Advertisement
১১ মে ২০২৪
Wrestlers' Protest

পদকগুলো আমাদের হাতে দাও! গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে যাওয়া কুস্তিগিরদের বিরত করলেন কৃষক নেতারা

গঙ্গায় পদক বিসর্জন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কুস্তিগিরেরা। কিন্তু কৃষক নেতাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলালেন তাঁরা। তবে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বজরং, সাক্ষীরা।

Wrestlers at Haridwar

হরিদ্বারে গঙ্গার ঘাট থেকে ফিরছেন বজরং, সাক্ষীরা। তাঁদের পিছনে কৃষক নেতারা। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ২১:৫৯
Share: Save:

দেশের হয়ে জেতা সমস্ত পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গিয়েও দিলেন না বিক্ষোভরত কুস্তিগিরেরা। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে হরিদ্বারে যান বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা। হর কি পৌড়ী ঘাটে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাক্ষী, বিনেশরা। সাক্ষীদের সঙ্গে ছিলেন পরিবারের লোকেরা। স্থানীয় অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কুস্তিগিরদের সমর্থনে স্লোগান দেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার কুস্তিগিরদের কাছে আবেদন করেন, তাঁরা যেন পদক বিসর্জন না দেন। ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতেও স্লোগান ওঠে সেখানে। তার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হন কৃষক নেতারা। তাঁরা গিয়ে বজরংদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন। কুস্তিগিরদের কাছ থেকে পদকগুলি চেয়ে নেন তাঁরা। কৃষকনেতারা বোঝান, দেশের হয়ে জেতা সম্মান এ ভাবে গঙ্গায় ফেলে দিলে সেটা দেশকে অপমান করা হবে। তাঁদের পরামর্শ মেনে নিয়েছেন বজরংরা। নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করেছেন কুস্তিগিরেরা। তবে তাঁরা কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন। তার মধ্যে তাঁদের দাবি না মানলে পাঁচ দিন পরে গঙ্গায় পদক বিসর্জন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিরেরা। ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে যন্তর মন্তরে ধর্না দিচ্ছেন তাঁরা। কেন্দ্র সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বজরংরা। এর পর তাঁরা ইন্ডিয়া গেটের সামনে আমরণ অনশনে বসবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যন্তর মন্তরে তাঁদের বসতে দেওয়া হবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছে দিল্লি পুলিশ। তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের বার বার অনুরোধ করার পরেও তাঁরা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। তাই তাঁদের যন্তর মন্তরে বসতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরে কুস্তিগিরেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ইন্ডিয়া গেটের সামনে অনশন করবেন তাঁরা। ব্রিজভূষণ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই অনশন চলবে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাক্ষীরা। কিন্তু সেখানেও তাঁদের বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

আগে কী হয়েছিল?

ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতে রবিবার মিছিল করে নতুন সংসদ ভবনের দিকে এগোচ্ছিলেন সাক্ষী, বিনেশরা। তাঁরা ‘মহিলাদের মহাপঞ্চায়েত’ করার কথা জানিয়েছিলেন। কুস্তিগিরদের কর্মসূচির অনুমোদন আগেই খারিজ করেছিল পুলিশ। তার পরেও কুস্তিগিরেরা নতুন সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে গোল বাধে। তাঁদের আটক করা হয়। দিল্লির বিশেষ পুলিশ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) দীপেন্দ্র পাঠক রবিবার বলেছিলেন, ‘‘আমরা ক্রীড়াবিদদের সম্মান করি। কিন্তু নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে কোনও বিশৃঙ্খলা হতে দিতে পারি না।’’

রবিবার বিনেশ, সাক্ষীদের টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। যা দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেন্দ্র সিংহ, নীরজ চোপড়া, সুনীল ছেত্রীদের মতো ক্রীড়াবিদেরা। প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। বিন্দ্রা টুইটে লেখেন, ‘‘অ্যাথলিট হিসেবে আমরা প্রত্যেক দিন কঠোর পরিশ্রম করি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার হয়রানির অভিযোগ তুলে আমাদের ক্রীড়াবিদরা পথে নেমে প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তা যে অনুভব করছেন, তা গভীর উদ্বেগের। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের জন্য আমার হৃদ‌য় আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত।’’

অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী বক্সার বিজেন্দ্র টুইট করেন, ‘‘আজ আমার সঙ্গে হচ্ছে, কাল তোমাদের সময় আসবে। সবার সময় আসবে।’’ জ্যাভলিনে অলিম্পিক্স সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এই ঘটনা দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আরও ভাল ভাবে এই ব্যাপারটা সামলানো যেত।” এর আগেও সমাজমাধ্যমে কুস্তিগিরদের ধর্নাকে সমর্থন করে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্স জ্যাভলিনে সোনা জয়ী অ্যাথলিট। ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল রবিবার টুইটারে লেখেন, “কোনও বিবেচনা ছাড়াই কেন কুস্তিগিরদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? এটা উপযুক্ত ব্যবহার নয়। আশা করি এই বিতর্কের সমাধান যে পথে হওয়া উচিত সে ভাবেই হবে।”

গত ২৩ এপ্রিল থেকে যন্তর মন্তরে ধর্না শুরু করেছিলেন কুস্তিগিরেরা। যত দিন গিয়েছে তত আন্দোলনের ধার বেড়েছে। কেন্দ্রের কাছে আবেদন করে কোনও জবাব না পেয়ে বিজেপির ৪৩ জন মহিলা সাংসদকে চিঠি লিখেছিলেন সাক্ষীরা। তার পরেও কোনও জবাব পাননি তাঁরা। এর মধ্যেই কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়ায় কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, আম আদমি পার্টির মতো রাজনৈতিক দল। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন কুস্তিগিরেরা। তাঁরা জানান, দিল্লি পুলিশ জোর করে যন্তর মন্তরের আলো নিভিয়ে দিয়েছে। তাঁদের খাবার, জল না দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। চাপে পড়ে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের হলেও আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত সংসদ ভবন অভিযানে যান সাক্ষীরা। তখনই আটক করা হয় তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wrestling Wrestler Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE