Advertisement
E-Paper

অরুণের মতো হতাশ বাংলার রঞ্জি ট্রফিজয়ী তারকারাও

সেই গনি হঠাৎ ব্যাট হাতে এত গম্ভীর চোখমুখে কেন?

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৬
ইডেনে হারের পরে বাংলার ক্রিকেটারেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইডেনে হারের পরে বাংলার ক্রিকেটারেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইডেনে পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ ব্যাট হাতে নামতে দেখা গেল আমির গনিকে! বাংলা তখন কেরলের হাতে চুরমার হয়ে গিয়েছে। দলের সাপোর্ট স্টাফের একজন থ্রো ডাউন দিচ্ছিলেন তাঁকে। বাংলার তরুণ অফ স্পিনারের প্রশংসা শোনা গিয়েছে প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানির মুখেও। সেই গনি হঠাৎ ব্যাট হাতে এত গম্ভীর চোখমুখে কেন?

বাংলা শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ব্যাটিংয়ে আরও ধার বাড়াতে বলা হয়েছে তাঁকে। দলের প্রধান ব্যাটসম্যানদের যা অবস্থা, তাতে গনির মতো ভাল টেলএন্ডারকে তৈরি রাখা ছাড়া উপায় নেই যে! চলতি রঞ্জি ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচে শেষ দিকে নেমে যে রান করেছেন গনি (৪৭ ও ২৯), তা প্রধান ব্যাটসম্যানদেরও অনেকের নেই। তাই হয়তো গনির ব্যাটের দিকে তাকাতে হবে বাংলাকে।

ব্যাটসম্যানদের এই পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় বাংলার মেন্টর অরুণ লাল। বৃহস্পতিবার যে ভাবে কুড়ি ওভারে মাত্র ৬৯ রানের মধ্যে আট উইকেট পড়ে গেল, তাতে এতটাই হতাশ অরুণ যে, দলের হারের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলেই ইডেন ছেড়ে চলে যান। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ফোনে বললেন, ‘‘মনোজ ফেরার পরে অন্যরা যে এ ভাবে একের পর এক উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসবে, তা ভাবতে পারিনি। তাও অনেক সহজ হয়ে ওঠা পিচে। খুব হতাশ হয়েছি। কিছু বলার ভাষা ছিল না। ড্রেসিংরুমে ছেলেদের শুধু বলি, যা হয়েছে ভুলে যাও। পরের ম্যাচের জন্য নিজেদের মানসিক ভাবে তৈরি করো। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনো। এ ছাড়া আর কী-ই বা বলব এই অবস্থায়?’’

দু-তিন জন ছাড়া বাংলার ব্যাটিংয়ে যাঁরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না, তাঁদের বারবার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার টোটকা দিয়েছেন অরুণ। মুম্বই থেকে মনোবিদ এসে তাঁদের শক্ত থাকার পাঠ দিয়েছেন বার দুয়েক। তা সত্ত্বেও চাঙ্গা করা যাচ্ছে না তাঁদের! স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাকে একটা সময়ে পাল্টে দেওয়া অরুণ লাল। কয়েক দিন আগে তিনি বলেছিলেন, পারফরম্যান্স ছাড়া কাউকেই রেয়াত করা হবে না। এমনকি, অধিনায়ককেও নয়। এ বার কি তা হলে দলের অনেককেই বসতে হবে? অরুণের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সে না হয় বসালাম। কিন্তু কাদের নেব?’’

সত্যিই এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই। সিনিয়র দলের সাপ্লাই লাইন বলা হয় যাকে, সেই অনূর্ধ্ব-২৩ বা অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে রঞ্জি খেলার মতো যোগ্য কেউ তৈরি আছেন কি না, বলা যাচ্ছে না। সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অগ্নিভ পান, কাজি জুনেইদ সইফিরা সেঞ্চুরি পেলেও তাঁদের প্রতি যথেষ্ট আস্থা দেখানো যাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কেরলের বিরুদ্ধে বাংলার ব্যাটসম্যানদের এই আত্মসমর্পণ দেখার পরে ১৯৯০-এ রঞ্জি ট্রফিজয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ব্যাটসম্যানরা যদি ড্রেসিংরুমেই আউট হয়ে যায়, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু চূড়ান্ত দল বাছাইয়ে এত গলদ কেন? এমন চার পেসার খেলেছে, যারা কেউ ব্যাট করতে পারে না। সেখানে বসিয়ে রাখা হল টেলএন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা আমির গনিকে!’’ প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক আরও বলছেন, ‘‘চার দিনের ম্যাচে এমন এক জনকে স্টাম্পের পিছনে দাঁড় করানো হল, যে ক্লাব দলেও নিয়মিত কিপিং করে না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনিয়মিত কিপার দিয়ে কাজ হয় না।’’

একমত উৎপল চট্টোপাধ্যায়ও। বাংলার কিংবদন্তি স্পিনারের কথায়, ‘‘দলে শ্রীবৎস গোস্বামী থাকতে বিবেক সিংহকে খেলানোর কোনও যুক্তিই থাকতে পারে না। তা ছাড়া সবুজ উইকেটে খেলার ক্ষমতাই নেই যে দলের, সেই দল কী করে সবুজ উইকেট চায়? প্রথম ইনিংসে দেড়শো রানে অলআউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তা শোধরানোর সুযোগ ছিল। সেটাও তো পারল না ওরা!’’ দলের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস ফেরানো নিয়ে উৎপলের বক্তব্য, ‘‘দলে ইতিবাচক মানসিকতা ফেরানোই এখন মনোজের প্রধান কাজ। কিন্তু অধিনায়ক-কোচই যেখানে নিজেদের জায়গা নিয়ে চাপে, সেখানে দলের অন্যদের আত্মবিশ্বাস কে ফেরাবে?’’ সম্বরণদের রঞ্জি জয়ের সেই ছবি উনত্রিশ বছরের পুরনো। ফের ভারতসেরা হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। এ বারেও ঘরের মাঠে সরাসরি ম্যাচ হেরে মাথার উপরে কালো মেঘ। পাশাপাশি, বাংলা থেকে কোনও ভাল মানের ক্রিকেটার উঠে না আসার ধারাবাহিক যন্ত্রণা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভি ভি এস লক্ষ্মণ, মুথাইয়া মুরলীধরনদের এনে লাভ কী হচ্ছে?

Ranji Trophy Bengal Kerala Arun Lal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy