দাদার ডে আউট। বিকেলে ইডেনে গোলাপি বল হাতে লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার।
‘‘টেস্ট ক্রিকেট এক সুন্দরী মহিলা। তাকে ‘সেক্সি’ করে তুলতে হবে’’, বলছেন ডিন জোন্স। যিনি অ্যাডিলেডে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচে কমেন্ট্রি বক্সে ছিলেন।
ইডেনের রাজা ভিভিএস লক্ষ্মণের ‘আফসোস’, ২০০১-এর সেই ইডেন টেস্ট দিন-রাতের হলে হয়তো তিনি তিনশো ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন।
আর ইডেনের ঘরের ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? তাঁর বিশ্বাস, ‘‘আমাদেরও তো সাত-আট বছর আগে স্মার্টফোনের অভ্যাস ছিল না। গোলাপি বলের ক্রিকেটের অভ্যাসও হয়ে যাবে।’’
আসল কথাটা হল গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট ক্রিকেটকে সবুজ সঙ্কেত দেখানো। ভারতে যা শুরু করে দিচ্ছে ইডেন। শনিবার থেকে।
শহরে যখন ভবিষ্যতের গোলাপি ক্রিকেট নিয়ে মুখর প্রাক্তন তারকারা, তখন গোলাপি বল হাতে মাঠে নামার জন্য ছটফট করছেন ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান স্ট্রাইক বোলার মহম্মদ শামি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইডেনে নেমে গোলাপি বলটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘‘এটাই যদি টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হয়, তা হলে তো আমাদের আরও বেশি করে এই বলে বোলিং করতে হবে। ফাঁকা গ্যালারি দেখতে আর কার ভাল লাগে?’’
এই কথারই যেন ইকো হল শহরে আসা লক্ষ্মণের বক্তব্যে, যখন তিনি বললেন, ‘‘ফাঁকা গ্যালারি কোনও ক্রিকেটারেরই পছন্দ নয়। গ্যালারিতে মানুষ টেনে আনতে তাই দিন-রাতের টেস্ট দরকার। আমার বিশ্বাস, এটাই টেস্টের ভবিষ্যৎ হতে চলেছে।’’
শনিবার শামি মরসুমে দ্বিমুকুটজয়ী মোহনবাগানের হয়ে মাঠে নামবেন সুপার লিগ ফাইনালে। লিগ চ্যাম্পিয়ন ভবানীপুর ক্লাবের বিরুদ্ধে। এক দিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামিরা, অন্য দিকে তেমন ময়দানের উঠতি পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়রা। তবে ম্যাচের চেয়েও অনেক বেশি করে ক্রিকেট দুনিয়ার ফোকাস নতুন অতিথি গোলাপি কোকাবুরা বলের দিকে।
কেমন হবে গোলাপি বলের আচরণ? আগ্রহটা মাঠে বল পড়ার আগে থেকেই। যা নিয়ে একটা টক শো-ও এ দিন করে ফেলল স্টার স্পোর্টস। যারা টাটকা দেখাবে এই ম্যাচ। টক শোয়ে সৌরভ সেই আগ্রহ নিরসনের চেষ্টা করে বললেন, ‘‘বছর চারেক আগে এমসিসি-র হয়ে দুবাইয়ে একটা ম্যাচ খেলেছিলাম গোলাপি বলে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ব্যাটসম্যানদের এই বল দেখতে কোনও অসুবিধা হবে না। অনেক উজ্জ্বল এই গোলাপি বল।’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে তা হলে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট এত লো স্কোরিং কেন হল? ডিন জোন্স ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘ওই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা খুব ডিফেন্সিভ অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছিল। গোলাপি বল নিয়ে তখন ওদের মনে একটা অনিশ্চয়তা ছিল বলেই বোধহয় এমন হয়েছিল।’’
ভারতের বুকে প্রথম গোলাপি ক্রিকেটের কমেন্ট্রি বক্সেও তিনি থাকবেন। গোলাপি বলের এই যাত্রার সাক্ষী থাকা ডিনো অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটাই হয়। সাদা বলের ক্রিকেট চালু হওয়ার সময়ও গেল গেল রব উঠেছিল। আর এখন সাদা বল ছাড়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটই হয় না। বছর পাঁচেক পর টেস্ট ক্রিকেটও হয়তো গোলাপি বল ছাড়া হবেই না। টেস্ট ক্রিকেট এক সুন্দরী মহিলার মতো। রাতের মোহময়ী আলোয় তাকে ‘সেক্সি’ করে তুলে তার আকর্ষণ বাড়িয়ে না তুললে লোকে তাকে দেখতে আসবে কেন?’’
ভিভিএস লক্ষ্মণ। ডাগ আউটে বসে আইপিএল দেখার অভিজ্ঞতা যাঁকে এখন আধুনিক ক্রিকেটের কট্টর সমর্থক করে তুলেছে। সেই লক্ষ্মণ বলছেন, ‘‘ভাবুন তো, ২০০১-এর সেই ইডেন টেস্ট যদি দিন-রাতের হত, তা হলে কড়া রোদে, তুমুল আর্দ্রতায় এত ঘাম ঝরিয়ে ব্যাট করতে হত না। আরও ক’টা রান করতে পারতাম।’’ পাশে বসা ডিনো বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, ওটা দিন-রাতের ম্যাচ হলে ভিভিএস তিনশো করত।’’
কিন্তু ভারতে যেখানে বিদেশিদের জন্য ‘র্যাঙ্ক টার্নার’-এর ফাঁদ পাতাই প্রচলিত, সেখানে গোলাপি বলের অক্সিজেন টেস্ট ক্রিকেটকে কতটা বাঁচিয়ে তুলবে, সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারলেন না বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy