Advertisement
১৪ জুন ২০২৪
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

আমনা এখন দলের সম্পদ

আমনায় মজে ছিল বুধবারের লাল-হলুদ গ্যালারি। সেখান থেকে নেমে আসার সময় বিকাশ পাঁজির অবশ্য মনে পড়ে যায় আট-নয়ের দশকের মাঝমাঠ কাঁপানো প্রয়াত সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথা।

যুগলবন্দি: দুই গোলদাতা রালতে ও আমনা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যুগলবন্দি: দুই গোলদাতা রালতে ও আমনা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪৩
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ৩ : সাদার্ন সমিতি ০

মহম্মদ আল আমনার খেলার ধরনটা ঠিক কার মতো?

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বল ধরা-ছাড়া অনেকটা মজিদ বাসকার ঘরানার। মজিদ ছিল স্কোরিং জোনে অনবদ্য। আমনার সেটা নেই। ও ভাল পাসার।’’

আমনায় মজে ছিল বুধবারের লাল-হলুদ গ্যালারি। সেখান থেকে নেমে আসার সময় বিকাশ পাঁজির অবশ্য মনে পড়ে যায় আট-নয়ের দশকের মাঝমাঠ কাঁপানো প্রয়াত সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথা। ‘‘আমনার খেলাটা অনেকটা সুদীপের মতো। তবে ও আসলে স্কিমার। ভাল স্ন্যাচার নয়।’’

ম্যাচের সেরা হওয়া আমনাকে অবশ্য কারও সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নন তাঁর কোচ খালিদ জামিল। ‘‘অনেকে বলছে ও ডগলাসের মতো। ডগলাসের বিরুদ্ধে আমি খেলেছি। অনেক ডিফেন্সিভ খেলত। আমনার অ্যাটাকিং কোয়ালিটি অনেক ভাল। আমনা আমনার মতো।’’

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে এসেছেন ছয় বছর আগে। আলেপ্পো শহরে তখন সবে গৃহযুদ্ধের দামামা বেজেছে। দেশ ছেড়ে ইরাক, ইরান, মালয়েশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশের ক্লাবে খেলেছেন। নিজের দেশের দলে ডাক পেলেও অবশ্য ফিরে যাননি। মৃত্যুর ভয়ে দেশ ছাড়লেও ফুটবল-যুদ্ধের ময়দানে এখনও আমনা অক্লান্ত সৈনিক। তার সুফল পেতে শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল।

উইলিস প্লাজা জঘন্য ফর্মে। তাঁর স্বদেশীয় স্টপার মিচেল কার্লাইলের ধারাবাহিকতা এখনকার আকাশের মতো। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি। একটি ম্যাচে জোড়া গোল করার পর এ দিন অবনমনের দিকে পা বাড়ানো সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে তিনি যা খেললেন, তাতে লাল-হলুদ গ্যালারির রক্তচাপ বাড়তে বাধ্য। আর সেখানেই ব্যতিক্রম সিরিয়ার তারকা। চৌত্রিশের কোটায় বয়স নিয়েও আপাতত মশাল বাহিনীর পিভট বা হৃৎপিন্ড কিন্তু তিনি-ই। একটু ঝুঁকে চলাফেরা। সামান্য শ্লথও। হয়তো বৃষ্টি ভেজা মাঠের জন্য। তবুও তিনটি জায়গায় আমনা অসাধারণ। পাসিং দক্ষতা, ধারাবাহিকতা এবং মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। ‘‘আমি তো এই টিমটার মধ্যে সবথেকে অভিজ্ঞ। প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। আমাকে তো মাঠে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবেই,’’ বলার মধ্যে কোনও জড়তা নেই। যেমন সংকোচ নেই এটা বলায় যে, ‘‘গোল করেছি ভাল লাগছে। সবারই ভাল লাগে। কিন্তু আমার প্রধান কাজ গোলের পাস বাড়ানো।’’

হেমন্ত ডোরার সাদার্ন সমিতির হাল খুবই খারাপ। তাঁর দলের দুই বিদেশি আবু বক্কর আর কোকো সাকিবু-র সুনাম আছে পাড়ায় পাড়ায় খেপ খেলার ব্যাপারে। কিন্তু কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে এঁরা অচল আধুলি।

সেই নির্বিষ সাদার্নের বিরুদ্ধে খালিদ জামিলের দল অনায়াস জিতল বটে, তবে তা ঝকঝকে বা নিখুঁত নয়। তা সত্ত্বেও গ্যালারি ভর্তি দর্শক আমনার খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। আরও দুটো বিনোদনের জিনিস এ দিন দেখেছে গ্যালারি। এক) দুটো ভাল গোল। একটি প্রায় পঁচিশ গজ বল টেনে নিয়ে গিয়ে লালডানামাইয়া রালতের। অন্যটি রাইট ব্যাক সামাদ আলি মল্লিকের উইং ধরে উঠে গিয়ে। দুই) গুরবিন্দর সিংহ-আবু বক্করদের গুঁতোগুতি সামনে দাঁড়িয়ে দেখার পরও রেফারি দীপু রায়ের নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা। যে জন্য মাঠে পড়ল জলের বোতল, ইট।

চার ম্যাচে ১৪ গোল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল চলছে তরতরিয়ে। তা কিন্তু নয়। বেশ কিছু জায়গায় দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে রক্ষণ সংগঠন এবং সেট পিসে। খালিদ অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, ‘‘অনুশীলন করে করে ভুল শোধরাতে হবে।’’ আই লিগ জয়ী কোচ এটা করতে পারলেই মশালের আগুন বাড়বে। না হলে, আটে আট করার রাস্তায় কিন্তু বিঁধবে কাঁটা।

ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, সামাদ আলি মল্লিক, কার্লাইল মিচেল, গুরবিন্দর সিংহ, লালরাম চুলোভা, লালডানামাইয়া রালতে, প্রকাশ সরকার (কেভিন লোবো), ব্র্যান্ডন (সুরাবুদ্দিন), আল আমনা, ভিপি সুহেইর (গ্যাব্রিয়েল), উইলিস প্লাজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE