Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নেইমারই এখন মেসি আর মেসি আরও বিস্ময়কর কিছু

ফাইনালের অনেক আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলাম কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে। রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে জুভেন্তাস ফাইনালে উঠেছিল ঠিকই। তবে একটা মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি রিয়ালের মতোই ফাইনালে দশা হবে বার্সেলোনার। কারণটা ওদের ফরোয়ার্ড লাইন দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। বার্সার ফরোয়ার্ডে এক জন লিওনেল মেসি আছে। যাঁর বা পা যে কোনও ম্যাচের ছবি নিমেষে পাল্টে দিতে পারে। এক জন নেইমার আছে। যার বল কন্ট্রোল, গতি যে কোনও ডিফেন্ডারের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে।

মাঠের ভয়ঙ্কররা যখন স্নেহশীল পিতা।

মাঠের ভয়ঙ্কররা যখন স্নেহশীল পিতা।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

ফাইনালের অনেক আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলাম কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে। রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে জুভেন্তাস ফাইনালে উঠেছিল ঠিকই। তবে একটা মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি রিয়ালের মতোই ফাইনালে দশা হবে বার্সেলোনার।

কারণটা ওদের ফরোয়ার্ড লাইন দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

বার্সার ফরোয়ার্ডে এক জন লিওনেল মেসি আছে। যাঁর বা পা যে কোনও ম্যাচের ছবি নিমেষে পাল্টে দিতে পারে।

এক জন নেইমার আছে। যার বল কন্ট্রোল, গতি যে কোনও ডিফেন্ডারের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে।

এক জন লুই সুয়ারেজ রয়েছে। যে আউট অ্যান্ড আউট স্ট্রাইকার। বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে কামড়ে বা বিপক্ষের ফুটবলারকে গায়ের রং তুলে গালাগাল দিয়ে যতই বিতর্কে জড়াক না কেন, সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকতেও জানে ছেলেটা।

তো এই তিন অ্যাটাকার একসঙ্গে কোনও দলে খেললে সেই দলের কোচকে আর কিছু ভাবতে হয় না কি? বরং গোল খেলেও আত্মবিশ্বাস থাকে, ঠিক শোধ হয়ে যাবে।

কোনও জুটির সফল হওয়ার পিছনে মূল কারণ তাদের স্বার্থহীন ফুটবল। হিংসুটে হলে ফুটবল খেলা যায় না। সেই ‘টিম গেম’ মানসিকতার আদলেই বার্সায় তৈরি হয়েছে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের ত্রিফলা। তিন জনের মধ্যে কেউ ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান বাড়াতে খেলে না। তিন জনই নিজের আগে দলকে রাখে।

সেমিফাইনালে দেখেছিলাম মেসি পাস দিয়েছিল নেইমারকে। আবার গোল করে মেসির সঙ্গেই সেলিব্রেট করেছিল নেইমার। এতেই বোঝা যায় একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। ভালবাসা। গোল করার দায়িত্বটাও খুব ভাল ভাগ করে নিয়েছে তিন জন। আগের বার্সা অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল মেসির উপর। জাভি, ইনিয়েস্তা থাকলেও গোল করার প্রায় সমস্ত দায়িত্ব নিতে হত মেসিকে। এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। মেসি কোনও দিন গোল না করলে সে দিন সুয়ারেজ, নেইমার করে দিচ্ছে। আবার নেইমার না করলে সুয়ারেজ, মেসি করছে।

তার মধ্যেও জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে এই ত্রিফলার মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লাগল নেইমারকে দেখে। কী সুন্দর খেলছে ছেলেটা! আগের মরসুমের সেই উঠতি তারকা এখন কিন্তু ফিনিশড প্রোডাক্ট। নিঁখুত বল কন্ট্রোল, দুর্দান্ত পাসিং, ডিফেন্ডারদের বলে বলে ড্রিবল করা। শারীরিক গঠন খুব ভাল না হলেও পায়ের স্কিল দিয়ে সেই ফাঁকটা ঢেকে দেয়। ঠিক মেসির মতোই নেইমারও পঁচিশ-তিরিশ গজ একাই ডিফেন্ডারদের চেনে বেরিয়ে যেতে পারে। শুধু একটা জিনিসই ওকে পাল্টাতে হবে। বার্লিনের ফাইনালে দেখছিলাম নেইমার বারবার ডিফেন্ডারদের ইনসাইড ড্রিবল করে ঢুকে যাচ্ছে। ডিফেন্ডাররা সেই জিনসটা ধরে ফেলছে। এই প্রেডিক্টেবল খেলাটা কিন্তু বদলাতে হবে ব্রাজিলীয় তরুণকে।

নেইমার যেমন উন্নতি করেছে, মেসি আবার প্রমাণ করেছে অ্যাটাকিং থার্ডে প্রায় সব পজিশনেই ও সমান দক্ষ। জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে অনেকটা ডিপ থেকে খেলল মেসি। এভ্রা বাঁ দিক থেকে খেলায় মেসি বেশি আক্রমণ করার স্বাধীনতা পাচ্ছিল না। এই কারণেই মাঝমাঠে নেমে খেলাটা পরিচালনা করার চেষ্টায় ছিল মেসি। আর তাতেও ওকে দশে দশ দিতে হবে। পুরো খেলার গতিটা নিয়ন্ত্রণ করছিল। নিজের মর্জি মতো ডিফেন্ডারদের এক দিকে সরিয়ে দিচ্ছিল। নেইমার-সুয়ারেজ-ইনিয়েস্তাদের সেই ফাঁকা জায়গার ফায়দা তোলার জন্য। পির্লো-মারচিসিওরা গতিতে ওর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে পারছিল না। সুয়ারেজের গোলটা তো মেসিরই অবদান। কী দুর্দান্ত স্প্রিন্ট। তার পরে দারুণ শট।

ফাইনালের সুয়ারেজকে দেখে আমি বরং হতাশ। খুব ভাল খেলতে পারল না। অনেক গোল করতে পারত। গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করল ঠিকই। অনায়াসেই হ্যাটট্রিকও পেতে পারত। সুয়ারেজের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে ওর অনুমানক্ষমতা। স্ট্রাইকারদের সব সময় যে জিনিসটা দরকার। খারাপ খেলেও গোল করতে পারাটাই কোনও সেরা স্ট্রাইকারের কাজ।

মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের সাফল্যের পিছনে তিনটে মূল কারণ বলতে হলে প্রথমে বলব, তিন জনই এক স্টাইলের ফুটবলার। বল নিয়ে যতটা ভাল পজিশন নেয়, বল ছাড়াও ঠিক ততটাই ভাল পজিশন নিতে জানে। দ্বিতীয়ত, এরা তিন জনই ৮০ শতাংশ স্কোরার আর ২০ শতাংশ স্কিমার। অর্থাত্ গোল করা ছাড়াও দুর্দান্ত পাস বাড়াতে জানে। তৃতীয়ত, তিন জনই খুব পেশাদার। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা না লাগিয়ে একসঙ্গে খেলতে ভালবাসে।

এই ত্রিফলা নিয়ে প্রশংসা করলেও ভুলে যেতে পারব না আর এক জন ফুটবলারের কথা। যে চুপচাপ গোটা মরসুমে নিজের কাজটা করে গেল। হ্যাঁ, আমি আন্দ্রে ইনিয়েস্তার কথাই বলছি। যার পায়ের কাজ ফের মুগ্ধ করল আমায়।

এ রকম ফুটবলারের জন্যই তো ফুটবলকে আরও সুন্দর দেখায়!

ইউরোপ জয়ের পর ত্রিমূর্তির ছবি ফেসবুক ও টুইটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE