এক দিকে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, ওয়েন রুনি, পল পোগবা, এডেন হ্যাজার্ড, সের্জেই আগেরো।
উল্টো দিকে লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, গ্যারেথ বেল, আঁতোয়া গ্রিজম্যান।
ডাগআউটে জোসে মোরিনহো, আন্তোনিও কন্তে, যুরগেন ক্লপ, পেপ গুয়ার্দিওলা। ও পাশে জিনেদিন জিদান, দিয়েগো সিমিওনে, লুইস এনরিকে।
ইপিএল বনাম লা লিগা ড্রিম টিমের ম্যাচ একটা হতে চলেছে নাকি? উত্তরটা হ্যাঁ এবং না। ম্যাচ একটা হচ্ছে ঠিকই। তবে সেটা মাঠে নয়। লড়াইটা হচ্ছে মাঠের বাইরে। যেখানে এঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে সরাসরি নামবেন না, কিন্তু লড়াইয়ের প্রধান চরিত্র এঁরাই।
চ্যালেঞ্জটা উল্টো দিকের জালে গোল ঢোকানো নয়। এই লড়াইয়ে লক্ষ্য একটাই— ভারতীয় বাজার দখল করা।
তারকার ঝলকানিতে লা লিগা এগিয়ে থাকলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ইপিএল যে দু’গোল দিয়ে বসে আছে, তা জানেন এবং মানছেন স্প্যানিশ ফুটবল কর্তারা। আর জানেন বলেই ইংলিশ ফুটবলের হাত থেকে ভারতীয় বাজার নিজেদের কব্জায় করতে মরিয়া তাঁরা।
যার জন্য মরসুমের এল ক্লাসিকোর টাইমিংটাও বদলে ফেলা হয়েছে। শুধু বদলানো বললে কিছুই বলা হবে না। ন্যু কাম্পে কোনও দিন যা হয়নি, তা এ বার হতে চলেছে। সূর্য ডোবার আগেই এ বার বেজে উঠবে ক্লাসিকো শুরুর বাঁশি!
লা লিগা টেলিভিশন সম্প্রচার এবং প্রোডাকশনের এরিয়া অডিও-ভিজুয়ালের ডিরেক্টর মেলচিওর সালা ডিনারে বসে জানালেন, এ বার ক্লাসিকোর সময় সত্যিই এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। মেলচিওর বলছিলেন, ‘‘এখনও সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করিনি। তবে আজ এটুকু আপনাকে বলে দিচ্ছি, ম্যাচ শুরু হবে মোটামুটি স্প্যানিশ সময়ে দুপুর সওয়া চারটে নাগাদ। ভারতীয় টিভি সম্প্রচারের হিসেবে যা প্রাইম টাইম।’’ আপাতত ডে-লাইট সেভিং টাইমের হিসাবে স্পেনের সঙ্গে ভারতীয় সময়ের পার্থক্য সাড়ে চার ঘণ্টা। অর্থাৎ ডিসেম্বরে মরসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ভারতীয় সময় ৮-৪৫ নাগাদ শুরু হওয়ার কথা সোনি সিক্সে।
কিন্তু আপনারা যে ভারতের কথা ভেবে ম্যাচের সময় এ ভাবে এগিয়ে আনছেন (লা লিগার বেশ কয়েকটা ম্যাচ ইতিমধ্যেই দুপুরে শুরু হয়েছে) তাতে ফুটবলাররা আপত্তি তুলছেন না? সালা বলছিলেন, ‘‘কিছু করার নেই। ইন্ডিয়ান মার্কেট এখন আমাদের কাছে বড় টার্গেট। সে ভাবেই আমরা ক্লাব এবং ফুটবলারদের সঙ্গে এ বার চুক্তি করেছি। লিগের বেশ কয়েকটা ম্যাচ বড় ক্লাবগুলোকে দুপুরের দিকে খেলতে হবে।’’
এল ক্লাসিকোকে সামনে রেখে ইপিএলের সঙ্গে সরাসরি টক্করে নেমে পড়ছে লা লিগা। যে দিন ক্লাসিকো হওয়ার কথা (৩রা ডিসেম্বর), সে দিন ভারতীয় সময় বিকেলে আবার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি বনাম চেলসি লড়াই। সে দিনই আঁচ পাওয়া যাবে ভিউয়ারশিপের এই টক্করে কে কোথায় দাঁড়িয়ে।
শুধু লা লিগা কেন, দেখা যাচ্ছে ভারতের বাজার ধরতে বার্সেলোনাও কম আগ্রহী নয়। ক্লাবের হিসেব মতো টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ভারতীয় ভক্তের র্যাঙ্কিং প্রথম পাঁচের মধ্যে। যা তারা আরও বাড়াতে চায়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আপনারা যদি এতই আগ্রহী হন, তা হলে প্রি সিজন ম্যাচ খেলতে একবার ভারতে যাচ্ছেন না কেন? বার্সেলোনা ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ বলছিলেন, ‘‘দেখুন, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা মজবুত করতে চাই। আমরা তো মুম্বইয়ে দুটো স্কুলও খুলেছি। প্রি সিজনও সুযোগ পেলে কেন খেলব না? তবে সময়টা সে ভাবে বার করতে হবে।’’
প্রি সিজন কোথায় খেলা হবে, সেটা ঠিক করার ব্যাপারে কোচের কতটা বক্তব্য থাকে? মানে ভারতে খেলতে যাওয়ার আগে আপনাদের কি লুইস এনরিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে? অনুমতি নিতে হবে? বার্সা প্রেসিডেন্টের কথায় পরিষ্কার, অনুমতি নেওয়া তো দূরঅস্ত, প্রি সিজন খেলার আগে কোচের সঙ্গে কথাও বলেন না তাঁরা। ‘‘আসলে কী জানেন, কোচেদের যদি জিজ্ঞেস করেন, তা হলে ওরা বলে দেবে প্রি সিজনের কোনও দরকারই নেই। এখানে প্র্যাকটিস করাটা বেশি ভাল। ঘটনা হল, প্রি সিজন খেলার ব্যাপারটা পুরোপুরি ক্লাবের এক্তিয়ার। ফ্যান বেসের কথা ভেবেও আমরা প্রি সিজন খেলার জায়গা ঠিক করি,’’ বলছেন বার্তোমেউ। তা হলে ভারতে গিয়ে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের খেলার সম্ভাবনা কতটা? বার্সা প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, ‘‘ব্যাপারটা আমাদের মাথায় আছে। আমরা যেতেই পারি ভারতে।’’
কিন্তু ঘটনা হল, এটা নিছকই কথার কথা। আসল কথাটা ফাঁস করলেন লা লিগা অডিও-ভিজুয়ালের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা। ‘‘বার্সেলোনাকে নিয়ে যেতে হলে বিশ লাখ ইউরো দিতে হবে। সেটা কি আপনারা দিতে পারবেন?’’
প্রশ্ন সেটাই। মেসি-নেইমারদের দেখার জন্য আমাদের ফুটবল ফেডারেশন কি এই টাকাটা (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় পনেরো কোটি টাকা) খরচ করতে তৈরি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy