বিরাট কোহালি— ৫০.০৭!
সংখ্যাটা দেখলে কেউ কেউ একটু চমকে উঠতে পারেন। ডেসিমেলে আবার রান হয় নাকি? ঠিকই। রান নয় এটা। ৫০.০৭, এটা এখন বিরাট কোহালির টেস্ট গড়!
ভাবলে অবাকই লাগে। মাত্র আঠাশ বছর বয়স ওর। অথচ নিজের টেস্ট গড় কোথায় নিয়ে গেল। টেস্ট গড় পঞ্চাশে নিয়ে যেতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে যায় ক্রিকেটারদের। আর কোহালি সেটা কত সহজে করে ফেলল। আমি তো বলব, আজকের পর কোহালি টেস্টের কিংবদন্তি ক্লাবেও ঢুকে গেল।
কিংবদন্তি ক্লাবে কোনও ক্রিকেটারকে রাখার আগে তিনটে ব্যাপার দেখা হয়। তার রান। সে কত বছর ধরে খেলছে। মানে টেস্টে তার হাজার দশেক রান আছে কি না। সে দশ-বারো বছর ধরে টানা খেলছে কি না। আর একটা ব্যাপার হল, গড়। কিন্তু একজন ক্রিকেটার কত রান করবে, কত বছর ধরে খেলবে, এ সব চটজলদি বলা যায় না। বরং চোখের সামনে গড়টা থাকে। ওটা দেখে নেওয়া যায়। আমরাও তো তাই করি। ভাল কোনও ক্রিকেটারের খোঁজখবর পেলে সবার আগে তার ব্যাটিং গ়ড়টা দেখি। সেখানে কোহালি যদি টেস্টে পঞ্চাশ গড়ের বেঞ্চমার্ক ছুঁয়ে ফেলে, বলব না তাকে কিংবদন্তি?
সুনীল গাওস্করের গড় দেখুন। গ্যারি সোবার্সের দেখুন। টেস্টে দু’জনেরই ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের উপরে। সোবার্সের তো ৫৮ ছুঁইছুঁই। আমরা দু’জনকেই গ্রেট ধরি। গাওস্কর-সোবার্সের রান বিরাটের এখনও ধরা বাকি। এখনও বয়স আছে। করেও ফেলবে। কিন্তু ফিফটি বেঞ্চমার্ক তো এখনই ছুঁয়ে ফেলল। মডার্ন গ্রেট কিন্তু বলা যায় ওকে। আসলে আধুনিক ক্রিকেটে ‘গ্রেট’ কাউকে তখনই বলা যায় যখন তিনটে ফর্ম্যাটেই সমান দুর্ধর্ষ হয়। বিরাটও তাই। দেখুন, রবিবার ও তাড়াতাড়ি আউট হতে পারে। পঞ্চাশ গড়ও তখন আর থাকবে না। পড়বে। কিন্তু এই যে একবার ও মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলল, এটা ওকে তাতাবে এখন থেকে। মাঠে নামলে মনে হতে থাকবে, সেঞ্চুরি করলে গড়টা ফের পঞ্চাশ হয়ে যাবে। কিংবা তার বেশি।
আর সত্যি বলতে কী, কোহালির টেস্ট গড় পঞ্চাশের নীচে যাওয়ারও বিশেষ সম্ভাবনা দেখছি না। দু’একটা ম্যাচে খারাপ খেললে গড় কমতে পারে, কিন্তু ও সব সাময়িক। পড়বে, আবার উঠবেও। আসলে কোহালি হল ব্লু চিপ কোম্পানির শেয়ারের মতো। যে শেয়ার কোনও দিন মার খাবে না। বরং বছর-বছর ভাল ডিভিডেন্ড দিয়ে যাবে। আত্মবিশ্বাস— সেটাকেও এখন অন্য পর্যায়ে নিয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। কারণ মোটিভেশন লেভেলটাই বেড়ে যাচ্ছে।
বিরাটের টেস্ট গড় পঞ্চাশ ছুঁয়ে যাওয়া নিয়ে এত কথা বললাম। একটা বলিনি। তা হল অধিনায়ক হিসেবে বিরাটের টেস্ট ব্যাটিং গড়। ওটা কিন্তু ৬৮। ক্যাপ্টেন্সি ওকে এমনিই আরও চার্জড করে দেয়। তার উপর এই কীর্তি ছোঁয়াটা যে কোথায় নিয়ে যাবে, তাই ভাবছি।
বোলারদের কথা ভেবে সত্যিই দুঃখ লাগছে!