Advertisement
E-Paper

কোপায় হেরেই মেক্সিট

দুর্ভাগ্যজনক! অপ্রত্যাশিতও। শতবার্ষিকী কোপার ফাইনালে পেনাল্টি এবং কাপ হারিয়ে ১০ নম্বর লেখা নীল-সাদা জার্সিটাই বরাবরের মতো তুলে রাখার সিদ্ধান্তটা মানতে পারলাম না। লিওনেল অঁদ্রে মেসি, আমি দুঃখিত। একজন প্রাক্তন ফুটবলার এবং ফুটবল-শিল্পের অন্ধ ভক্ত হিসেবে যতটা দুঃখ পাওয়া যায়।

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০৪:০৯
এ বারও অধরা কোপা। ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিসের পরে মেসি। ছবি: এএফপি

এ বারও অধরা কোপা। ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিসের পরে মেসি। ছবি: এএফপি

দুর্ভাগ্যজনক! অপ্রত্যাশিতও।

শতবার্ষিকী কোপার ফাইনালে পেনাল্টি এবং কাপ হারিয়ে ১০ নম্বর লেখা নীল-সাদা জার্সিটাই বরাবরের মতো তুলে রাখার সিদ্ধান্তটা মানতে পারলাম না। লিওনেল অঁদ্রে মেসি, আমি দুঃখিত। একজন প্রাক্তন ফুটবলার এবং ফুটবল-শিল্পের অন্ধ ভক্ত হিসেবে যতটা দুঃখ পাওয়া যায়।

পরপর দু’বার কোপার ফাইনালে উঠেও হার। টাইব্রেকারে দেশের হয়ে প্রথম শট নিতে এসে গোল মিস করে দলকে চাপে ফেলে দেওয়া। এবং শেষ পর্যন্ত হার। মানলাম, হতাশা থাকবেই। কান্নাও। শূন্য দৃষ্টি নিয়ে, কোটি সমর্থকের বিদ্রুপ আর গালাগালি শুনতে শুনতে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করবে রাগে। ক্ষোভে। মনে হবে, কেন পারলাম না?

হতে পারে। ফুটবলের অঙ্গ এটাও, সেটা তো মেসির অজানা নয়। আমারও এ রকম হয়েছে কত বার। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পেনাল্টি মিস করার তালিকায় পেলে, ডি স্টিফানো, জিকো, প্লাতিনি, মারাদোনা, রবার্তো বাজ্জো— কে নেই! হারের পরে কে কাঁদেননি? কে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেননি? ফুটবল বিশ্বে এমন কেউ আছেন, যিনি সব পেনাল্টিতে গোল করেছেন? তা হলে মেসি হঠাৎ ব্যতিক্রম হল কেন?

এ দিন মেসি যখন পেনাল্টিটা মারতে যাচ্ছিল, তখনই মনে হয়েছিল, হতাশায় ভুগতে ভুগতে হেঁটে আসছে! টাইব্রেকারে দেশের হয়ে প্রথম শটটা নিতে এল ও। তার আগের কিকটা মিস করেছে চিলি। ফলে ও গোল পেলে মানসিক ভাবে অনেক এগিয়ে থাকত আর্জেন্তিনা। কিন্তু ও এত খারাপ মারল বলটা! আর হেরে গিয়েই সটান অবসর! ভুল। একেবারে অপেশাদারি সিদ্ধান্ত। ২০১৮-র রাশিয়া বিশ্বকাপটা আর্জেন্তিনার জার্সিতে খেলে শেষ করতে পারত।

এ ভাবে চলে গেলে প্রশ্ন উঠবেই। উঠছেও। অনেকেই বলছেন, সামনে রাশিয়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরপর ম্যাচ রয়েছে মেসির দেশের। গ্রুপে এখন আর্জেন্তিনা রয়েছে তিন নম্বরে। উরুগুয়ে সবার উপরে। পরের ম্যাচগুলো তাই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে মরিয়া হয়ে খেলতে গিয়ে চোট লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্লাবের হয়ে খেলায় সমস্যা হবে। সে জন্যই তড়িঘড়ি এই অবসরের সিদ্ধান্ত। ক্লাবে তো অনেক টাকা। দেশের হয়ে খেললে তা নেই। মেসির অবসরের কারণ অনেকেই এটা বলছেন।

তাই কি? এখন মাঝেমধ্যেই কথা ওঠে যে, এই প্রজন্মের প্লেয়াররা দেশের চেয়ে ক্লাবকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এবং সেটা বিপুল পরিমাণ টাকার জন্য। সে কারণেই ক্লাবের হয়ে দুরন্ত খেলা অনেক প্লেয়ারই দেশের জার্সিতে নিষ্প্রভ। মেসিও কি সেই দলেই পড়ে গেল? কেন জানি না, এটা মন থেকে মানতে পারছি না। ক্লাবের হয়ে খেলাই যদি শেষ কথা হয় বা কোনও ফুটবলারের মোক্ষ হয়, তা হলে আমরা বিশ্বকাপ, ইউরো, কোপা আমেরিকা নিয়ে এত হইচই করি কেন?

নিজের দীর্ঘ ফুটবল জীবনে মোহনবাগান এবং ভারতকে সমান গুরুত্ব দিতাম। দেশের হয়ে খেলার সময় কখনও পা বাঁচিয়ে খেলার কথা ভাবিনি। পেলেও তাই করেছেন। সাও পাওলো বা কসমসের হয়ে যেমন খেলতেন, ব্রাজিলের জার্সি গায়ে তার চেয়ে বেশি মরিয়া থাকতেন। মারাদোনাও তো নাপোলিকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। দেশকেও। দিয়েগোর সব সেরা গোল তো দেশের হয়েই। প্লাতিনিও তাই। সে কারণেই মেসির হঠাৎ অবসর নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠছে বা মিডিয়া ছড়াচ্ছে, তার সঙ্গে একমত নই আমি। হয়তো পুরনো জমানার লোক বলেই।

আবার অনেকের মত, মেসির এ ভাবে হঠাৎ দেশের জার্সি ছেড়ে ফেলার অন্যতম কারণ আর্জেন্তিনা দলে ওকে সঙ্গত করার মতো সতীর্থ কম। যা আছে বার্সেলোনায়। সেখানে সুয়ারেজ, নেইমার, ইনিয়েস্তা, বুসকেস্তসদের মতো সমমানের ফুটবলার অনেক। যাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে একটা ছন্দ তৈরি হয়ে গিয়েছে ওর। দেশের হয়ে যা একেবারেই নেই। মাসচেরানো ছাড়া বার্সার কেউই তো নেই এই টিমে। বায়ার্ন মিউনিখের প্রচুর ফুটবলার জার্মানি টিমে থাকায় মুলাররা যে সুবিধাটা পায়, মেসি তা পাচ্ছে না। সেটা আর পাওয়া সম্ভব নয় জেনেই এই সিদ্ধান্ত। হতেও পারে।

সোমবার সকালের কোপা ফাইনালে তো দেখলাম, চিলি নড়তেই দিল না মেসিকে। একেবারে নিখুঁত স্ট্র্যাটেজিতে। ওদের মিডফিল্ড ওকে বোতলবন্দি করে ফেলেছিল। সব দিন সবার সমান যায় না। ফুটবলার জীবনে একেকটা দিন যেন অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও কিছু করা যায় না, সেটা মানছি। কিন্তু তুমি তো মেসি। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ব্যালন ডি’ওর পাঁচটা তোমার বাড়িতে। তোমার সমসাময়িকরা সবাই তোমায় ঈর্ষা করে। তোমার কাছে সমর্থকদের চাহিদা তো থাকবেই। আর এমন দিনেই তো তুমি জ্বলে উঠবে। নিজে কাঁধে করে ম্যাচ জেতাবে। ট্রফি আনবে। যেটা করেছেন পেলে, মারাদোনা, প্লাতিনিরা। তুমি তো জিনিয়াস। পেনাল্টি মারার সময় তোমাকে হতাশা গ্রাস করবে কেন? তোমার দিকে তাকিয়ে সবাই। সেই তুমি এ ভাবে চলে যাবে? মানব কী করে!

তবে আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, হঠাৎই আবেগের বশে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে মেসি। পেনাল্টি মিস করে ট্রফি হারানোর পর চরম একটা দুঃখ গ্রাস করেছিল ওকে। তা থেকেই এই সাদা-নীল জার্সি ছেড়ে যাওয়া। কেন জানি না মনে হচ্ছে, ছেলেটা আজ না হোক কাল মত পরিবর্তন করবে। কারণ মেসিরা চলে যাওয়া মানে ফুটবল-শিল্পের ক্ষতি। ওদের এ ভাবে অবসর নেওয়াটা তাই মেনে নেওয়া যায় না।

ফিরে এসো মেসি। ২০১৮ বিশ্বকাপ জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবে না? তা হলে তুমি কীসের জিনিয়াস?

Chuni Goswami come back Lionel Messi Mexit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy