Advertisement
০৪ মে ২০২৪
টেস্টের বিরাট-প্রস্তুতি শুরু

ইডেনে সবুজ পিচে আমন্ত্রণ কোহালিদের

সৌরভ তখন দল থেকে ব্রাত্য। ভারতের নেতৃত্বে রাহুল দ্রাবিড়। প্রয়াত ইডেন-কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় ঘাস ওড়াতে রাজি হননি।

মহড়া: শুরু হয়ে গেল ‘মিশন শ্রীলঙ্কা।’ ইডেনে অনুশীলনে বিরাট কোহালি। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মহড়া: শুরু হয়ে গেল ‘মিশন শ্রীলঙ্কা।’ ইডেনে অনুশীলনে বিরাট কোহালি। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস তত ক্ষণে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নাটকের পর্দা তখনই উঠল!

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ইডেনে বাইশ গজের উপর থেকে ‘পিচ কভার’টা সরানো হল। আর তা পরিদর্শনে গেলেন ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।

ক্লাব হাউসের দ্বিতীয় তল থেকে দেখেও চমকে উঠতে হল। ইডেন না ডারবান— গুলিয়ে যেতে পারে! এ তো একেবারে সবুজে মোড়া পিচ! স্মরণকালের মধ্যে এ রকম সবুজ বাইশ গজ ইডেনে এক বারই দেখা গিয়েছে। গুরু গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি ওয়ান ডে ম্যাচে।

আরও পড়ুন: ইডেনের স্মৃতিতে ডুবে রোহিত

সৌরভ তখন দল থেকে ব্রাত্য। ভারতের নেতৃত্বে রাহুল দ্রাবিড়। প্রয়াত ইডেন-কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় ঘাস ওড়াতে রাজি হননি। সবুজ পিচে দশ উইকেটে হেরে দ্রাবিড়ের ভারতীয় দলের কোনও কোনও সদস্য বলে ফেলেছিলেন, এ তো দেখছি ডমেস্টিক ফ্লাইটে করে বিদেশে খেলতে এলাম!

বিরাট কোহালির দলেরও কি মনে হল আগামী বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে এগিয়ে আনা হয়েছে? সরকারি প্রেস কনফারেন্স ছাড়া সিরিজের মধ্যে কারও কথা বলার অনুমতি নেই বলে কারও মুখ থেকে এ নিয়ে কিছু শোনা গেল না। তবে ক্লাব হাউসের দ্বিতীয় তল থেকে কয়েকটি ব্যাপার লক্ষ্য করা গেল।

পরীক্ষা: ইডেনের পিচ দেখছেন রবি শাস্ত্রী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

যেমন এক) অধিনায়ক বিরাট পিচ দেখতেই গেলেন না। দুই) বোলিং কোচ বি. অরুণকে নিয়ে পিচ পরিদর্শনে গেলেন রবি শাস্ত্রী। সিএবি পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে দু’একটা কথাবার্তাও তাঁদের হল। কিন্তু উত্তেজিত কোনও প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ল না। শাস্ত্রী এবং অরুণ যখন পিচ দেখে ফিরে আসছেন, তখনও দেখে মনে হচ্ছিল, সবই ‘কুল কুল।’

ভারতীয় ক্রিকেটে আবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আবিষ্কার করা প্রথা হচ্ছে, টেস্ট ম্যাচের তিন দিন আগে বাইশ গজ দেখতে যাওয়ার মানে হয় না। কারণ, তখনও পিচ থাকে প্রস্তুতির স্তরে। ম্যাচের জন্য যে পিচটা দেওয়া হবে, সেটা আমূল পাল্টে যেতে পারে দু’তিন দিনে। ধোনির ফর্মুলা হচ্ছে, পিচ দেখতে যাও ম্যাচের আগের দিন। আর প্রথম একাদশ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও ম্যাচের সকালে।

আরও পড়ুন: চোট সারাতে নিজে বিশ্রাম চান হার্দিক

ধোনির মতো বিরাটও ম্যাচের আগের দিন ছাড়া পিচের আশেপাশে যান না। বিরাট জমানায় নিয়ম হচ্ছে, শুরুতে বাইশ গজ পরিদর্শনে যাবেন দলের কোচিং টিম। শাস্ত্রী আবার সব জায়গাতেই বাইশ গজ পরিদর্শনে যান বোলিং কোচ বি. অরুণকে নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু বছর কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা এবং জাতীয় অ্যাকাডেমিতে নানা কোর্স করা অরুণের জ্ঞানকে খুবই মূল্য দেওয়া হয় দলের অন্দরমহলে।

যদিও মনে করা হচ্ছে, এত তাড়াতাড়ি শাস্ত্রী-অরুণ জুটিও পিচ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করবেন না। আরও দু’দিন দেখার পরে একটা নকশা তৈরি হতে পারে বুধবার, ম্যাচের আগের দিন। সোমবার দিন শুধুই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হল।

ওয়াকিবহাল মহলে এর পরেও অনেকের ধারণা, ইডেনে আর যাই হোক, চিপকের ঘূর্ণি নিশ্চয়ই দেখা যাবে না! কোহালিদের প্র্যাকটিস চলাকালীন সোমবারেই দেখা গেল, ঘাস ছাঁটা হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া আরও দু’দিন ধরে চলতে পারে। তাতেও ভারতীয় ঘরানার স্লো-টার্নার আশা না করাই ভাল। জনপ্রিয় মত হচ্ছে, এটা যত না অশ্বিনের উইকেট, তার চেয়েও বেশি করে হবে মহম্মদ শামিদের পিচ। বল যত না ঘুরবে, তার চেয়ে বেশি গতি দেখা যাবে, বাড়তি বাউন্সও থাকবে। এ রকম িপচে কোহালিদের প্রতিদ্বন্দ্বী এমন একটা দল, যাদের প্রধান অস্ত্র এক বাঁ-হাতি স্পিনার— রঙ্গনা হেরাথ।

বাউন্সি পিচের ধারণা আরও প্রকট হল কোহালিদের প্র্যাকটিসের ধরন দেখে। প্রত্যেক ব্যাটসম্যান শর্ট বলে আলাদা করে ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন। ভারতীয় প্রথম একাদশও সবুজের ফলে কতটা পরিবর্তিত হতে পারে, তা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

এ দিন অনুশীলনে কুলদীপ যাদবকে খুব ব্যস্ত দেখাল। চায়নাম্যান কুলদীপ এখন ভারতীয় দলের নতুন ‘এক্স ফ্যাক্টর’। তাঁকে সম্ভবত খেলানো হবে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টকে অশ্বিন এবং জাডেজার মধ্যে যে কোনও একজনকে বেছে নিতে হতে পারে। হালফিলে দেশের মাটিতে এই দুই স্পিনারই সেরা অস্ত্র ছিলেন।

তিন ওপেনারের মধ্যে মুরলী বিজয় এবং শিখর ধবনের খেলা যদিও প্রায় নিশ্চিত। এ দিন অনুশীলনেও অনেক বেশি প্রাধান্য পেলেন এঁরা দু’জন। কে এল রাহুলের নাম প্রাথমিক ভাবে অন্তত আলোচনায় নেই। আবার রোহিত শর্মাকেও দেখা গেল অনেকক্ষণ ব্যাট করলেন। ইডেন রোহিতের প্রিয় এবং পয়মন্ত মাঠ। এখানেই ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড। সেটাও ছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এ বারে টেস্টেও প্রতিপক্ষ তারা। তবে রোহিতের সামনে এখনই টেস্টের দরজা খোলা কঠিন বলেই খবর।

তবে প্রথম একাদশ নয়, ইডেনের থ্রিলার হয়ে উঠতে পারে বাইশ গজই। ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে ঘাস ছাঁটার কথা না-ও বলা হতে পারে। হালফিলে নতুন শপথ তৈরি হয়েছে বিরাটের এই ভারতীয় দলে যে, পিচ যেমনই হোক খেলে দেখাব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE