আগমন: মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে মৃদুল। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ ইস্টবেঙ্গলের এক শীর্ষ কর্তার ফোন যখন পেলেন, তখন বেলগাছিয়ার পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের মাঠে দৌড়োদৌড়ি করছিলেন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইস্টবেঙ্গল তাঁবু ঘুরে, ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে চলে গিয়েছিলেন অফিস। বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে ফেরার সময় তাঁর ছোট্ট কালো ব্যাগ থেকে বেরোল এক গোছা কাগজ। তাঁর কোনও জায়গায় লেখা ওয়েডসন আনসেলমের খেলার ভাল-মন্দ দিক, কোনও পাতায় মেহতাব হোসেনের খেলার বিশেষত্ব। ইস্টবেঙ্গলের স্টপ গ্যাপ কোচ জানাচ্ছেন, ফুটবলার ধরে ধরে বিশ্লেষণ করার পরই অনুশীলনে নামতে হয় কোচেদের, এই তত্ত্বটা ইংল্যান্ড থেকে শিখে আসা। নিয়মিত আই লিগের খেলা দেখেন। সে জন্যই মুখে কিছু না বললেও, টিমের রোগটা ধরেছেন। ‘‘টিমের ভারসাম্যটা ঠিক করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তো আছেই,’’ বলছিলেন মৃদুভাষী মৃদুল।
আবার ছয় ম্যাচের জন্য (আই লিগ ও ফেড কাপ) ঠিকে কোচের বরাত নিয়ে ময়দানে হাজির পাইকপাড়ার এফএ কোর্স করা বঙ্গসন্তান। ‘ঠিকে’ শব্দটাই যেন মৃদুলের কোচিং জীবনের প্রাপ্তি বা ভাগ্যে লেখা এখনও। মোহনবাগানে এক মাসের দায়িত্ব নিয়ে আটটা ম্যাচের সাতটাতে জিতেও ছাঁটাই হয়েছিলেন। দু’বার বাংলাকে অনূর্ধ্ব-২১ ট্রফি জেতানোর পর সন্তোষ ট্রফিতে ডাক পেয়েছিলেন ১৫ বছর পর। পেয়েই ছয় বছর পরে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এই মরসুমেও মহমেডানকে কলকাতা লিগে রানার্স করার পরেও ছাঁটাই হতে হয়েছিল তাঁকে। ‘‘আরে এসব সয়ে গেছে। পা ভেঙে যাওয়ার পর ফুটবল জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোচিংটা আমার নেশা। ডাক পেলেই দায়িত্ব নিই। চেষ্টা করি কিছু করার। থিতু আর হতে পারলাম কই।’’
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের হট সিটে বসার পরও তাই মৃদুলের মুখ থেকে চমকপ্রদ প্রতিক্রিয়া নেই। চ্যালেঞ্জ শব্দটা বলেও নিজের উপর চাপ বাড়াতে চান না। বলে দিলেন, ‘‘ধুর, আমার কোনও চাপ নেই। চ্যালেঞ্জ আবার কী? আরে মোহনবাগানে পাঁচ বছর আগের কাজটা আরও কঠিন ছিল। সে বার তো অবনমনে চলে যাওয়া টিমের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ফুটবলের আসল ব্যাপারটা তো ছক। ভাল কিছু করতে পারলে একটু এগোব।’’ বলে দেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ।
আরও পড়ুন:আপাতত মৃদুলের হাতেই ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব
মাথার উপর মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরামর্শদাতা বসিয়েছে ক্লাব কর্তারা। তাতেও মুখের বলি রেখায় কোনও বদল নেই। ‘‘মনাদার সঙ্গে তো আট বছর আগে এখানেই সহকারী কোচ ছিলাম। আমার দাদার বন্ধু। আর ভাস্করদা পরামর্শ দিলে নিতে তো কোনও অসুবিধা নেই। সবাই তো টিমের ভাল চায়।’’ নির্বিকার মুখে বলে দেন মৃদুল। কোনও রাগ নেই। কোনও ক্ষোভ নেই। সে জন্যই অনেকে তাঁকে দেখে বলেন, ব্যক্তিত্ব কম। সেই প্রসঙ্গ তুললে তুড়ি মেরে উড়িয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্যক্তিত্ব মানে কী ফুটবলারদের অশ্লীল গালাগালি দেওয়া? ওটা পারব না।’’ অকপটেই বলে দেন, ‘‘ভাবিইনি যে ইস্টবেঙ্গল আমাকে কোচ করে দেবে রাতারাতি। এখন মনোবল বাড়ানো আর ফর্মেশন তৈরিই প্রথম কাজ। সেটা শুরু করব। যে কোনও একটা জেতা ম্যাচের সিডি চেয়েছি। আই লিগের দু’টো ম্যাচ জিততেই হবে। সেটার উপর দাঁড়িয়েই ফেড কাপকে পাখির চোখ করব।’’
ফের অচেনা রাস্তায় হাঁটা শুরু করে দিয়েছেন মৃদুল। স্বপ্ন দেখাও। এটাই যে, ট্রেভর মর্গ্যানের উত্তরসূরির ময়দানী ইউএসপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy