প্রজ্ঞান ওঝা। ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বাংলা: ৩৩৪ ও ১৬৪
বিদর্ভ: ২০২ ও ১৯১
বাংলা ৫ ম্যাচে ১৬।
সিএবি ৫ ম্যাচে ১৭!
ওই একটা বাড়তি পয়েন্টই কিন্তু এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার ভাগ্য অনেকটা ঠিক করে দিচ্ছে। মরসুম শুরুর আগেই যে পয়েন্টটা তুলে নিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। যে পয়েন্টটার নাম প্রজ্ঞান ওঝা।
কালীপুজোর সকাল থেকে বিকেল— সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মাঠে মোটামুটি সাত ঘণ্টার ক্রিকেটে দু’বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন মনে হচ্ছিল বাংলার হাত থেকে ছ’পয়েন্টটা বোধহয় গেল।
একবার বদ্রিনাথ এবং সতীশের পার্টনারশিপের সময়। যখন দু’জনে ঘণ্টা দেড়েকের উপর খেলে দিয়েছেন। লাঞ্চ হব হব করছে। কিন্তু দুই উইকেটের বেশি বাংলা তুলতে পারেনি। ওই সময় ওঝার ডেলিভারিটা মিডল স্টাম্পে পড়ে, একটু বাউন্স এবং অল্প টার্ন করে বদ্রির ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের হাতে। এর ঠিক ছয় বল পরে ওঝার হাত থেকে যেটা বেরোল, সেটা আরও বিষাক্ত। লেগ স্টাম্পে পড়ে স্পিন করে ব্যাটসম্যান শ্রীবাস্তবের অফ স্টাম্প নিয়ে গেল। লাঞ্চে বিদর্ভ ৮৫-৫। এবং বাংলার মরসুমের প্রথম সরাসরি জয়ের দিকে এগোনো শুরু।
দ্বিতীয় শঙ্কাটা তৈরি হচ্ছিল সতীশকে নিয়েই। প্রথমে লোয়ার মিডল অর্ডার এবং পরে টেল এন্ডারদের সঙ্গী করে সতীশের ছায়াটা ক্রমে বড় হচ্ছে বাংলার সামনে। লাঞ্চ এবং টি-এর মধ্যে মাত্র এক উইকেট। চায়ের পর মনোজ জুটি ভাঙলেও সতীশকে ফেরানো যাচ্ছিল না। এ দিকে আলো কমে আসছে। পুরো ওভার খেলা হবে কি না সন্দেহ। ৮২ নম্বর ওভারে ওঝার শেষ বলটা একটু জোরের উপর লেগ মিডলে ছিল। ব্যাটসম্যানের দুর্ভাগ্য, বলটা একটু নিচু হয়ে সতীশের পা উইকেটের সামনে পেয়ে যায়।
প্রজ্ঞান ওঝার চ্যালেঞ্জটা এ বার শুধু বাংলার হয়ে নয়। চাকিংয়ের অন্ধকার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আলোয় আসার। নতুন অ্যাকশনে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। বাংলায় আসার আগে হায়দরাবাদে ক্লাব ক্রিকেটে নিজের নতুন বোলিং অ্যাকশনে নিয়মিত বল করেছেন। নিজেকে নিখুঁত করেছেন। লুপটা ঠিক আছে, টার্ন পাচ্ছেন। এমনকী এই লো বাউন্সের উইকেটেও বল মাঝে মাঝে ভালই তুলেছেন।
এই কনুই ভাঙা বোলারদের যুগে ফুল স্লিভ শার্ট পরে বল করাটা এখন রীতিমতো বিতর্কিত বস্তু। তা দেখা গেল, প্রজ্ঞান হাফ স্লিভ শার্ট পরে বল করছেন এবং তাঁর কনুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মাঠের ধারে শামিয়ানার নীচে বসে যতটা দেখা গেল, তাতে প্রজ্ঞানের কনুই নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা নেই।
যেমন নেই এ বারের বাংলা টিমের উপর প্রজ্ঞানের প্রভাবে। ৫ ম্যাচে ২১ উইকেট, সেরা বোলিং ৭-৫৮। রঞ্জিতে তেরো ম্যাচ বাদে বাংলার প্রথম জয়ের পিছনে অবশ্যই সবচেয়ে বড় কারণ এই বাঁ হাতি স্পিনারের ১১ উইকেটের ম্যান অব দ্য ম্যাচ পারফরম্যান্স। প্রথম ইনিংসের সাতের পর এ দিন তুললেন চার।
বাংলার বাকি বোলাররা এখনও পার্শ্বচরিত্রেই অভিনয় করছেন। একা ম্যাচ শেষ করতে পারছেন না। এ দিনও বীরপ্রতাপ শুরুটা ভাল করলেন। ওয়াসিম জাফরকে স্কোয়ার অন করে দিয়ে এলবিডব্লিউ করলেন। শেষের উইকেটটাও তাঁরই। অশোক দিন্দার কয়েকটা বাউন্সার ব্যাটসম্যানকে নড়িয়ে দিল। কিন্তু ওই যে, কেউ একা ম্যাচ শেষ করতে পারছেন না। যেটা পারছেন প্রজ্ঞান।
সাইরাজ বাহুতুলে কোচ হয়ে আসার পরে বাংলা ড্রেসিংরুমের চোরা টেনশনের স্রোত নাকি অনেকটা কমে গিয়েছে। বঙ্গ ক্রিকেট নিয়ে ওয়াকিবহাল অংশের ধারণা, বাংলা নাকি এখন টিম বাংলা হয়ে উঠছে (মনোজ অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন, বাংলা আগেও টিম ছিল, এখনও আছে)।
১০৫ রানে বিদর্ভ-বধ করে মোট ১৬ পয়েন্ট তুলে বাংলা এখন লিগ টেবলে চার নম্বরে। দুটো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সামনে। মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশা। এখানে কিন্তু বাইশ গজে টিম বাংলাকেই দরকার। যেখানে ব্যাটসম্যানদের রান পাওয়ার পাশাপাশি পুরো বোলিং ইউনিটকেই কিছু না কিছু করতে হবে। না হলে হয়তো বাংলা ক্রিকেটে নতুন পাওয়া ‘প্রজ্ঞা’ও বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে হাসি ফেরাতে পারবে না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৩৩৪ ও ১৬৪। বিদর্ভ ২০২ ও ১৯১ (সতীশ ৯৬, প্রজ্ঞান ৪-৬০, বীরপ্রতাপ ৩-২৩)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy