জাতীয় দলের সতীর্থ এসকে উথাপ্পাকে পাশে নিয়ে রঘুনাথ। শনিবার সাইয়ে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ভি আর রঘুনাথ। শুধু ভারতীয় হকিতে নয়, বিশ্ব মঞ্চেও অন্যতম সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকারের তকমা পেয়েছেন তিনি। কর্ণাটকের বছর আঠাশের সেই তারকার বাড়ির বাইরে এখন লম্বা লাইন!
জুনিয়র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের পাশাপাশি রঘুনাথের সিনিয়র টিমের সতীর্থ রূপিন্দর পাল সিংহও রয়েছেন সেই লাইনে। গোল পেতে ড্র্যাগ ফ্লিক শেখার জন্য। কারণ ড্র্যাগ ফ্লিকারের বড়ই অভাব এ দেশে।
জাতীয় হকি দলের বছর ছাব্বিশের তারকা রূপিন্দরের নতুন কোচ এখন দু’বছরের বড় রঘুনাথ। অনেকটা ফুটবলের সন্দীপ নন্দী আর দেবজিৎ মজুমদারের জীবনের সঙ্গে মিলে যায় যে ঘটনা। গোলকিপিং সংক্রান্ত নানা পরামর্শ নিতে এবং নিজের ভুল ঠিক করার জন্য অভিজ্ঞ সন্দীপের কাছে বারবার ছুটে যান ভারতের অন্যতম সেরা গোলকিপার দেবজিৎ। ঠিক তেমনই ড্র্যাগ ফ্লিক শিখতে রূপিন্দর দ্বারস্থ এখন সতীর্থ রঘুনাথের।
শুধু রূপিন্দর নন, সদ্য জুনিয়র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য গুরজিন্দর সিংহ, হরমনপ্রীত সিংহ, বরুণ কুমাররাও ইদানীং রঘুনাথের কাছে কোচিং নিচ্ছেন! যা বেশ মজার। আর ভারতীয় দলের সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকার এই আব্দারে অখুশি তো ননই, বরং খুশি। রঘু নিজেই চাইছেন তাঁর অবসরের পরও যেন জাতীয় দলে ড্র্যাগ ফ্লিকারের অভাব না হয়!
বেটন কাপ খেলতে রঘুনাথ এই মুহূর্তে কলকাতায়। শনিবার নিজের দল ইন্ডিয়ান অয়েলকে বেটনের সেমিফাইনালে তোলার পর রঘু বলছিলেন, ‘‘আমার পরে ভারতের অন্যরাও যাতে ড্র্যাগ ফ্লিকে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে সেটাই আমার লক্ষ্য। তাই আমি রূপিন্দর, গুরজিন্দর, হরমনপ্রীত, বরুণদের তা শেখানোর চেষ্টা করছি।’’
কেমন শিখছে আপনার ছাত্ররা? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন রঘু। বলে দিলেন, ‘‘ওরা তো বেশ ভালই করেছে। একটু সময় লাগছে। গুরজিন্দর তো ভাল ড্র্যাগ ফ্লিকার হয়ে উঠেছে। রূপিন্দরও ভাল করছে। বরুণ, হরমনপ্রীতরাও পিছিয়ে নেই।’’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করলেন, ‘‘অবসরের পর আমি নিশ্চয়ই সবাইকে হকির এই স্পেশ্যাল শটটা শেখানোর চেষ্টা করব। চাইব আমার পরেও ভারতীয় দলে ড্র্যাগ ফ্লিকার হিসেবে অনেক প্লেয়ার উঠে আসুক।’’
বাবা ভিএস রামচন্দ্র হকি প্লেয়ার ছিলেন। তাই ছোট থেকেই বাড়িতে হকির পরিবেশ পেয়েছিলেন রঘু। পাশাপাশি সঠিক পরামর্শদাতা হিসেবে রামচন্দ্র সব সময় তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। সে কারণেই বোধহয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকার হয়ে উঠতে পেরেছেন কর্ণাটকের এই তরুণ। বলছিলেন, ‘‘ড্র্যাগ ফ্লিক শেখার সঠিক বয়স ১৩-১৪। বড় হয়ে এই বিদ্যা রপ্ত করা বেশ কঠিন। আমিও তো ১৩ বছর বয়স থেকেই এটা শিখতে শুরু করেছি। এখনও দিনে প্রায় ১৫০-২০০ শট প্র্যাকটিস করি। না হলে সেরাটা দেওয়া সম্ভব হবে না।’’
কর্ণাটকের আর এক তারকা এস কে উথাপ্পাকে আবার ‘খেলার মাঠের সব্যসাচী’ বলেন তাঁর সতীর্থরা। কারণ হকি ছাড়াও একই সঙ্গে উথাপ্পা বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন এমন কী ফুটবলেও নজর কেড়েছিলেন একটা সময়ে। জাতীয় পর্যায়ে বাস্কেটবল খেলেছেন। সেই সঙ্গে ব্যাডমিন্টন এবং ফুটবলেও নিজের রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্কুল ও জুনিয়র বিভাগে। এ ভাবে একাধিক খেলায় কী ভাবে পারদর্শী হয়ে উঠলেন? এটা সম্ভব হল কী করে? লাজুক হেসে উথাপ্পার জবাব, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশুনার চেয়ে খেলাধুলা খুব পছন্দের বিষয় ছিল। যে গেম-ই হোক না কেন আমি মাঠে নেমে পড়তে দ্বিতীয়বার ভাবতাম না। আনন্দ করেই যে কোনও গেম খেলতাম। লোকজন এসে পিঠ চাপড়ে দিলে আরও ভাল লাগত।’’ কিন্তু এত খেলার মধ্যে হকিকেই কেন বেছে নিলেন? ‘‘দাদা খেলত। ওর দেখাদেখি আমিও সব ছেড়ে একটা সময়ের পর শুধুমাত্র হকিতেই মন দিলাম। বেঙ্গালুরুর সাইতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিলাম। তার পর জাতীয় দলের ডাক এসে গেল।’’
মাত্র ১৮ বছর বয়সে অলিম্পিক্স টিমে সুযোগ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন উথাপ্পা। ২২ বছর বয়সেই দু’ বার অলিম্পিক্সে অংশ নিয়ে ফেলেছেন। ভারতসেরা হকি প্লেয়ারও নির্বাচিত হয়েছেন ইতিমধ্যে। তবু একটা যন্ত্রণা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন উথাপ্পা। এ দিন তিনি বলছিলেন, ‘‘এ বার রিওতে আমরা সেরা পারফরম্যান্স করেছিলাম। তবু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হল। এটা এখনও মানতে পারি না। জানি আমাদের কাছে সবার অনেক প্রত্যাশা ছিল। টোকিও থেকে পরের বার পদক আনতে হবেই।’’
পরের অলিম্পিক্স নিয়ে উথাপ্পার মতো রঘুনাথও আশাবাদী। তিনি মনে করেন, ‘‘ভারতীয় হকি আবার একটা উচ্চতায় উঠেছে। সিনিয়র টিমের পাশাপাশি টিমও ভাল পারফরম্যান্স করছে।’’ তবে তিনি হতাশ কলকাতায় এসে। বেটন কাপের মতো ঐতিহ্যশালী টুর্নামেন্টের বেহাল দশা দেখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy