সালটা ১৯৯৬। সে বার বিশ্বকাপ হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কায়। এ বার যেমন প্রশ্ন উঠছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের দ্বিতীয় উইকেটকিপার কে? সে বারও বেঙ্গালুরুতে আমরা বিশ্বকাপের দল বাছতে গিয়ে এ রকম একটা প্রশ্নের সামনে পড়েছিলাম। তা হল, অতিরিক্ত একজন পেসার নিতে হলে সেটা কে? শেষ পর্যন্ত ওই জায়গায় বিশ্বকাপে খেলেছিল সলিল আঙ্কোলা।
নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিশ্বকাপে ১৫ জনের ভারতীয় দল গড়ার জন্য ঠিক ‘কম্বিনেশন’ কী? কোথায় খেলা হবে? কোন সময়ে? তখন সেখানকার উইকেটের চরিত্র কী রকম থাকবে? বিপক্ষ কারা?—এই প্রশ্নগুলোর নিরিখেই দল নির্বাচন হবে। নিজে উইকেটকিপার ছিলাম। তাই আমি নির্বাচক হলে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে নিতাম ঋষভ পন্থকেই। যার সঙ্গে ওর লড়াই বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য, সেই দীনেশ কার্তিককে নয়।
কেন? কার্তিকের গুণগ্রাহীরা বলবেন, শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে আগ্রাসী ভাবে ব্যাট করে ভারতকে জিতিয়েছে। কিন্তু আমার যুক্তি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীনেশ কার্তিকের উইকেটকিপিং মোটেও সন্তোষজনক নয়। কিপার কার্তিক ওর সফল হওয়ার বয়সটাকে পিছনে ফেলে এসেছে। তাই শরীরের নমনীয়তা কম। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে যান্ত্রিক ভাবে কিপিং করে যায়। রিফ্লেক্স আগের মতো নেই। তাই ওকে সাম্প্রতিক কালে কোনও দুরন্ত ক্যাচ নিতে দেখবেন না। যেখানে পাল্লা দিয়ে আইপিএলে পেসারদের বলে কিপিং করে চলেছে ঋষভ। ঝাঁপিয়ে কিছু ক্যাচও নিয়েছে।
তা হলে দীনেশ কার্তিকের চেয়ে বড় হয়েও ধোনি কী ভাবে কিপিং করছে? ধোনি যে কিপিংটা করে, তা হল ওর নিজের বুদ্ধিমত্তা ও অনুমানক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে। আইপিএল ১২০ বলের খেলা। সেখানে পাঁচটা ‘ওয়াইড বল’ হতে পারে। সব মিলিয়ে গোটা ১০-১৫ বল উইকেটকিপারকে ধরতে হয়। ফলে পরিশ্রম কম। দেখবেন, উইকেটের কাছে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দৌড়ে এসে বল ধরায় কিন্তু দীনেশ কার্তিক ও ধোনি অনেক মন্থর। সেখানে ঋষভ ওর বয়সের কারণেই অনেক দ্রুত।
আর ব্যাটিংয়ে নিদাহাস ট্রফির পরে দীনেশের সে রকম ইনিংস কোথায়? বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডে। সেখানে গত বছর টেস্টে শতরান করে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরেছে ঋষভ। ঝোড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ ঘোরানো বা ‘ফিনিশার’-এর দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে ধোনির পরেই সেরা বাজি ঋষভ।
বাকি ১৪ জনকে বাছা নিয়ে সে রকম কোনও সমস্যা নেই। তিন ওপেনার শিখর ধওয়ন, রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল। মিডল অর্ডারে বিরাট কোহালি, ধোনি। তিরাশিতে ইংল্যান্ডে আমরা যখন প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, তখন আমাদের দলে অলরাউন্ডার বেশি ছিল। এ বার বিরাটের দলেও হয়তো থাকবে, বিজয় শঙ্কর (ব্যাটিং অলরাউন্ডার), হার্দিক পাণ্ড্য (স্বাভাবিক অলরাউন্ডার) ও রবীন্দ্র জাডেজা (বোলিং অলরাউন্ডার)। এর মধ্যে জাডেজা শেষের দিকে নেমে দ্রুত রান তুলতে পারে। সঙ্গে দুরন্ত ফিল্ডিং। প্রয়োজনের সময় বিপক্ষের জুটি ভেঙে উইকেটও তুলবে। তিন পেসার ভুবনেশ্বর, বুমরা ও মহম্মদ শামি। আর স্পিনার হিসেবে কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালকে খেলাটা বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে এই বিশ্বকাপে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর পরেও একটা নাম থাকবে। সে হল নবদীপ সাইনি। ছেলেটা আইপিএলে ১৪৮-১৫০ কিমি গতিতে বল করছে। ইংল্যান্ডে বল নড়াচড়া করবে। তখন কিন্তু ও ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হয়ে যেতেই পারে। দলে ঢুকতে ওর লড়াই হবে জাডেজার সঙ্গে।
আমার বিশ্বকাপের দল: রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন, কে এল রাহুল, বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কেদার যাদব, বিজয় শঙ্কর, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা/নবদীপ সাইনি, ঋষভ পন্থ, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহাল।