Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রিয়ালের তোপ: চার গোল খাওয়ার ভয়ে আসেনি ওরা

মিনার্ভার মালিক রঞ্জিত বাজাজ ‘কাশ্মীরে খেলব না’ বললেও, শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে দল নিয়ে তিনি চলে আসতে পারেন ধরে নিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল ডেভিড রবার্টসনের দল। রিয়ালের কর্তারা কোচকে জানিয়েছিলেন, ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে।

 সমর্থন: দলের অনুশীলনে রিয়াল কাশ্মীরের ভক্তরা। সোমবার। টুইটার

সমর্থন: দলের অনুশীলনে রিয়াল কাশ্মীরের ভক্তরা। সোমবার। টুইটার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

কাশ্মীরে ম্যাচ খেলতে না চেয়ে মিনার্ভা পঞ্জাব আদালতে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ রিয়াল কাশ্মীরের কর্তারা পাল্টা তোপ দেগে দিলেন। দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মনজুর দার সোমবার বলে দিলেন, ‘‘বিশ্রী হারের লজ্জা থেকে বাঁচতেই নাটক করছে মিনার্ভা। শ্রীনগরে খেলতে নামলে ওরা চার-পাঁচ গোল খেতেই পারত। প্রচারের লোভে মিনার্ভা এবং রঞ্জিত বাজাজ অযথা পুরো বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন।’’

মিনার্ভার মালিক রঞ্জিত বাজাজ ‘কাশ্মীরে খেলব না’ বললেও, শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে দল নিয়ে তিনি চলে আসতে পারেন ধরে নিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল ডেভিড রবার্টসনের দল। রিয়ালের কর্তারা কোচকে জানিয়েছিলেন, ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে। সেই মতো সকালে দলের সভায় রনণীতি বুঝিয়ে দেন স্কটিশ কোচ। মাঠের বাইরেও নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন সহ সাংগঠনিক সব ব্যবস্থাই করে রাখা হয়েছিল। দুপুর বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কর্তারা বুঝতে পারেন আর ম্যাচ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। ‘‘ফেডারেশনের লোকেরা তিন দিন আগে এখানে এসেছেন। মিনার্ভার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। শ্রীনগরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। সমর্থকরাও খেলা দেখবেন বলে এসেছিলেন। খেলা না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক,’’ বলে দিয়েছেন দলের টিডি। তাঁর পাশে বসে রিয়ালের স্কটিশ কোচ ডেভিড রবার্টসন আবার বললেন, ‘‘ছেলেরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। অনেক দিন আমরা ম্যাচ খেলিনি। জেতার জন্য মরিয়া ছিলাম। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। যা হয়েছে সেটা মেনে নিয়ে পরের ম্যাচের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’’ তুষারপাতে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। ১৮ ফেব্রুয়ারির মিনার্ভা ম্যাচও হল না। এই অবস্থায় কি আপনাদের পরের ম্যাচে সমস্যা হবে? খেতাবের লড়াইয়ে থাকা রিয়াল কাশ্মীরর কোচ বলে দেন, ‘‘ভাল হতে পারে, আবার মন্দও। তবে আমি আমার ফুটবলারদের চিনি। ওদের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আশা করছি নিয়মানুযায়ী ফেডারেশন এই ম্যাচের তিন পয়েন্ট ও তিন গোলের সুবিধা দেবে আমাদের।’’

শ্রীনগরে ফোন করে জানা গেল, দলের কোচের মতো কোনও ফুটবলারই নিরাপত্তা নিয়ে তেমন ভাবিত নন। কোচ রবার্টসন ফোনে বলছিলেন, ‘‘কাশ্মীরে এসে আমার কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। ফুটবলকে এখানকার মানুষ খুব ভালবাসে। সে জন্যই আমার ছেলে মেসনকে অন্য দেশের ক্লাব থেকে এখানে নিয়ে এসেছি।’’ মিনার্ভার পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, বিদেশি ফুটবলারেরা কাশ্মীরে যেতে চাইছেন না। রিয়াল কাশ্মীরের নাইজিরিয়ান স্টপার ও অধিনায়ক লভডে এনওয়ানে যা শুনে হেসে ফেললেন। এ দিন মিনার্ভা ম্যাচ না হওয়ায় প্রায় দেড় ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ খেলেন রিয়াল কাশ্মীরের ফুটবলাররা। এরপর ফোনে ধরা হলে লভডে বললেন, ‘‘আমি তো বাজারে যাই, অনুশীলনে যাই। এখানে-ওখানে ঘোরাঘুরি করি। সবাই ডেকে কথা বলে। আমাদের এখানে কোনও সমস্যা নেই।’’

কাশ্মীরের এই দলে রয়েছেন চার বঙ্গ সন্তান। কল্যাণীর সুমন দত্ত, আসানসোলের ঋত্বিক দাশ, টালিগঞ্জের সৌম্য দাশ, বৈদ্যবাটির সন্দীপ পাল। সৌম্যর বাবা সাতের দশকের ময়দানের নামী গোলকিপার বিশ্বজিৎ দাশ। সৌম্য বলছিলেন, ‘‘বাড়ি থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বাবা-মা ফোন করেন প্রত্যেক দিন। আমি যখন বলি, এখানে কোনও সমস্যাই নেই, বিশ্বাস করতে চান না।’’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে গোলকিপার সন্দীপ বলছিলেন, ‘‘আমাদের তো প্রত্যেক দিন অনুশীলন হচ্ছে। কোনও সমস্যা নেই। গাড়ি, বাস, অটো করে সবাই যাচ্ছে। দোকান-বাজার খোলা। এত বড় একটা ঘটনা জানতে পারলাম সে দিন রাতে।’’

দলের ফুটবলার এবং সহকারী কোচ মোহনবাগানের প্রাক্তন সুমন দত্ত বলে দিলেন, ‘‘ফুটবলকে এখানকার লোক খুব ভালবাসে। তা ছাড়া রাতে এমনিতেই আমাদের হোটেল ছেড়ে বাইরে বেরোনোর নিয়ম নেই। কোচ ক্লাস নেন তখন। আগেও যা ছিল, এখনও তাই আছে।’’ আর কালিম্পংয়ের ছেলে নাদাং ভুটিয়ার মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীরের কোথায় কী হচ্ছে জানি না। এখানে তো সব ঠিক আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE