে ক টেলর বো স্যান্টনার ৪০
রোহিত ন.আ. ৬৮
জাডেজা ন.আ. ৫০
অতিরিক্ত ৯, মোট ৩৭৭-৫ ডিঃ।
পতন: ৫২, ১৮৫, ২১৪, ২২৮, ২৭৭।
বোলিং: বোল্ট ৯-০-৩৪-০, স্যান্টনার ৩২.২-১১-৭৯-২, ক্রেগ ২৩-৩-৮০-১, ওয়্যাগনার ১৬-৫-৫২-০, সোধি ২০-২-৯৯-২, গাপ্টিল ৪-০-১৭-০, উইলিয়ামসন ৩-০-৭-০।
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস: ২৬২
দ্বিতীয় ইনিংস
লাথাম এলবিডব্লিউ অশ্বিন ২
গাপ্টিল ক বিজয় বো অশ্বিন ০
উইলিয়ামসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ২৫
টেলর রান আউট ১৭
রঙ্কি ন.আ. ৩৮
স্যান্টনার ন.আ. ৮
অতিরিক্ত ৩, মোট ৯৩-৪।
পতন: ২, ৩, ৪৩, ৫৬।
বোলিং: শামি ৪-২-৬-০, অশ্বিন ১৬-১-৬৮-৩, জাডেজা ১৪-১০-৮-০, উমেশ ৩-০-৯-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy