Advertisement
১৭ মে ২০২৪
শেষ ষোলোয় পর্তুগাল

আগুনে রোনাল্ডো, শীতল মেসি

দূরত্বটা ঠিক পাঁচ হাজার দুশো আঠাশ মাইল। সময়ের পার্থক্যটাও ১৫ ঘণ্টার। তবু বুধবার সকালটা যদি বরফের মতো ঠাণ্ডা মাথার জাদুকরের ভোজবাজি দিয়ে শুরু হয়, তা হলে রাতটা বিস্ফোরণের তীব্র ঝলকানিতে কাটল ফুটবপ্রেমীদের।

ফ্যান ব্রিগেড। হিউস্টনে মেসি ভক্তরা।

ফ্যান ব্রিগেড। হিউস্টনে মেসি ভক্তরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৯:৩৪
Share: Save:

দূরত্বটা ঠিক পাঁচ হাজার দুশো আঠাশ মাইল। সময়ের পার্থক্যটাও ১৫ ঘণ্টার।

তবু বুধবার সকালটা যদি বরফের মতো ঠাণ্ডা মাথার জাদুকরের ভোজবাজি দিয়ে শুরু হয়, তা হলে রাতটা বিস্ফোরণের তীব্র ঝলকানিতে কাটল ফুটবপ্রেমীদের। যেন ফায়ার অ্যান্ড আইস। লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

বিস্ফোরণের আঁচটা পাওয়া গিয়েছিল আগেই।

টিম হোটেলের পাশের লেকের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে টিম। মধ্যমণি তিনি। হঠাৎ এক জন টিভি রিপোর্টার বুম নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেই ঘটে গেল বিপত্তিটা। পর্তুগাল ক্যাপ্টেন সটান সেটা টেনে নিয়ে ছুড়ে দিলেন লেকের জলে। রোনাল্ডো!

মাঠে বিস্ফোরণটা হল পরপর। ১২ মিনিটের যে বিস্ফোরণের একটা ব্যাক ফ্লিক আর একটা হেডে। যা দেখে গ্যারি লিনেকারের মতো প্রাক্তন ইংরেজ ফুটবলারের ব্যাখ্যা, ‘‘যে ভাবে শূন্যে ভেসে ছিল মনে হচ্ছিল যেন হামিংবার্ড।’’ জোড়া গোল করে পর্তুগালকে জেতাতে না পারলেও চাপের পিস্টনে পিষতে পিষতে যে দুটো মাস্টারপিস ছিটকে বেরোল সেটাকে আগুন ছাড়া কী বলবেন! আর এই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠায় তো পর্তুগাল শেষ ষোলোয় উঠল। যেখানে রোনাল্ডোদের সামনে ক্রোয়েশিয়া।

লিয়ঁতে রোনাল্ডো-অনুরাগী। ছবি:এএফপি, রয়টার্স

যার ঠিক উল্টো ছবিটাই দেখা গেল এ দিন সকালে আর্জেন্তিনা যুক্তরাষ্ট্রের কোপা যুদ্ধে। স্টেডিয়াম দেখে যে দিন বোধগম্য হচ্ছিল না এটা কী হিউস্টন না বুয়েনস আইরেস।

সাধারণত কোনও বড় টুর্নামেন্টে আমরা কী দেখি। সংগঠক দেশ হারলেই যেন জাতীয় শোক ছড়িয়ে পরে। গোটা টুর্নামেন্টের প্রাণটাই চলে যায়। কিন্তু কোপার প্রথম সেমিফাইনাল তো প্রমাণ করল, লিওনেল মেসি মানে সব কিছুই সম্ভব। মাঠে ২৫ গজের ফ্রি-কিক থেকে গোল করা হোক। বা যুক্তরাষ্ট্রকে ছিটকে দিয়েও তাদের ঘরের গ্যালারি থেকে প্রশংসা কুড়োনো। মেসি থাকা মানেই অবিশ্বাস্য সমস্ত ঘটনা। মনে হচ্ছিল, মেসি থাকা মানেই যেন বরফ-ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচের দখল নিয়ে নেওয়া।

আর্জেন্তিনা ৪-০ হারাল যুক্তরাষ্ট্রকে। প্রতিটা মুভের পিছনেই ছিল মেসির বাঁ পা। যার ছটায় দল হারলেও মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থকরা। কোথায় হিউস্টন গ্যালারি তাঁকে কটাক্ষ করবে। উল্টে শোনা যায় ‘মেসি-মেসি’ চিৎকার। ফ্রি-কিক থেকে গোল করার পরে যে শব্দের ডেসিবেল আরও বেড়ে যায়। কোনও কোনও যুক্তরাষ্ট্র ভক্ত তো আবার মেসির মুখোশ পরেও ছিলেন।

যে পারফরম্যান্সের পর আর্জেন্তিনীয় ক্যাপ্টেনের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুরের রঙও যেন বরফ নীল। ঠিক তাঁদের জার্সির মতো। ‘‘প্রথম দিন থেকেই আমরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছি। তাই আমরা যোগ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার,’’ বলেন মেসি। গত তিন বছরে দুটো কাপ ফাইনালে হার। এ বার তৃতীয় বারে কি ভাগ্য খুলবে। মেসি বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমরা খুব ভাল খেলেছি। এই ফাইনালে ওঠা তাই অনেক দিনের খাটনির ফল। আমরা জিততে চাই।’’

শুধু মাত্র আর্জেন্তিনাকে ফাইনালে তোলা নয়। বা ২৫ গজ থেকে ফ্রি-কিকে গোল করা নয়। হিউস্টনের রাত মেসির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার বহু দিনের রেকর্ড ভেঙেছেন বলেও। যে দেশের হয়ে খেলতে না পারার জন্য কটাক্ষ শুনতে হয়, সেই আর্জেন্তিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসনেও বসার নজিরটা সেরে নিলেন এই ফাঁকে। তবু এতটুকু অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস নেই। যেন চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সব উৎসবে ‘পজ’ বাটনটা নিজেই চালু করে রেখেছেন।

কিন্তু তাঁর ভক্তদের উচ্ছ্বাস কী ভাবে থামাবেন। ম্যাচ শেষে হিউস্টন তখনও মেসি-ম্যাজিকে মগ্ন। মাঠে ঢুকে একজন ভক্ত যেমন পা ধরে কুর্নিশ জানালেন মেসিকে। গ্যালারি জুড়ে সবাই এলএম টেনের মুখোশ পরে বসা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যেখানে ফুটবল নিয়ে বাস্কেটবল বা বেসবলের মতো উন্মাদনা নেই, তারাও যেন মেসি-ম্যানিয়ায় পাল্টে গিয়েছে।

মেসি পারলেন, রোনাল্ডো পারবেন তো? না তার আগেই শেষ হয়ে যাবে পর্তুগিজদের স্বপ্ন? তাঁর ভক্তদের স্বপ্ন? কে বলল ফ্রান্সে শুধু জঙ্গিহানার আশঙ্কাই আছে! আরও একটা বিস্ফোরণের আশঙ্কাও তো বুধবারের পর কেউ উড়িয়ে দিতে পারবেন না— সিআর সেভেনের মাঠের বিস্ফোরণের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

last sixteen Portugal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE