Advertisement
E-Paper

বারপুজোতেই শুরু ফুটবলের নববর্ষ

নববর্ষের সকাল মানেই ময়দানি রেওয়াজ হল বার-পুজো৷ কলকাতা ময়দান থেকে জেলার মাঠ— বার পুজোর প্রচলন রয়েছে সব জায়গায়। কোথাও আগের থেকে জাঁক কমেছে, আবার কোথাও রয়েছে নিয়মরক্ষায় ঘটপুজোটুকুই হয়।

প্রকাশ পাল ও অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৭
বার-পুজো: চন্দননগরে। —ফাইল চিত্র।

বার-পুজো: চন্দননগরে। —ফাইল চিত্র।

নববর্ষের সকাল মানেই ময়দানি রেওয়াজ হল বার-পুজো৷ কলকাতা ময়দান থেকে জেলার মাঠ— বার পুজোর প্রচলন রয়েছে সব জায়গায়। কোথাও আগের থেকে জাঁক কমেছে, আবার কোথাও রয়েছে নিয়মরক্ষায় ঘটপুজোটুকুই হয়। তবে পয়লা বৈশাখ এলেই হাওড়া ও হুগলির পরিচিত মাঠগুলিতে এখনও ভিড় জমান ক্লাব কর্তা এবং ফুটবলারদের একাংশ।

বাংলার ফুটবল সংগঠকদের কাছে পয়লা বৈশাখ হলো ফুটবল মরসুমের নববর্ষ। কোনও কোনও ক্লাবে এই দিন নতুন মরসুমের ফুটবল অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়। কোথাও দুপুরে অথবা রাতে থাকে ভুরিভোজের ব্যবস্থা।

হুগলির মধ্যে চন্দননগর পৃথক ক্রীড়াজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। এখানকার সন্তান সঙ্ঘ, আজাদ সঙ্ঘ, সিসি ক্লাব, বয়েজ ক্লাব, মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাবে বারপুজো হয়। মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাবটি ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয়েছিল। ওই ক্লাবের কর্মকর্তা অভীক খাঁ বলেন, ‘‘আগে আমাদের মাঠে কাঠের বারপোস্ট ছিল। তখন পয়লা বৈশাখে নতুন বারপোস্ট পুঁতে তাতে আলকাতরা এবং রং লাগানো হতো। এখন লোহার বারপোস্ট। সেখানেই পুজো হয়। বর্তমানের সঙ্গেই প্রাক্তন ফুটবলাররাও আসেন।’’

বৈদ্যবাটির বিএস পার্কের মাঠে নববর্ষের সকালে বার পুজো হয়। ওই ক্লাবের কর্তা সৌমেন ঘোষ জানান, বারপুজোর পরে ফুটবলারদের জন্য নৈশভোজের ব্যবস্থা থাকে। শ্রীরামপুর স্পোর্টিং, নেতাজি ব্রিগেডের মতো ক্লাবেও বারপুজোর হয়। রিষড়া স্পোর্টিং ক্লাব এবং রিষড়া অরোরা ক্লাব পরস্পরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলেই এলাকায় পরিচিত। খেলার মাঠে তাদের দেখা হলে সেই ম্যাচের উত্তেজনা থাকে চরমে। দু’টি ক্লাবই স্থানীয় লেনিন মাঠে অনুশীলন করে। নববর্ষের সকালে ওই মাঠের দুই প্রান্তে দুই ক্লাব বারপুজো করে।

আরও পড়ুন: তীব্র গরম আর কার্ড নিয়ে চিন্তায় সঞ্জয়

রিষড়ার ছেলে প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ বলেন, ‘‘বছরের প্রথম দিনে ফুটবলাররা মাঠে এসে সঙ্কল্প করেন। মোহনবাগান মাঠে বহু বারপুজোয় উপস্থিত থেকেছি। এখন এলাকায় থাকলে রিষড়া স্পোর্টিংয়ের বারপুজোয় যাই।’’ কলকাতা ময়দানের আরেক প্রাক্তন ফুটবলার চন্দননগরের ছেলে কৃষ্ণগোপাল চৌধুরী গত বছর চন্দননগর সন্তান সঙ্ঘের বারপুজোয় ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্টবেঙ্গ‌ল-মোহনবাগান দুই ক্লাবের বারপুজোয় গিয়েছি। বারপুজো মানে একই সঙ্গে মাঠ এবং ফুটবলারদের শুদ্ধিকরণ।’’

হুগলির মাঠে বারপুজোর আবেগ একই রকম থাকলেও হাওড়ার মাঠগুলিতে বারপুজো নিয়ে আগের জৌলুস একটু হলেও ফিকে। জেলার হাতেগোনা কয়েকটি ক্লাব এখন জাঁকজমকের সঙ্গে বার পুজো করে। বাকিরা ঘটপুজো করেই কাজ সারে। ডোমজুড়ের কোলড়া বীনাপানি ক্লাবে বছর দশেক আগেও ঘটা করে বারপুজো হতো। তবে এখন সেখানে নববর্ষের সকালে শুধুই ঘটপুজো হয়। একই অবস্থা শহর ও গ্রামীণ হাওড়ার আরও কয়েকটি ক্লাবে। হাওড়ার মাকড়দহের বাসিন্দা প্রাক্তন ফিফা রেফারি কালীদাস মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এখন জেলার ক্লাবগুলি বেশিরভাগ প্রতিযোগিতায় খেপ খেলা ফুটবলারদের নিয়ে দল করে। ক্লাবের নিজস্ব ফুটবলারের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সেই সূত্রেই বারপুজো নিয়ে আবেগও কমছে।’’ প্রাক্তন ফুটবলার তথা মাকড়দহ ইউনাইটেউ কোচিং সেন্টারের কর্তা অরূপ শ্রীমানীর (বাবলা) মতে, ‘‘শুধু ফুটবলারদের দো‌ষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের জেলার ক্লাব কর্তারাও বার পুজো নিয়ে সেভাবে ভাবেন না।’’

এর মধ্যেই ডোমজুড় ইয়ং মেনস্ অ্যাসোসিয়েশন (ডিওয়াইএমএ), মাকড়দহ ইউনিয়ন ক্লাব, খাঁটোরা নেতাজি সঙ্ঘ, কাটলিয়া কিশোর সঙ্ঘের মতো হাওড়ার কয়েকটি ক্লাবে নিয়ম মেনে বার পুজো ও মিষ্টিমুখ হয়। ডিওয়াইএমএ ক্লাবের সম্পাদক কর্তা সুকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বারপুজো হল ফুটবলের পরম্পরা। জাঁকজমক কমলেও সেটি রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’

এ বার কেন্দ্রীয় ভাবে বার পুজোর উদ্যোগ নিয়েছে সাঁকরাইল থানা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার সম্পাদক তপন পাল জানান, ঝোড়হাট অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে এ বার এলাকার সব ক্লাবকে নিয়ে বারপুজো হবে। ‘মাকড়দহ আমরা নতুন’ বছর দুয়েক ধরে জাঁকজমকের সঙ্গে বারপুজো করেছে। এ বার তাদের মাঠে বার পুজো উপলক্ষে থাকছে প্রীতি ম্যাচ।

Football Bar Pujo New Year
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy