ক্ষিপ্র: চেলসির রক্ষণ ভেঙে এগোচ্ছেন লুকাকু। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ২ • চেলসি ১
লড়াইটা ছিল ফুটবল বিশ্বের দুই ধুরন্ধর ম্যানেজারের মধ্যে। জোসে মোরিনহো এবং আন্তোনিও কন্তের।
এমনিতেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসি বনাম ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ মানেই একটা উত্তেজনায় পরিপূর্ণ খেলা। তার উপর দু’দলের দুই ম্যানেজারের নাম যদি হয়, জোসে মোরিনহো এবং আন্তোনিও কন্তে, তা হলে তা আরও উত্তেজক হয়ে উঠতে বাধ্য। সেই উত্তেজনার আঁচ পেতেই ম্যাচটা দেখছিলাম টিভিতে।
গত বছর থেকেই দু’জনের বাগযুদ্ধ শুরু। যা চরম উত্তেজনার জায়গায় পৌঁছে যায়, নতুন বছরে এসে। যখন মোরিনহো-র সাইড লাইনের ধারে দৌড়ঝাঁপ দেখে কন্তে ওকে বলেছিল ‘জোকার’। জবাবে মোরিনহোও টেনে আনে, জুভেন্তাসের কোচ থাকার সময় কন্তের ম্যাচ গড়াপেটায় নাম জড়িয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ।
মজার ব্যাপার এটাই যে এই ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে চতুর ম্যানেজারের নাম জোসে মোরিনহো। কন্তে দলবল নিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পা দেওয়ার পর থেকেই ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ম্যান ইউ ম্যানেজার। আমার মতে ম্যাচের আগে যা ছিল মোরিনহোর অন্যতম রণকৌশল। ম্যাচ শুরুর আগেও দেখলাম মোরিনহো গিয়ে হাত মিলিয়ে এল কন্তের সঙ্গে।
ম্যাচের আগে টিভি-তে মোরিনহো-কন্তে দ্বৈরথ নিয়ে একটা পরিসংখ্যান চোখে পড়ল। আন্তোনিও কন্তে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোরিনহোর মুখোমুখি হয়েছে চার বার। যার মধ্যে তিন বারই জিতেছে কন্তে। এক বার মাত্র মোরিনহো। কাজেই এ বার ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মোরিনহো কী চাল দেয়, সেটা দেখতে মুখিয়ে ছিলাম।
ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বুঝলাম, ম্যান ইউ ম্যানেজার এ দিন তার যুযুধান প্রতিপক্ষ কন্তের বিরদ্ধে পরিসংখ্যানটা ৩-২ করতে দু’টো রাস্তা বেছেছিল। এক, চেলসি নিজেদের অর্ধে যতই পাস খেলুক, কোনও ট্যাকলে যাওয়ার দরকার নেই। ট্যাকল হবে চেলসি যখন ম্যান ইউ অর্ধে আসবে। নেমানইয়া মাতিচ-দের সেটাই করতে দেখলাম গোটা ম্যাচে। এটা করে মোরিনহো শুরুতেই কন্তের দলকে তাদের নিজেদের অর্ধে ঠেলে দিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, মোরিনহোর ট্যাকটিক্স ছিল ক্লান্ত চেলসির বিরুদ্ধে শেষের মিনিট কুড়ি একটা ঝড় তোলার। সেই ঝড়ের ফসল লুকাকুর উদ্যোগে শুরু হওয়া আক্রমণ থেকে হেডে করা লিনগার্ড-এর জয়ের গোল। এই সময় ম্যান ইউ পরিকল্পনামাফিক গতিটা বাড়িয়ে কোণঠাসা করে ফেলেছিল চেলসি-কে। তার সঙ্গে চেলসি মাঝমাঠে গাদাগুচ্ছের মিস পাস পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচে ফিরতে সাহায্য করে মোরিনহোর দলকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের ম্যাচে সেভিয়ার-র বিরুদ্ধে যে দল নামিয়য়েছিল মোরিনহো, এ দিন সেই দলে দু’টি পরিবর্তন করেছিল। আন্দের এরেরা-র জায়গায় পোগবা এবং হুয়ান মাতার পরিবর্তে অ্যান্টনি মার্শিয়াল। অন্য দিকে, ৩-৪-২-১ ফর্মেশনে কন্তেও এ দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল, সেই দলে দু’টি বদল করে। ফ্যাব্রেগাস-এর জায়গায় শুরু থেকেই মিডফিল্ডে ড্রিঙ্কওয়াটার। আর পেদ্রো-র বদলে আলভারো মোরাতা।
কন্তের রণনীতি ছিল প্রতি-আক্রমণে দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণ শানাবে উইলিয়ান আর এডেন অ্যাজার। আর তাদের বাড়ানো বল থেকে গোলের দরজা খুলবে আলভারো মোরাতা। দ্বিতীয়ার্ধে যখন ম্যাচটা ১-২ পিছিয়ে চেলসি তখন মোরাতা প্রায় গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু রেফারি কেন গোল দিল না তা টিভিতে বোঝা যায়নি। প্রথমার্ধে কিন্তু চেলসিই ম্যাচটা শুরু করেছিল দুরন্ত গতিতে। যার সঙ্গে সামাল দিতে পারছিল না মাতিচ, পোগবা-দের মাঝমাঠ। এই সময়েই উইলিয়ানের গোলটা। তবে আমার মতে, গোলটা বাঁচাতে পারত দাভিদ দা হিয়া।
তবে এই ম্যাচে আমার চোখ টানল রোমেলু লুকাকু। এ দিন ম্যান ইউ সমতা ফেরাল ওর দুর্দান্ত গোলেই। গোলটার সময় চেলসি রক্ষণ ভুল করেছিল ওকে ‘মার্কিং’ করতে। এভার্টন থেকে আসার পরে এই মরসুমে প্রথম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম আটে থাকা কোনও দলের সঙ্গে ও গোল পেল। কিন্তু মোরিনহোর নির্দেশ মেনে ও যে ভাবে দ্বিতীয়ার্ধে বল কখনও ধরছিল। কখনও গতি বাড়িয়ে শরীরের শক্তি কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্ত করছিল চেলসি রক্ষণকে তা প্রশংসার যোগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy