Advertisement
E-Paper

বাড়িতে ফিরেও আতঙ্ক কাটছে না সোনি কুমারীদের

হঠাৎ ভূকম্পের ধাক্কায় মৃত্যুপুরী হয়ে যাওয়া নেপালের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে। বাড়ি ফিরেও স্বপ্নের মধ্যে দেখছেন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে একের পর এক বাড়ি। চাপা পড়ছে মানুষ। আর্তনাদে ভারী হয়ে যাচ্ছে আকাশ বাতাস। অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের টিমের কোচ মেয়মল রকি সেই আতঙ্কের দিনের কথা বলতে বলতে শিউরে উঠছেন। সোমবারই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা ফুটবলাররাও নিরাপদে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১০
অবশেষে নেপাল থেকে ঘরে পা অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের। ছবি: ফেসবুক।

অবশেষে নেপাল থেকে ঘরে পা অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের। ছবি: ফেসবুক।

হঠাৎ ভূকম্পের ধাক্কায় মৃত্যুপুরী হয়ে যাওয়া নেপালের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে। বাড়ি ফিরেও স্বপ্নের মধ্যে দেখছেন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে একের পর এক বাড়ি। চাপা পড়ছে মানুষ। আর্তনাদে ভারী হয়ে যাচ্ছে আকাশ বাতাস।

অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের টিমের কোচ মেয়মল রকি সেই আতঙ্কের দিনের কথা বলতে বলতে শিউরে উঠছেন। সোমবারই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা ফুটবলাররাও নিরাপদে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। গোয়া ফিরে মেয়মল বলে দিলেন, ‘‘যতদিন বাঁচবো ততদিন ওই দৃশ্যগুলো মনে থাকবে। কী ভয়ঙ্কর!’’

সোমবার যখন জাতীয় কোচ মেয়মলকে গোয়ায় ফোনে ধরা হল, তখনও আতঙ্কে তাঁর গলায় কাঁপুনি। অনূর্ধ্ব-১৪ টিম নিয়ে এএফসি কাপের ম্যাচ খেলতে কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন মেয়েমল। দশরথ স্টেডিয়ামে ইরানের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ ছিল শনিবারই। ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন? মেয়মল বলছিলেন, ‘‘আমরা তখন সবাই ড্রেসিংরুমে। কিছুক্ষণ বাদেই এএফসি কাপের ম্যাচ শুরু হবে। হঠাৎ-ই তীব্র ঝাঁকুনি। কেঁপে উঠল পুরো ড্রেসিংরুম। ভয় পেয়ে কেউ কেউ চিৎকার করে কেঁদে উঠল। প্রথমে আমাদেরও বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। ভূমিকম্প হচ্ছে বোঝার পরই মেয়েদের নিয়ে খোলা মাঠে চলে আসি।’’ সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা গড়গড় করে বলে যাচ্ছিলেন তিনি। ‘‘মেয়েগুলোর বয়স তো খুব বেশি নয়। সবাই বছর বারো কী তেরো হবে। ভয়ে ওদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। কান্নাকাটি করছিল। গোটা দিনই আমরা ও রকম মাঠে বসে থাকি। সেখানে বসেই দশরথ স্টেডিয়াম ক্ষয়ক্ষতি দেখছিলাম। যখন কোনও মতে হোটেলে ফিরলাম, তখন বিকেল ৫টা ৪০। আমাদের ঘর ছিল ছ’তলায়। কিন্তু ওপরে ওঠার কোনও পরিস্থিতিই ছিল না। লাইট নেই। হোটেলে বড় বড় ফাটল ধরেছে। গোটা রাত তীব্র আশঙ্কা নিয়ে রিসেপশনে কাটিয়েছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি, আমার ছোট ছোট ছাত্রীদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়।’’

রবিবার সকালে হোটেল থেকে এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে নেপালের মানুষদের তীব্র হাহাকার শুনেছে ১৪ বছরের ফুটবলাররা। এ সব দেখতে দেখতে নিজেদের অজান্তেই আঁতকে উঠেছে। কোচের বর্ণনায়, ‘‘মৃত দেহ দেখতে দেখতে কেমন যেন একটা ভয় তাড়া করছিল। কখনও এত মৃত্যু দেখিনি। মেয়েরা সবাই কেমন যেন ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। কারও মুখেই কথা ছিল না।’’ টিমের অধিনায়ক সোনি কুমারীর বাড়ি আবার বিহারে। ভারতের যে রাজ্য এই ভূমিকম্পের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিহারের কথা শুনে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। পরে অবশ্য মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর স্বস্তি ফেরে।

এয়ারপোর্টের চিত্রটাও ছিল বেশ ভয়ানক। হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তার মধ্যে অনেকেই আবার ভূমিকম্পের জেরে মারাত্মক ভাবে আহত। গোয়ার কোচ বলছিলেন, ‘‘অসমের একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হল। যে মারাত্মক ভাবে জখম। তিনতলার উপরে শৌচালয়ে গিয়েছিল মেয়েটি। কম্পনের জেরে পুরো শৌচালয়-সহ মাটিতে পড়ে গিয়েছিল সে। তবে ঈশ্বর ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই ফেডারেশন থেকে সোনিদের কথা বলতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফোনে ধরা হলে তাদের বাড়ি থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ওরা কিছু বলবে না।

soni kumari nepal earthquake National women football team Tania Roy Goa Iran Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy