Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

‘শুঁয়োপোকা থেকে মেহুলি এখন প্রজাপতি’

এ এক নতুন মেহুলি। ওর নিজের আত্মবিশ্বাসটাই ফিরে এসেছে। ও জানে, শুটার হতে পারবে। বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ও স্পেশাল। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কোচ জয়দীপ কর্মকারের সঙ্গে মেহুলি ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

কোচ জয়দীপ কর্মকারের সঙ্গে মেহুলি ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ২০:০৩
Share: Save:

অলিম্পিক্সে শেষ মুহূর্তে ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাঁর। চতুর্থ হয়ে থামতে হয়েছিল। আর সোমবার তাঁর এক নম্বর ছাত্রী মেহুলি ঘোষের সোনা হাতছাড়া হয়ে গেল, ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য। সেটাই কষ্ট দিচ্ছে তাঁকে। ছাত্রীর বড় অ্যাচিভমেন্ট তো বটেই! কিন্তু তাঁর মতে, এটা কিছুই না। সবে তো শুরু। ছাত্রী মেহুলিকে নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বললেন তাঁর কোচ জয়দীপ কর্মকার।

মেহুলির সাফল্যে কতটা ভাললাগা কাজ করেছে?
জয়দীপ: এই বয়সে বড় অ্যাচিভমেন্ট। আমি খুশি। কিন্তু, আপ্লুত নই। এটা একটা স্টেপিং স্টোন।

তা হলে! কী হলে আপ্লুত হতেন?
জয়দীপ:
আসল তো অলিম্পিক্স। ওটাই আসল শুরু। তার পর সেটা ধরে রাখা।

মেহুলিকে নিয়ে কমনওয়েলথে কী প্রত্যাশা ছিল?
জয়দীপ: কিছু না। আমি পদকের লক্ষ্যে নিজে কখনও নামিনি। ওকেও সেটাই শিখিয়েছি।

আরও পড়ুন
কমনওয়েলথ শুটিংয়ে মেহুলির রুপো, অপূর্বীর ব্রোঞ্জ

তা হলে লক্ষ্যটা কী হবে?
জয়দীপ: লক্ষ্য হবে নিজের সেরাটা দেওয়ার। উজাড় করে দিতে পারছে কি না, সেটাই আসল। সেটা পারলেই পদক, সাফল্য, নাম— সব আসবে। প্রত্যাশা রাখলেই চাপ বাড়বে।

কমনওয়েলথে নামার আগে ওকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন?
জয়দীপ: ওকে বলেছিলাম, নিজের বেসিকের দিকে খেয়াল রাখতে। চাপমুক্ত হওয়ার কথা যেন না ভাবে। চাপ থাকবেই, আর সেই চাপ নিয়েই নিজের সেরাটা দিতে হবে।

ওর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?
জয়দীপ: নার্ভাস ছিল। নার্ভাস থাকাটা অবশ্য ভাল। তার মানে ও খেলাটার মধ্যে রয়েছে।

খেলাটা নিশ্চয়ই দেখেছেন?
জয়দীপ: হ্যাঁ, টিভির সামনেই বসেছিলাম। গেমস রেকর্ড করে জিতেছে। অল্পের জন্য সোনাটা হাতছাড়া হল। ওর নিজের ভুল বোঝার জন্যই হল।

ঠিক কী হয়েছিল?
জয়দীপ: ও শেষ শুটে ১০.৯ করেছিল। তখন গ্যালারিতে সবাই হাততালি দিতে শুরু করে। গ্যালারির উচ্ছ্বাস দেখে ও ভেবে নেয় ও জিতে গিয়েছে। কিন্তু পয়েন্ট এক হয়ে গিয়েছিল। ও বুঝতেই পারেনি। ও জায়গা ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছিল। যখন বুঝতে পারে তত ক্ষণে অনেকটাই সময় নষ্ট হয়েছে। আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে নিজেকে তৈরি করতে মিনিট দুয়েক সময় লাগার কথা। ওকে সেটা পাঁচ সেকেন্ডে করতে হয়েছিল। আর সেই সময় ওর মুখের সামনেও একটা ক্যামেরা চলে আসায় মনোসংযোগ নষ্ট হয়ে যায়।

মেহুলি ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

সেই সময় আপনার মনের অবস্থা কী হয়েছিল?
জয়দীপ: আমি কলকাতায় টিভির সামনে বসে চিৎকার করছিলাম উত্তেজনায়— এখনও গেম শেষ হয়নি। ফিরে যাও। এতটাই উত্তেজিত ছিলাম। ও অবশ্য পরে আমাকে ‘সরি’ বলেছে।

বাংলায় কি এখন মেহুলিই সেরা?
জয়দীপ: একদম। শুধু শুটিংয়ে নয়, মেহুলি কিন্তু সব খেলায় বাঙালিদের মধ্যে এখন সেরা। ওর বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ৬। এশিয়া র‌্যাঙ্কিং ৩। যেটা বাংলার কোনও খেলায় কারও নেই।

মেহুলি তো এক সময় ভেবেছিল খেলা ছেড়ে দেবে। সেখান থেকে ওকে কী করে ফেরালেন?
জয়দীপ: আসলে ও ওই অবস্থাতেই আমার কাছে এসেছিল। আগে যে অ্যাকাডেমিতে ছিল, সেখানে ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। ওকে বলা হয় ওর শুটিং হবে না। ৬-৮ মাস লেগেছিল ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। তার পর শুটিং শুরু করি।

কতটা বদল হল মেহুলির?
জয়দীপ: এ এক নতুন মেহুলি। ওর নিজের আত্মবিশ্বাসটাই ফিরে এসেছে। ও জানে, শুটার হতে পারবে। বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ও স্পেশাল। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন ও খুব পরিণত। এই বয়সে আমি এতটা পরিণত ছিলাম না। শুঁয়োপোকা থেকে মেহুলি এখন প্রজাপতি হয়ে গিয়েছে। এতটাই বদল এসেছে।

ওর সামনে এখন আর কী কী রয়েছে?
জয়দীপ: কমনওয়েলথ থেকে ফিরেই বিশ্বকাপ। তার পর প্রায় গায়ে গায়েই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আর এশিয়ান গেমস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE