মান রাখল বুকেনিয়ার হেড। শনিবার বারাসতে।
আইজল- ১ (কামো)
ইস্টবেঙ্গল-১ (বুকেনিয়া)
কপালে জুড়ে টিপ। হাতে পতাকা। মাথায় রঙিন টুপি। মুখে স্লোগান।
শনিবার বিকেলের বারাসত স্টেডিয়াম চত্বর ঘুরলে মনে হবে যেন কোনও মেলা বসেছে। বাদাম-ঝালমুরি বিক্রেতা, ভেলপুরি-ফুচকার স্টল, বেলুনওয়ালা, ঘটিগরম— কী নেই সেখানে। আর আছে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের ঢল। যা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে একটু দূরেই চলা মধ্যমগ্রাম বইমেলাকেও!
আই লিগে প্রিয় ক্লাবের প্রথম ম্যাচ বলে কথা। তাই বোধহয় উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস ও আবেগের তুমুল ঝড় তুলেছিলেন লাল-হলুদ জনতা। সাত থেকে সত্তর কেউ বাদ নেই সেই ভিড়ে। সবাই বুঁদ নতুন স্বপ্নে। নতুন ভোরের আশায়। কিন্তু নিয়তির খাতায় যদি অন্য কিছু লেখা থাকে, তা হলে সেই লেখা কি কেউ বদলাতে পারে? পারে না। মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে সব উৎসব শেষ। ভাঙা মেলায় তখন শুধুই হাহাকার। এবং একগুচ্ছ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে চার দিকে। শুরুর আগুনটা অবশ্য ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল কোচ নিজেই লাগালেন। বললেন, ‘‘খুব ভাগ্যবান আমরা। এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেয়েছি সেটাই অনেক।’’
যে টিম তেরো বছরের আই লিগ ট্রফি-খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছে, সেই টিমের কোচ যদি প্রথম ম্যাচেই ভাগ্যের দোহাই দেন, তা হলে কী সেটা খুব ভাল বিজ্ঞাপন টিমের জন্য? সবে কিন্তু প্রথম ম্যাচটা হল, গোটা লিগ এখনও পড়ে!
ম্যাচটা শুরু হয়েছিল ঢাক-ঢোলের আওয়াজে। কিন্তু এমন জঘন্য খেলল মর্গ্যানের টিম যে, শেষ হল প্রবল হাহাকারে। ১৯ দিনের প্র্যাকটিসে কী ফর্মুলা আমদানি করেছেন, সেটা বোঝা গেল না গোটা নব্বই মিনিটে। উল্টে দেখে মনে হল, দলে কোনও ফিনিশারই নেই। যদিও প্রথম ম্যাচ। তবু টিমের দশ নম্বর জার্সিধারী ওয়েডসনকে র্যান্টি মার্টিন্স কিংবা চিডির পর্যায়ের লাগল না। পায়ে শট নেই। বল কন্ট্রোল, আহামরি নয়। সঠিক কোন পজিশনের ফুটবলার, বোঝা গেল না। বিপক্ষ ডিফেন্সে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কোয়ালিটি অন্তত প্রথম ম্যাচে চোখে পড়েনি ওয়েডসনের মধ্যে। মর্গ্যান বলছিলেন, ‘‘সবে তো শুরু। ওয়েডসন নতুন এসেছে। একটু সময় তো দিতে হবে।’’
উদ্বিগ্ন মর্গ্যান।
মর্গ্যান বলছেন ঠিকই, কিন্তু তেরো বছর সময়টাও তো কম নয়। কত অপেক্ষা করবেন সমর্থকরা? আর যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে সাম্প্রতিকে এক বার আই লিগ ট্রফি ঢুকে পড়েছে সেখানে কত আর ধৈর্য ধরা সম্ভব? ওয়েডসন একা নন। টিমের ডিফেন্স নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে মর্গ্যানকে নিয়েও। যে ১৯ দিনের প্র্যাকটিসে কী করালেন তিনি? প্রথম ম্যাচেই আত্মঘাতী গোল। আইজলের স্ট্রাইকার কামোর পা থেকে গুরবিন্দর সিংহ এমন ভাবে বল ক্লিয়ার করলেন যে সোজা নিজেদের জালেই বল ঢুকে গেল! স্টপার পজিশনে আনোয়ার-গুরবিন্দর কম্বিনেশনকে খুব জোরাল দেখাচ্ছে না। না হলে আইজলের মতো টিম যারা কাগজে-কলমে ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় অনেক দুর্বল, তারাও পাঁচ-ছ’টা গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলে? আইজল কোচ খালিদ জামিল বলছিলেন, ‘‘জিততে পারলে স্বপ্নের মতো শুরু হত।’’ স্বপ্নের মতো না হলেও, ঘরের টিমকে দারুণ চাপে রেখেছিল জামিলের টিম। পঁচাত্তর মিনিট আইজলের ছিল। শুধু শেষ পনেরো মিনিট ইস্টবেঙ্গলের। যেখানে একটা ভুল করল আইজল ডিফেন্স। আর তাতেই ‘ড্রিম ওভার’। সেট পিস থেকে বুকেনিয়ার গোলে কোনও রকমে মান বাঁচালেন মর্গ্যান। আইজল কোচ বলছিলেন, ‘‘মার্কিংয়ে ভুল করে ফেললাম। না হলে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতাম।’’
ওয়েডসন নজর কাড়তে না পারলেও, বুকেনিয়া নিশ্চয়ই উগা ওপারার কথা মনে করিয়ে দিলেন। নাইজিরিয়ান স্টপারের সঙ্গে চেহারাতেও অনেক মিল নতুন উগান্ডার স্টপারের। মাথায় টাক। লম্বা-চওড়া শরীরটাকেও দারুণ ব্যবহার করতে পারেন। আর হেড? ওপারার মতোই তীক্ষ্ণ। কানে হেডফোন গুঁজে ম্যাচ শেষে যখন টিমবাসে উঠছেন তখন চার দিক চোখ বুলিয়ে একবার হাত নেড়ে গেলেন। ছুটকো স্লোগানও উঠল— বুকেনিয়া বুকে থাকবে। তবে একা বুকেনিয়া নন। উইলিস প্লাজাকেও বেশ আকর্ষণীয় দেখাল। আইজলের গোলকিপার গোমসের একটা দুরন্ত ‘সেভ’-এর জন্য গোল পাননি ঠিকই। তবে বাঁ পা-টা বুলেটের মতো চলে। টার্নের সঙ্গে গতিটাও ভাল। এক কথায় ইস্টবেঙ্গলের লম্বা রেসের ঘোড়া হওয়ার সব মশলা আছে। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারও বলছিলেন, ‘‘তিন জনের মধ্যে প্লাজাকেই সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল। বিশেষ করে ছোট বক্সের আসেপাশে খুব ভয়ঙ্কর। ওকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, ইস্টবেঙ্গলই লাভবান হবে।’’
কী দাঁড়াল?
আইলিগে ইস্টবেঙ্গলের ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো-র বক্স অফিস কালেকশন এক কথায় মাঝারি। দুই বিদেশি ভাল। একজন এখনও উত্তীর্ণ নন। টিমে প্রতিভা আছে। ফিনিশার নেই।
লাল-হলুদে মর্গ্যান পার্ট-টু হিট না ফ্লপ সময় বলবে। ক’টা দিন যাক।
ইস্টবেঙ্গল: রেহনেস, রাহুল, গুরবিন্দর (বুকেনিয়া), আনোয়ার, নারায়ণ, মেহতাব, নিখিল (অবিনাশ), জ্যাকিচন্দ (প্লাজা), রাওলিন, ওয়েডসন, রফিক।
ছবি: উৎপল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy