Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বেচারি জীবনে দুর্ভাগা ছিল, মৃত্যুতেও তাই থাকল

কেপটাউন থেকে ক্রাইস্টচার্চের দূরত্ব এগারো হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু চোখের জল কবে আর ভৌগোলিক দূরত্বের তোয়াক্কা করেছে! তিনি রিচার্ড হ্যাডলি দূর নিউজিল্যান্ডে বসে প্রিয় বন্ধুবিয়োগে মনস্তাপ করে যাচ্ছেন। ক্লাইভ রাইসের মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টা পরেও নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারের গলা টেলিফোনে ভারী শোনাচ্ছে। গৌতম ভট্টাচার্য-কে বন্ধুবিয়োগে দুঃখিত মন উজাড় করে বললেনও...কেপটাউন থেকে ক্রাইস্টচার্চের দূরত্ব এগারো হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু চোখের জল কবে আর ভৌগোলিক দূরত্বের তোয়াক্কা করেছে! তিনি রিচার্ড হ্যাডলি দূর নিউজিল্যান্ডে বসে প্রিয় বন্ধুবিয়োগে মনস্তাপ করে যাচ্ছেন। ক্লাইভ রাইসের মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টা পরেও নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারের গলা টেলিফোনে ভারী শোনাচ্ছে। গৌতম ভট্টাচার্য-কে বন্ধুবিয়োগে দুঃখিত মন উজাড় করে বললেনও...

দুই বন্ধু। দুই সতীর্থ। নটিংহ্যামশায়ার।

দুই বন্ধু। দুই সতীর্থ। নটিংহ্যামশায়ার।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৯
Share: Save:

পুরনো কথা। বহু পুরনো! কিন্তু এই শোকের আবহে সেগুলোই মনে পড়ছে আর মনে হচ্ছে এই তো সে দিন! এই তো সে দিন আমি নটিংহ্যামশায়ার জয়েন করলাম। ক্লাইভ রাইস নামে একজনের পরিবর্ত হিসেবে। কারণ সে প্যাকার ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছে আর তাই কাউন্টি ওকে তাড়াচ্ছে। আমাকে সই করানো হল সেই তাড়িয়ে দেওয়া প্লেয়ারের পরিবর্ত হিসেবে। সালটা ১৯৭৮। এর পর আবার প্যাকারের সঙ্গে মিটমাট হয়ে যেতে কাউন্টিও ক্লাইভকে ফিরিয়ে নিয়ে এল। আমি তো ছিলামই। দ্রুত আমরা হয়ে গেলাম দারুণ বন্ধু। ফেলে আসা সময়ের রেকর্ডগুলো যদি কেউ দেখেন, আমাদের বেশ কিছু টুর্নামেন্ট জেতানো পারফরম্যান্স খুঁজে পাবেন। আমরা ন্যাটওয়েস্ট জিতি ১৯৮৭-এ। তার আগেই অবশ্য ট্রেন্টব্রিজে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে এলে অন্য কাউন্টিগুলোর ব্যাটসম্যানদের বুক কাঁপত। তখন একটা কথা নট্‌স ড্রেসিংরুম থেকে কৌশলে ছড়ানো হত যে, আমাদের মাঠে আউটফিল্ড আর পিচকে আলাদা করা যায় না। দু’একটা কাউন্টি গোঁয়ার্তুমি করে আগে ব্যাটিং নিয়েছিল যে, তোদের ভয় পাওয়ার কী আছে রে! আমি আর ক্লাইভ সাধারণত এই টাইপগুলোকে ৮০-৯০-এ অল আউট করে দিতাম। ম্যাচ দু’দিনে শেষ। ক্লাইভের কেরিয়ারের মাঝামাঝি ওর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়। ঘাড়ের সিরিয়াস চোট। তাতে ওর বলের স্পিড কমে গেছিল। কিন্তু সেই স্পিড কমার আগে পর্যন্ত ক্লাইভকে খেলা যেত না। ব্যাটসম্যান হিসেবেও তুখোড়। একই সময় ইংল্যান্ডে ইয়ান বোথামের রমরমা। কিন্তু দুটো টাইপ আলাদা ছিল। বোথাম অনেকটা ফ্ল্যামবয়্যান্ট। ইনিংসগুলো তেমন ঝোড়ো খেলত। ক্লাইভ ছিল তুলনায় অনেক মজবুত। আস্তে আস্তে ইনিংস গড়ত। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের নিয়ে তখন গোটা চারেক টুর্নামেন্ট হয়েছিল। সিঙ্গল উইকেট টুর্নামেন্ট আমাদের পাঁচ জনকে নিয়ে। আমি, ইমরান, কপিল, বোথাম, সাইমন ও’ডনেল আর ক্লাইভ। এক ওভার করে বল, এক ওভার করে ব্যাট, এই টাইপের। এর একটা জিতেছিল ইমরান। বোধহয় হংকংয়েরটায়। বাকি সব ক’টা ক্লাইভ। যেহেতু দেশের হয়ে খেলতে পারত না, এই ধরনের আন্তর্জাতিক কোনও চ্যালেঞ্জ এলেই ও মুখিয়ে থাকত। সব সময়ই যেন একটা জবাব দেওয়ার জন্য চার্জড। ঘনিষ্ঠ ছিলাম বলে ওর ব্যথাটা বুঝতামও। প্রোক্টর, ব্যারি রিচার্ডস, গ্রেম পোলক এরা সবাই টেস্ট খেলে ফেলল। কিন্তু ক্লাইভ বেচারিকে টুয়েলফ্থ ম্যান হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

এর পরের বছর যখন ও টেস্ট খেলার আইডিয়াল জায়গায়, তখনই তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে নির্বাসিত করে দেওয়া হল। এ রকম একটা ক্রিকেটার যে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ২৬ হাজার রান করেছে। বোলিংয়ে মাত্র ২২ গড় রেখে হাজারের কাছাকাছি উইকেট নিয়েছে। সে-ই কি না টেস্ট ক্রিকেটই খেলতে পারল না! ভাগ্যের এর চেয়ে বড় অভিশাপ কী হতে পারে? ভারতীয় বন্ধু আপনি আমাকে বলছেন অ্যাপার্থাইড ওঠার পর ওয়ান ডে খেলে তো ক্লাইভ নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনি। আরে কী বলছেন! সেই সময় মানুষটার বয়স বিয়াল্লিশ। চোখে কম দেখছে। ঘাড়ের চোট। ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ওই তিনটে ওয়ান ডে-র রেকর্ড দিয়ে ক্লাইভ রাইসকে মাপতে যাবেন না। সেটা মূর্খামি ছাড়া কিছু হবে না। ক্যাপ্টেন হিসেবেও নট্‌স টিমটা কী ভাল যে ও চালাত! ক্যাপ্টেন হিসেবে খুব রাশভারী আর স্ট্রিক্ট ছিল যে, আমার সঙ্গে কেউ ভুলেও লাগতে এসো না। আমার অবশ্য ক্যাপ্টেন্সির গুণের চেয়েও বরাবর বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে ওর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মনটা। কে বিশ্বসেরা, এমন তর্ক উঠলেই যেন ক্লাইভ নিজেকে বাড়িয়ে নিত। আমার সঙ্গে ওর স্ত্রীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কখনও ফোনে, কখনও মেলে। মারা যাওয়ার দু’তিন মাস আগেও ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। বলছিল বেঙ্গালুরুতে ট্রিটমেন্ট করিয়ে ফিরেছি। খুব কনফিডেন্ট লাগছে নিজের। এর পর ওর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাবিইনি ক্লাইভকে যে এ ভাবে এত তাড়াতাড়ি হারাব। আজ মনে হচ্ছে, চিরদুর্ভাগা ছিল আমার বন্ধু। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারল না। আবার এত তাড়াতাড়ি ওর ডাক পড়ল ওপরে ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE