রঞ্জিতে পৃথ্বীর দাপট।
সকালে টস জিতে রঞ্জি ফাইনালে পার্থিব পটেল মুম্বইকে আগে ব্যাট করতে পাঠালেন যখন, মুস্তাক আলির শহরে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি। কনকনে ঠান্ডা। মুম্বই নির্বাচক প্রধান মিলিন্দ রেগে ভেবেছিলেন গ্যালারিতে বসে খেলা দেখবেন। কিছুক্ষণ বসেই আচ্ছাদনের নীচে চলে যান। জাতীয় নির্বাচকদের জন্য নির্ধারিত বক্সে।
ততক্ষণে আরপি সিংহের মতো অভিজ্ঞ হোক, বা রুশ কালারিয়া-চিন্তন গাজার মতো তরুণ— গুজরাত পেসাররা সবুজ পিচে শর্ট বল আর বাড়তি গতি তুলতে শুরু করেছেন। ফাস্ট বোলিংয়ের একেবারে আদর্শ পরিবেশ পেয়ে। আরপি প্রথম স্পেলেই নিশ্চিত এলবিডব্লিউ পেয়ে যান ওপেনার হারওয়াদকরকে (৪)। ওয়ান ডাউনে শ্রেয়স আইয়ার-ও (১৪) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গাজার সামনে।
কিন্তু এ সব কিছুই অন্য প্রান্তে বিন্দুমাত্র দাগ কাটতে পারেনি সতেরো বছরের বাঙালি ওপেনারকে। এতটুকু চিড় ধরাতে পারেনি কিশোর ব্যাটসম্যানের ইস্পাত কঠিন মনঃসংযোগে। তিনি পৃথ্বী সাউ প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই এমন ক’টা ফ্রন্টফুট ড্রাইভ আর স্কোয়্যার কাট মারেন যে, দেখে মনে হচ্ছিল হোলকার স্টেডিয়ামের উইকেট গ্রিনটপের বদলে পাটা। আর ব্যাটসম্যানের চার ঘণ্টা ক্রিজে কাটানো হয়ে গিয়েছে! পৃথ্বী যেন সেমিফাইনালে সেঞ্চুরিতে যেখানে শেষ করেছিলেন, রঞ্জি ফাইনালে সেখান থেকেই শুরু করেন আজ। কে বলবে, মুম্বই ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়ের এটা প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারের সবে দ্বিতীয় ম্যাচ!
এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ দর্শক-আনুকূল্য থেকে চূড়ান্ত বঞ্চিত, রঞ্জি ফাইনালের প্রথম দিনটা তারও জ্বলন্ত ব্যতিক্রম ছিল। গ্যালারিতে বেশ ভাল দর্শক সমাগম হয়েছে। খুব সম্ভবত পৃথ্বীর টানে। এবং মুম্বইয়ের বাঙালি ব্যাটিং প্রতিভা দর্শকদের আশা সুদে-আসলে মিটিয়ে দেন, মুম্বইয়ের ২২৮ অলআউটের মধ্যে একাই ঝকঝকে ৭১ (৯৩ বল, ১১X৪) করে। ১৭ বছর ৬২ দিনে। ৮২ বছরের রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম অর্ধশতরানকারী হিসেবে।
স্লিপে একটা হাফ-চান্স বাদ দিলে পৃথ্বীকে রান আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত আর এক বারও বিপাকে ফেলতে পারেনি পার্থিবের গুজরাত। এক বার তো চিরাগ গান্ধী স্লিপে পরিষ্কার একটা বাউন্সের পর পৃথ্বীর ‘ক্যাচ’ লুফে এমন বিকট আবেদন আর লাফালাফি শুরু করেছিলেন যে, আম্পায়ার গুজরাত অধিনায়ককে ডেকে সতর্ক করে দেন। যে ঘটনায় স্পষ্ট, পৃথ্বী কতটা হতাশ করে তুলেছিলেন বিপক্ষ দলকে!
মুম্বইয়ের প্রথম ইনিংস যখন পৃথ্বী-সূর্যকুমার যাদবের তৃতীয় উইকেট জুটি আস্তে আস্তে জমাট করে তুলছে, ঠিক সেই সময় কেকেআর তারকা সূর্যের জোড়া ভুল গুজরাতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। প্রথমে পৃথ্বীকে সিঙ্গলসের জন্য ‘কল’ করেও ফিরিয়ে দিয়ে নন স্ট্রাইকারের রান আউট ডেকে আনেন সূর্য। যে সিঙ্গলস ছিল না, তাতে স্ট্রাইকারের ডাকে সাড়া দিয়ে মাঝপিচে দাঁড়িয়ে অসহায় আউট হন পৃথ্বী। এর কিছু ওভার পরে এ বার সূর্য (৫৭) বিশ্রী পুল মেরে নিজেও আউট হন। আরপি (২-৪৮), গাজা (২-৪৬)-রা আর বেশি সময় নেননি মুম্বইয়ের লেজ ছেঁটে ফেলতে।
জবাবে দিনের শেষে মাত্র এক ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে গুজরাত ২-০। কিন্তু শার্দুল ঠাকুরের প্রথম বলেই গোহেলের সোজা ক্যাচ প্রথম স্লিপে ফেলে বসেন পৃথ্বী। তাতেও মিলিন্দ রেগে দিনের নায়ক বাছছেন বাঙালি কিশোরকে। সঙ্গে নিজের রাজ্যের পেসারদের জন্য টিপস— এটা পেস-বাউন্সের থেকেও বেশি করে সুইংয়ের উইকেট। পিচের থেকে ঠান্ডা হাওয়ায় সুবিধে মিলবে বেশি। দেখার, ঠান্ডা ইনদওরে দ্বিতীয় দিনের খেলা কতটা গরম হয়ে ওঠে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy