টেস্ট অভিষেকেই নজর কেড়েছেন ঋষভ। ছবি: এএফপি।
অভিষেকেই দুরন্ত সফল ঋষভ পন্থ। বড় রান না পেলেও ব্যাট হাতে দ্বিতীয় বলেই মেরেছেন ছক্কা। সঙ্গে কিপিংয়ে প্রথম ইনিংসেই পাঁচ শিকার। শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁকে নিয়ে মাতামাতি। আর তাতেই জন্ম নিচ্ছে আশঙ্কা, টেস্টে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গা নিশ্চিত থাকবে তো!
ট্রেন্টব্রিজে ভারতের ২৯১তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছে কুড়ি বছর বয়সির। আর অভিষেকেই পাঁচ শিকার নেওয়া ভারতীয় উইকেটরক্ষকদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন তিনি। এতে আছেন নরেন তামানে (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৫৫ সালে), কিরন মোরে (ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালে) ও নমন ওঝা (শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে)। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে অ্যালেস্টেয়ার কুক, কিটন জেনিংস, অলি পোপ, ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদের ক্যাচ নিয়ে এই সারিতে বসে পড়লেন রাজধানীর তরুণ উইকেটকিপার।
তবে ঋষভ অভিষেকে এক ইনিংসে পাঁচ শিকার নিয়েছেন। টেস্ট অভিষেকে এক ইনিংসে পাঁচ শিকার এর আগে এশিয়ায় কোনও কিপারের ছিল না। ঋষভ সেদিক দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। বিশ্বের তৃতীয় কিপার তিনি যাঁর প্রথম ইনিংসেই রয়েছে পাঁচ শিকার। অস্ট্রেলিয়ার ব্রায়ান তাবের ১৯৬৬ সালে ও জন ম্যাকলিন ১৯৭৮ সালে টেস্টে অভিষেক ইনিংসেই পাঁচ শিকার পকেটে পুরেছিলেন। কোনও ভারতীয় উইকেটকিপারের এর আগে টেস্টে অভিষেক ইনিংসে তিনের বেশি শিকার নেই।
অধিনায়কের আস্থা দ্রুত অর্জন করেছেন ঋষভ। ছবি: পিটিআই।
প্রথম ভারতীয় হিসেবে ঋষভ আবার ছয় মেরে টেস্টে খাতা খুলেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এরিক ফ্রিম্যান, কার্লাইল বেস্ট, কিথ দাবেঙ্গওয়া, ডেল রিচার্ডস, শাইফুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, মার্ক ক্রেগ, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও সুনীল আমব্রিসের এই কৃতিত্ব রয়েছে। এই তালিকায় এলেন ঋষভ। এতে তাঁর আগ্রাসী মানসিকতার পরিচয় মিলছে।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য আগে থেকেই সুনাম রয়েছে ঋষভের। ওভারের ফরম্যাটে তাঁকে মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিতও করেছে ক্রিকেটমহল। কিন্তু টেস্টে কিপার ঋষভকে নিয়ে সংশয় ছিল বিশেষজ্ঞদের। ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে দুরন্ত অভিষেক সেজন্যই তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ, অস্ত্রোপচারের পর ঋদ্ধিমান যে কবে ফিরবেন, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: শুটিংয়ে তৃতীয় পদক, ট্র্যাপ ইভেন্টে রুপো লক্ষ্য শেরনের
আরও পড়ুন: যৌনপল্লীতে গিয়ে ধরা পড়ায় এশিয়ান গেমস থেকে ফেরত পাঠানো হল চারজনকে
বাংলার রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ঋদ্ধির আকাশে কালো মেঘ দেখছেন না। তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “সবে একটা ইনি়ংস হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ঋষভ কেমন ব্যাট করে, কেমন কিপিং করে, তা দেখতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে এক ওভারের বেশি ও কিপিং করেনি। সেটা করতে হবে। উইকেটকিপারকে যতটা কমনীয় দেখানোর কথা, ততটা ওকে দেখায়নি। আর ঋদ্ধি হল দেশের সেরা কিপার। ধোনি যখন খেলত, তখনও এটা বলেছি। তবে এটা বলতেই হবে যে ও এখনও পর্যন্ত দুর্দান্ত সফল। প্রথম টেস্ট হিসেবে দশে দশ। ক্যাচ আসা কপালের ব্যাপার। তবে দুটো ক্যাচ দারুণ নিয়েছে। একটা পোপের, যেটা বাঁ-দিকে গিয়ে নিয়েছে়। ও বাঁ-হাতি বলে সুবিধা হয়েছে। অ্যাডাম গিলক্রিস্টেরও যা হত। আর একটা হল ওকসের ক্যাচ। স্পটজাম্প ভাল হয়েছে, হাতটা ঠিকঠাক রেখেওছে। ইংল্যান্ডে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়। কারণ, স্টাম্প পেরিয়ে গিয়েও বাঁক নিতে পারে বল।”
ঋষভের উঠে আসাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত করছেন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক। সম্বরণের মতে, “ক্রিকেটে এটা হয়। চোটের জন্য যেমন সন্দীপ পাটিলের কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৪ সালে ইডেনে সকালে শরীর খারাপ হল। ওর জায়গায় এসে মহম্মদ আজহারউদ্দিন পরপর শতরান করায় দলে ফিরতে পারেনি পাটিল। এটা কারও সর্বনাশ, কারও পৌষ মাস। তবে ঋদ্ধির ঘাবড়ানোর কিছু নেই।”
আগামী দিনে কী হবে, তা সময়ই বলবে। কারণ, ঋষভ যত সফলই হন, ঋদ্ধিও ক্রিকেটমহলে ‘সুপারম্যান সাহা’ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন অনবদ্য কিপিং-দক্ষতাতেই। ভুললে চলবে না, দেশের সেরা কিপার তিনিই। ব্যাট হাতেও নির্ভরতা জুগিয়েছেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। তবে ঋষভ যে তাঁকে চাপে ফেললেন, এটাও অস্বীকারের জায়গা নেই।
আরও পড়ুন: ফেডেরারকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিলেন জোকোভিচ
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান না ভাঙলে কেমন হত সর্বকালের সেরা একাদশ
(আইসিসি বিশ্বকাপ হোক বা আইপিএল, টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট খেলার সব আপডেট আমাদের খেলা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy