Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আইসিসির সিদ্ধান্তে হতাশ মাশরাফি ভেঙে পড়লেন কান্নায়

হাঁটুতে একবার, দু’বার নয় পাঁচ পাঁচবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। প্রতিবারই ভয়ানক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে মাশরাফিকে। কষ্টটা আরও বড় হয়েছে যখন চোটের জন্য বার বার দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। তবে ক্রিকেট জীবনের শুরু থেকে এসব যন্ত্রণা নিত্যসঙ্গী বলে মাশরাফিকে কাঁদতে দেখেনি কেউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ১৫:৫৬
Share: Save:

হাঁটুতে একবার, দু’বার নয় পাঁচ পাঁচবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। প্রতিবারই ভয়ানক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে মাশরাফিকে। কষ্টটা আরও বড় হয়েছে যখন চোটের জন্য বার বার দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। তবে ক্রিকেট জীবনের শুরু থেকে এসব যন্ত্রণা নিত্যসঙ্গী বলে মাশরাফিকে কাঁদতে দেখেনি কেউ। মিডিয়ার সামনে কেঁদেছে মাশরাফি এই নিয়ে দু’বার। প্রথমবার ৫ বছর আগে। ২০১১ বিশ্বকাপে ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষনার পর যখন নিজের

নাম না দেখে ভেঙে পড়েছিলেন। রবিবার কাঁদলেন তাসকিনের জন্য। আগের দিন অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের রিপোর্টে নিষিদ্ধ বাংলাদেশের ২ বোলার তাসকিন ও আরাফাত সানির বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে সুপার টেনের ম্যাচকে সামনে রেখে আইসিসির এই রায়টি মেনে নিতে পারছেন না মাশরাফি। আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না মাশরাফি। তবে চেন্নাইয়ের রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে তাসকিনের বায়োমেকানিক্স পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মাশরাফি। গত ৯ মার্চ ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে একটিও বাউন্সার দেননি তাসকিন। ওই ম্যাচের কোনও বলই নাকি আইসিসি’র বোলিং নিয়মের লঙ্ঘন করেনি। ১৫ মার্চের পরীক্ষায় মাত্র ৩-৪ মিনিটের মধ্যে তাসকিনকে কেন ৯টি
ডেলিভারির মধ্যে তিনটি বাউন্সার দিতে হল? পরীক্ষাগারের রিপোর্টে ওই তিনটি বলেই খুঁত ধরেছে আইসিসি! তবে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় পদ্ধতিগত ত্রুটি ধরা পড়েছে মাশরাফির চোখেও। এটাকে একটা
ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন মাশরাফি। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচকে সামনে রেখে সাংবাদিক সম্মেলন জুড়ে মাশরাফিকে ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নের মুখেই পড়তে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে এতো বড় ধাক্কা! তাই আইসিসি’র এই রায়কে অন্যায় বলে ন্যায্য বিচার চেয়েছেন মাশরাফি, ‘‘যে ম্যাচের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠানো হয়েছে, ওই ম্যাচটার সঙ্গে মিলিয়ে যেই সব পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, সেখানে কিন্তু ওই ম্যাচের একটা বলও অবৈধ ছিল না। এখন কথা হচ্ছে ম্যাচে বোলিংয়ে যেখানে অবৈধ অ্যাকশন খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেখানে কিভাবে তাকে সাসপেন্ড করা হলো? টেস্ট দেওয়ার সময় কিছু সমস্যা হয়েছে। তার ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে কোনও সমস্যা দেখা যায়নি। অনেকেই তো বাউন্সার ছাড়া খেলছে। যে ম্যাচটার উপর ভিত্তি করে তাকে পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে, ওখানে তার কোনও সমস্যা না পাওয়ার পরও কি তাকে আটকে রাখা যায়?’’

আরাফাত সানি বয়সে মাশরাফির চেয়ে তিন বছরের ছোট, কিন্তু তাসকিন তো ১২ বছরের ছোট। গত ১৫ মাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিস্ময়কর উন্থান পর্বে যে ছেলেটি মাশরাফির বোলিং আক্রমনের তুরুপের তাস, বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অপ্রত্যাশিত সাফল্যে যার অবদান অসাধারণ, পুরো দলকে মাতিয়ে রাখা ২০ বছরের ছেলেটির উপর এতো নির্দয় হলো কিভাবে আইসিসি? তাসকিনের বিদায়কে তাই মেনে নিতে পারছেন না মাশরাফি, ‘‘দু’টি ছেলে আমাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। এই ছেলে দু’টিকে এই মূহুর্তে দেশে ফিরে যেতে হবে। হয়ত বা সানিরটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু তাসকিনের বোলিং বৈধ, এই বিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে আছে। তারপরও এখন তাকে চলে যেতে হচ্ছে। জিনিসটা এখন চাইলেও ভুলে থাকা কঠিন।’’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রথম একাদশের দুই বোলারকে হারিয়ে পুরো দলই যে ভেঙ্গে পড়েছে। চাপা কান্না কন্ঠে তা জানিয়েছেন মাশরাফি, ‘‘আমার জীবন দিয়ে অনেক কিছু দেখেছি। আমার জন্য হয়ত এটা মেনে নেওয়া অনেক
সহজ। এখন কথা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিবান খেলোয়াড় তাসকিনকে নিয়ে। সর্বশেষ ৮টি টুয়েন্টি২০ ম্যাচে তার বোলিংয়ের কথা ভাবুন। আমরা যে সব ম্যাচে জিতেছি, প্রতিটি ম্যাচে ওর প্রথম ওভারটাই আমাদেরকে ছন্দ এনে
দিয়েছে। যে ছেলেটি কিনা পরের ১০ বছর বাংলাদেশ দেশকে সার্ভিস দেবে। ঘরের দু’জন ছেলের যদি সমস্যা হয়, আপনি কোনও কাজই ভালভাবে করতে পারবেন না। সেই উদ্যমটা আর পাবেন না। আমাদের কাছে জিনিসটা এখন ওই রকম।’’

কঠিন হৃদয়ের মানুষ হয়েও সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে সামলাতে পারেননি মাশরাফি। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে টিম হোটেলের উদ্দেশ্যে ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনের সঙ্গে গাড়ীতে ওঠার সময় আবেগকে
চেপে রাখতে পারেননি। সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি’র কাছে ন্যায্য বিচার চেয়েছেন মাশরাফি, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে। আমরা বিসিবিকে বলতে পারি। বিসিবি যেভাবেই হোক আইসিসির সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। আইসিসি সবসময় তরুণ ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করে। তাসকিন ন্যায্য বিচার পাবে, আইসিসি’র কাছ থেকে এটাই আশা করছি।’’

আরও খবর

সানি-তাসকিনের পরিবর্ত হিসাবে আনা হচ্ছে সাকলাইন-শুভাগতকে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE