Advertisement
২১ মে ২০২৪
শেষ চারে উঠে পদক নিশ্চিত দুই ভারতীয় কন্যার

সিন্ধুর হাতেই সোনা দেখছি

২০১৩ আর ২০১৪-মানে এর আগে যে দু’বার সিন্ধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পায়, দু’বারই আমি ভারতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম। সেই সিন্ধুর চেয়ে এ বার গ্লাসগোয় নামা সিন্ধু আত্মবিশ্বাস, শরীরীভাষার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। সেটা স্বাভাবিকও।

বিজয়িনী: কোয়ার্টার ফাইনালে দাপটের সঙ্গে জিতলেন পি ভি সিন্ধু। ফল তাঁর পক্ষে ২১-১৪, ২১-৯। ছবি: এএফপি।

বিজয়িনী: কোয়ার্টার ফাইনালে দাপটের সঙ্গে জিতলেন পি ভি সিন্ধু। ফল তাঁর পক্ষে ২১-১৪, ২১-৯। ছবি: এএফপি।

মধুমিতা বিস্ত
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪১
Share: Save:

প্রথমেই পরিষ্কার বলে দিই, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সিন্ধুকে এ বার যে রকম ফর্মে আর আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে তাতে ওর হাতে সোনা ছাড়া আর কিছু দেখছি না।

কেন বলছি কথাটা?

২০১৩ আর ২০১৪-মানে এর আগে যে দু’বার সিন্ধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পায়, দু’বারই আমি ভারতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম। সেই সিন্ধুর চেয়ে এ বার গ্লাসগোয় নামা সিন্ধু আত্মবিশ্বাস, শরীরীভাষার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। সেটা স্বাভাবিকও। ১৭-১৮ বছর বয়সি একটা মেয়ে তখন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে ছাপ ফেলার চেষ্টা করছে। যত সময় এগিয়েছে তত ওর অভিজ্ঞতা বেড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বীকে মেপে নিয়ে সেই অনুযায়ী নিজের খেলা ছকে নেওয়ার ব্যাপারটাও সিন্ধুর আরও নিখুঁত হয়েছে।

শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে চিনের সুন ইউ-এর বিরুদ্ধে যে ব্যাপারটা স্পষ্ট দেখা গেল। বিশ্বের ছ’নম্বর সুন এর আগে সিন্ধুর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ৪-৩। কিন্তু ম্যাচটা শুরু হওয়ার পরে সিন্ধু সেটা বুঝতেই দেয়নি। খুব আগ্রাসী খেলেছে সিন্ধু। মাত্র ৩৯ মিনিটেই ওর ম্যাচটা মুঠোয় পুরো ফেলাতে যেটা স্পষ্ট। প্রত্যেকটা বিভাগে মানে নেট কিপিং, পুশ, স্ম্যাশ, ডিফেন্স, ট্যাকটিক্যাল গেম— সব কিছুই নিখুঁত ছিল সিন্ধুর।

আসলে রিও অলিম্পিক্সে রুপো পাওয়ার পরে সিন্ধু ধারাবাহিকতার দিক থেকে অনেক উন্নতি করেছে। তাই ওকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও ধারালো, নিখুঁত, আগ্রাসী দেখাচ্ছে এখন। তবে একটা সময় কিন্তু এই ধারাবাহিকতার অভাবেই সিন্ধু হতাশ হয়ে পড়েছিল।

আমার এখনও মনে আছে, অলিম্পিক্সের আগেও সিন্ধু বলত, ‘‘দিদি ধারাবাহিকতা আনতে পারছি না। এই জায়গাটা আমায় ঠিক করতেই হবে।’’ সম্ভবত টুর্নামেন্টটা ছিল ফরাসি ওপেন। আমি তখন ওকে বলেছিলাম, ধৈর্য ধর, ধাপে ধাপে নিজের লক্ষ্যটা স্থির করে এগো, ঠিক পারবি। দিল্লিতে বসে টিভিতে সিন্ধুর শুক্রবারের ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই কথাগুলো।

তবে প্রায় ছ’ফুট লম্বা হওয়ায় সুনের কোর্ট কভারেজ দারুণ। ওকে পছন্দের জায়গায় আসতে দিলেই সমস্যায় ফেলে দেয় প্রতিপক্ষকে। প্রতিদ্বন্দ্বীর এই শক্তিটা জানা ছিল বলেই সুন-কে এই সুযোগটা দেয়নি সিন্ধু। প্রতিপক্ষকে কোর্টে অনবরত নড়াচড়া করতে বাধ্য করেছে। যাতে ও ঠিক পজিশনে আসতে না পারে। আবার যখন সুন আক্রমণ করেছে তখন দারুণ ভাবে ডিফেন্ড করেছে সিন্ধু। ২১-১৪, ২১-৯ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠতে তাই খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি সিন্ধুকে। এই ম্যাচটা জিতে দেশের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে আরও একটা পদক নিশ্চিত করে ফেলল সিন্ধু।

এ বার সেমিফাইনালের চ্যালেঞ্জ সিন্ধুর। যে লড়াইে চেন ইউফেই-এর বিরুদ্ধে সিন্ধুকে সতর্ক থাকতে হবে। মুখোমুখি লড়াইয়ে দু’জন এখন ১-১। ২০১৫-তে সিন্ধু ম্যাকাও ওপেনে ওর বিরুদ্ধে জিতেছিল। আবার এ মরসুমে এপ্রিলে মালয়েশিয়া ওপেনে চেন হারিয়ে দিয়েছিল সিন্ধুকে।

তবে জোর দিয়ে বলছি, কোয়ার্টার ফাইনালে যে সিন্ধুকে দেখলাম সেই ফর্ম আর পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে সিন্ধুর হাতেই সোনা দেখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE